সিরাজগঞ্জে মৈত্রী ও ধূমকেতু এক্সপ্রেস মুখোমুখি II পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের শিডিউল বিপর্যয়, দুর্ভোগে যাত্রীরা

আপডেট: মে ৪, ২০২৪, ১১:৪০ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:


রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকা অভিমুখে আন্তঃনগর ট্রেন সিল্কসিটি এক্সপ্রেসের যাত্রার সময় ছিল সকাল ৭টা ৪০ মিনিট। সেই ট্রেন শনিবার (৪ মে) ছেড়ে গেছে দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে।নির্ধারিত সময়ের ৬ ঘণ্টা পর ট্রেনটি নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে যায়। তবে কেবল আন্তঃনগর ট্রেন সিল্কসিটি-এক্সপ্রেসই নয়, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রায় সবগুলো ট্রেনই ২ -৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বে চলাচল করছে। শুক্রবার (৩ মে) গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের পর ভেঙে পড়েছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের টাইম শিডিউল।

এদিকে, সিরাজগঞ্জে চালকের দক্ষতায় মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়িয়েছে বাংলাদেশ-ভারত চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেস ও আন্তনগর ধূমকেতু এক্সপ্রেস। এ ঘটনায় রেলমন্ত্রীর নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

শনিবার (৪ মে) দুপুরে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম স্টেশনে দুই ট্রেন একই লাইনে মুখোমুখি হয়। তবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে ট্রেন দুটি।
পাবনার ঈশ্বরদীতে অবস্থিত পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার শাহ সুফি নূর মোহাম্মদ সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ঘটনার পরপরই রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম খোঁজখবর নেন এবং দ্রুত

তদন্তের নির্দেশ দেন। পরে রেলভবন থেকে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান রেলওয়ে সদর দপ্তর পাকশী রেল বিভাগের সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ।
শাহ সুফি আরও জানান, এরই মধ্যে কমিটি কাজ শুরু করেছে। ভুল পয়েন্টের কারণে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
শুক্রবার দুর্ঘটনার পর খুব বড় একটা প্রভাব না পড়লেও শনিবার ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে।

তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে গিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় এমনিতে প্রায় এক মাস থেকে ধীর গতিতে চলছিল পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভিন্ন ট্রেন। এতে প্রতিটি ট্রেনই নির্ধারিত সময়ে ছাড়তে পারছিল না এবং পৌঁছাতেও পারছিল না। এর ওপর শুক্রবার গাজীপুরে ২ ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের পর উদ্ধারকাজ চলার কারণে আরও বিলম্বে চলাচল করছে পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেন।
তাই আজ আগের ঘোষণা ছাড়াই সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ৬ ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়ে। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হন ট্রেনের যাত্রীরা।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে স্ত্রীকে ট্রেনে তুলে দিতে আসা শফিকুল ইসলাম জানান, শনিবার সকালে যাত্রা শুরুর মাত্র কয়েক মিনিট আগেই তাদের জানানো হয় যে, ঢাকাগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি কিছুটা বিলম্বে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে যাবে। কিন্তু ৭টা ৪০ মিনিটের ট্রেন ৬ ঘণ্টা বিলম্বে দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে যায়। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ এমন বিলম্বিত ট্রেনের কারণে ভোগান্তিতে পড়েন তাদের মতো অনেক যাত্রী।

বিশেষ করে যারা জরুরি কাজে ঢাকা যাচ্ছেন তারা নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া রোগী ও শিশু ভ্রমণকারীরাও এ তীব্র গরমে কষ্ট শিকার করেই পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের রওনা হচ্ছেন বলেও জানান।

সাইফুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, অতি তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে রেললাইন বেঁকে যাচ্ছিল অনেক স্থানেই। তাই এতদিন এমনিতেই ২ থেকে ৩ ঘণ্টা করে বিলম্বে চলছিল এ রুটের সবগুলো ট্রেন। আর গাজীপুরে দুই ট্রেনের দুর্ঘটনার পর বিলম্বিত ট্রেনের পরিধি আরো বেড়েছে।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার আব্দুল করিম বলেন, ট্রেনের টাইম শিডিউল নিয়ে তারা এখন খুবই খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে আছেন। গাজীপুরের দুর্ঘটনার কারণেই মূলত শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে। শনিবার ৭টা ৪০ মিনিটের সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ১টা ৪০ মিনিটে ছেড়েছে। এছাড়া বনলতা এক্সপ্রেস পৌনে ২ ঘণ্টা বিলম্বে রাজশাহী থেকে ছেড়ে গেছে। আর পদ্মা এক্সপ্রেসও ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা বিলম্ব হতে পারে। এছাড়া আজ রাতের ঢাকামুখী আন্তঃনগর ট্রেন ধূমকেতু এক্সপ্রেসের কথা তো এখন কিছুই বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা। এ শিডিউল বিপর্যয় কাটতে রোববার (৫ মে) পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলেও জানান।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের-মহাব্যবস্থাপক (জি.এম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, গাজীপুরের দুর্ঘটনায় তাদের ট্রেন শিডিউল এলোমেলো হয়ে যায়। এখন ট্রেনগুলোর ডে-অফ না এলে এ শিডিউল বিপর্যয় কাটানো সম্ভব হচ্ছেনা। আর বঙ্গবন্ধু সেতুর কারণেও অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। যেখানে আগে তিনটা ট্রেন রাখতে পারতেন সেখানে এখন একটা রাখতে পারেন। আরেকটা লাইন দিয়ে একটা ট্রেন ছাড়তে হয়। তবে ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যেই এ সমস্যার সমাধান হবে। সংকট তৈরি হওয়ায় তিনি আজ আন্তঃনগর ট্রেন সিল্কসিটি এক্সপ্রেসের যাত্রা বাতিল করতে চেয়েছিলেন। এক হাজার টিকিটের মধ্যে ৪০০ থেকে ৫০০ রিফান্ড করে ফেলাও হয়েছিল। কিন্তু ঢাকা হতে ফিরতি টিকিট কেউ রিফান্ড করেন নি। আর সেজন্য ট্রেন শেষ পর্যন্ত বিলম্ব হলেও চালাতে হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মহাব্যবস্থাপক।

Exit mobile version