সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, গুলি ও হত্যার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় নাশকতার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে উন্নয়ন গবেষণাধর্মী যুব সংগঠন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস। প্রতিটি মৃত্যুই বেদনাদায়ক উল্লেখ করে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও গভীর শোক প্রকাশ এবং হতাহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছে সংগঠনটি।
চিকিৎসাধীন সকলের সুচিকিৎসা নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সরকার সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহবান জানান। আন্দোলনে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা ও নিহত ব্যক্তি ও প্রকৃত অপরাধীদের পরিচয় প্রকাশ, সেই সঙ্গে প্রাণহানির ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করার দাবি জানিয়েছে তারা।
এছাড়া সহিংস হামলা থেকে আন্দোলনকারীদের রক্ষা করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে সংগঠনটি।
ইয়্যাসের বিবৃতিতে বলেছে, মানুষের শান্তিপূর্ণভাবে সভা-সমাবেশ করার অধিকার আছে এবং সরকারকে সেই অধিকার রক্ষা করতে হবে। সংগঠনটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় ভাগের ৩৭ নং অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকার অংশে সমাবেশের স্বাধীনতা প্রদান করা হয়েছে।
রোববার (০৪ আগস্ট ২০২৪) সংগঠনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে ইমেইলে প্রেরিত ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাসের সভাপতি মো. শামীউল আলীম শাওন ও সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান আতিক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রচলিত কোটা পদ্ধতির পরিবর্তে মেধাভিত্তিক নিয়োগ ব্যবস্থার দাবিতে দেশব্যাপী সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে গত ১৫ জুলাই সোমবার বিকেল থেকে দফায় দফায় হামলা চালায় দূর্বত্তরা।
এতে হামলার শিকার হন সাধারণ শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকরা। এসময় নারী শিক্ষার্থীদের উপরও আমানবিক হামলা, নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হয়। এরপর দফায় দফায় দেশজুড়ে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপরও হামলা চালানো হয়।
বিবৃতিতে দেয়া তথ্য বলছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ১৬-২১ জুলাই পর্যন্ত সংঘর্ষ ও সংঘাতে দেশজুড়ে নিহত হয়েছেন ২১৩জন। তবে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ২৬৬ জন। ইউনিসেফের তথ্য বলছে সাম্প্রতিক সহিসংতায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩২ শিশুর।
সারা দেশে গণগ্রেফতারের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১১ হাজার। নিহত ১৭৫ জনের মৃত্যু নিয়ে গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, প্রাণঘাতী গুলিতে নিহত ১৩৭ জন, ছাররা গুলি ও রাবার বুলেটে নিহত ২২ জন, মারধর ও আঘতে নিহত ১০ জন, স্থাপনা ও যানবহনে আগুনে নিহত ৪ জন, ধাওয়া খেয়ে পানিতে ডুবে নিহত হয়েছেন ২ জন।
গত ২০ জুলাই শনিবার সহিংসতার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ সাইনবোর্ড এলাকায় যৌন ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার তিন নারী সাংবাদিক। এছাড়াও দেশজুড়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হচ্ছেন সাংবাদিকরা।
সংগঠনটি বিবৃতিতে বলেছে যে, দেশজুড়ে চলমান আন্দোলনে হতাহতের ঘটনা সত্যিই অত্যান্ত দুঃখজনক। এ ঘটনায় শিশু মৃত্যু এবং নারী শিক্ষার্থী ও সংবাদিকদের উপর হওয়া সহিংসতা অমানবিক ও গভীর উদ্বোগজনক। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এমন ঘটনা অপ্রত্যাশিত ও হতাশাজনক।
শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনে অনাকাঙ্ক্ষিত বলপ্রয়োগ ও গণগ্রেফতার আন্দোলনকে দিনে দিনে আরো সহিংস করে তুলছে। যা কখনোই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য কাম্য নয়। একই সঙ্গে আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় যে নজিরবিহীন নাশকতা চালানো হয়েছে, তা-ও নিন্দনীয়।
এই চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের যে অপচেষ্টা শুরু হয়েছে, তা বন্ধ করতে হবে। হামলা, দমন-পীড়ন ও হত্যা-নির্যাতন বন্ধ করে অবিলম্বে সহিংসতা নয়, দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জোর দাবি জানিয়েছে উন্নয়ন গবেষণাধর্মী যুব সংগঠন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস।