‘সবার চোখের সামনে আমেরিকা এবং ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে’

আপডেট: মে ৯, ২০২৪, ১০:৪৬ অপরাহ্ণ

ইসরায়েলের আগ্রাসন ও মানবতাবাদ শিরোনামে রাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত। ছবি: সংগৃহীত

রাবি প্রতিবেদক:


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ. আল মামুন বলেছেন, ‘ইসরায়েলের ইহুদিরা ক্রমাগত ফিলিস্তিনিদের সাথে দুর্ব্যবহার করে, একটা রেসিস্ট আচরণ করে। যেটিকে আমরা রেসিজম বলতে পারি। সেই রেসিস্ট আচরণের এক পর্যায়ে যখন কোনো ফিলিস্তিনি প্রতিবাদ করে, তখন তাকে সাথে সাথেই খুন করা হচ্ছে। যখন একজন ফিলিস্তিনি বাড়ি থেকে বের হয়, তখন সে নিজেও জানে না, সে জীবিত অবস্থায় ফিরতে পারবে কি না। সে জানে না, খাবার পাবে কি না। এরকম অহরহ অমানবিক ও নির্মম পরিস্থিতি আমার ধারণা মতে গত একশ বছরেও ঘটেনি৷ সবার চোখের সামনে আমেরিকা ও ইসরাইল যে গণহত্যা চালাচ্ছে সেটির ভিত্তি কি, যুক্তি কি!’

বৃহস্পতিবার (৯ মে) সকাল ১১ টার দিকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার’র সামনে ইসরায়েলের আগ্রাসন ও মানবতাবাদ শিরোনামে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে আলোচকের বক্তব্য এসব কথা বলেন অধ্যাপক আ-আল মামুন।

অধ্যাপক আ. আল মামুন বলেন, ‘আমেরিকার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তা অন্তত দেড়শোর বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়েছে। ছাত্র এবং শিক্ষকরা প্রতিবাদ জানাচ্ছে, সংহতি প্রকাশ করছে। তাদের দাবিগুলো আমরা খেয়াল করি তাহলে লক্ষ্য করবও তাদের দাবিগুলো হলো- ইসরায়েলের চলমান অন্যায় আগ্রাসন থামাতে হবে, আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অস্ত্র কারখানাগুলো টাকা দেয় তা থামাতে হবে ও ইজরায়েলি পলিসি অর্থাত আমেরিকার অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে হবে।’

এই অধ্যাপক বলেন, বলা যেতে পারে গত ৭০-৮০ বছরে সবচেয়ে বড় আন্দোলন আমেরিকাতে ঘটছে। আমেরিকাতে ছাত্র-শিক্ষকদের টনক নড়েছে, সেখানে ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছে তারা। আমরা দেখেছি, আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কিভাবে সেনা আগ্রাসন চালানো হচ্ছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা পুলিশের কাছে হয়রানির শিকার হচ্ছে। যেসকল শিক্ষক শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে তাদের ‘এন্টি সেমিটিক’ বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে।

অধ্যাপক মামুন বলেছেন, সম্প্রতি আমেরিকান পার্লামেন্ট ১টি আইন পাস হয় যারা ইহুদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যেকোন কথা বললে সেই কথাটিকে ‘এন্টি সেমেটিক’ হিসেবে গণ্য করা হবে। এই ‘এন্টি সেমিটিকের’ ধারণা অনেক পুরোনও এবং এটির বিভিন্ন ট্রান্সফরমেশন আছে। ৬৮ সালের পর হতে যে অর্থ এসেছে, এ্যামেরিকার সমর্থনে ইজরায়েল যে কোন আগ্রাসন চালায় না কেন, সেটাকে সমালোচনা করলে সেটিকে ‘এন্টি সেমিটিক’ হিসেবে প্রচার করা হয়।’

তিনি বলেন, গত ৭ অক্টোবর হামাস নামে স্বাধীনতাকামি সংগঠন ইজরায়ের উপর সরাসরি একটি হামলা করে। যে হামলায় প্রায় ১২০০ ইজরায়েলি মারা যায়। এর পরিনতি হচ্ছে, পরদিন থেকে ধারাবাহিকভাবে গাজায় আক্রমণ শুরু হয়। এই আক্রমনে ফলে অনেক ফিলিস্তিনি মারা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে রক্তাক্ত যুদ্ধ যেখানে প্রায় ১০০ এর অধিক সাংবাদিক মারা গিয়েছে, যারা অধিকাংশই ফিলিস্তিনি।

তিনি আরও বলেন, অক্টোবরের পর থেকে প্রায় ৩৪ হাজার ফিলিস্তিনি মারা গিয়েছে এবং প্রায় ১ লক্ষ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। এই নিহতদের প্রায় অর্ধেক হচ্ছে নারী এবং শিশু। যে শিশুর জীবন ও যুদ্ধ সম্পর্কে নূন্যতম ধারণা নেই, তাদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। সেখানে খাবার নেই, ঔষধ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। বর্তমানে গাজা হচ্ছে একটি উন্মুক্ত করাগার। সেখানে যত ফিলিস্তিনিরা নিজ ভূমিতে পরবাসি হয়েছে ও যখন তারা সেখান থেকে বের হতে গছে, তখন তাদের বিভিন্ন চেক পয়েন্টে দাঁড়াতে হয়েছে এবং সেখানে প্রতিনিয়ত ইজরায়েলি সেক্যুলার সেটেলমেন্ট বেড়েই চলেছে।

এসময় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার রানা, ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক, স্টুডেন্টস রাইটস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী সজীব, রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সদস্য সচিব আমানুল্লাহ খানসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Exit mobile version