শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি
বুধবার (৯ অক্টোবর) থেকে শুরু হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। ইতোমধ্যে দুর্গাপূজার প্রায় সকল ধরনের প্রস্ততি সম্পন্ন হয়েছে। এখন অপেক্ষা শুধুই উৎসবের। এ বছর নাটোরের সিংড়া উপজেলার ১২ ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৮১টি মণ্ডপে একযোগে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
পূজাকে ঘিরে অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশ তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রতিটি পূজা মণ্ডপেই থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরা।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিমা তৈরির কাজ সম্পন্ন। কোনো কোনো মণ্ডপে সাজসজ্জা ও আলোকসজ্জার কাজ চলছে। ঐতিহ্যবাহী পোশাক আর গহনায় সাজানো হয়েছে প্রতিমা। উৎসবের আমেজ ছোট-বড় সবার মাঝে।
৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে পাঁচদিনব্যাপী শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গোৎসব। অনেকেই ব্যস্ত সময় পার করছেন কেনা কাটায়।
এদিকে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করেছেন শিল্পীরা। সিংড়া বাজার কেন্দ্রীয় মন্দিরে ১৩টি প্রতিমা তৈরির কাজ করেছেন জয়তন পাল ও মানিক পাল নামের দুজন প্রতিমা শিল্পী। এর মধ্যে গত ২০ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছেন জয়তন পাল।
জয়তন পাল জানান, গতবছরের চেয়ে এবার অর্ডার কম ছিল। মাটির কাজ শেষ করে এখন চলছে রংতুলির কাজ। আশা করছি যথাসময়ে প্রতিমার কাজ সম্পন্ন করতে পারব।
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি চাঁদ মোহন হালদার জানান, ৮১টি পূজামণ্ডপে প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অধিদপ্তর থেকে সরকারী অনুদান হিসেবে চাল পেয়েছি। এছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিটি মণ্ডপে ৩টি করে শাড়ী উপহার হিসেবে পেয়েছি। এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলার পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে।
উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক আ.ব.ম আমান উল্লাহ্ ও সেক্রেটারী অধ্যাপক এনতাজ আলী বলেন, দুর্গাপূজায় সার্বিক নিরাপত্তার কথা ভেবে পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে আমরা মতবিনিময় করেছি। প্রতিটি মণ্ডপে আমাদের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আমরা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সহযোগিতা করব।
উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনু বলেন, দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে আমরা মতবিনিময় ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছি। সুষ্ঠুভাবে পূজা সম্পন্ন করতে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তায় প্রশাসনের পাশাপাশি আমরা কমিটি গঠন করে মাঠে রয়েছি।
সিংড়া থানার ওসি মো. আসমাউল হক বলেন, আসন্ন দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিটা মণ্ডপে নজরদারি করবে পুলিশ সদস্যরা। কোনো রকম সাম্প্রদায়িক গুজব যেন না হয় সেজন্য সকলকে সচেতন থাকতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে প্রতিটি মণ্ডপে লাগানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হা-মীম তাবাসসুম প্রভা বলেন, সিংড়া উপজেলায় এ বছর ৮১টি মণ্ডপে দূর্গাপূজা উদযাপন হবে। পূজায় সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো। নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাঠে পুলিশের পাশাপাশি আনসার, গ্রাম পুলিশ থাকবে। এছাড়া সেনাবাহিনী ও র্যাব টহলে থাকবে। আশা করছি শান্তিপূর্ণভাবেই পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, সোমবার দুপুরে সিংড়া কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপ, মায়া দূর্গা মন্দিরসহ পৌরসভার কয়েকটি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ সাদি ও লেফটেনেন্ট কর্নেল মুক্তাদির রহমান। সিংড়া উপজেলায় নাটোর জেলার সর্বোচ্চ সংখ্যক পূজামণ্ডপ থাকায় সেনাবাহিনীর একটি স্পেশাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।