সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নাটোর অফিস
নাটোরে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় নির্মাণাধীন অবস্থায় ভেঙে পড়েছে ডিভাইডার-সোনার দেশ
সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে গ্রহণ করা আট কোটি টাকার প্রকল্পে নাটোরে সড়ক ডিভাইডার ও প্রশস্তকরণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম এবং নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। অত্যন্ত নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় নির্মাণের পরপরই ডিভাইডার ভেঙে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এ প্রকল্পে সংশ্লিষ্টরা হরিলুট করেছেন বলে দাবি ভুক্তভোগীদের। এর ফলে দুর্ঘটনা বাড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কাজ শেষ করতে পারে নি সংশ্লষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দাবি, যথাযথ নিয়ম মেনেই সকল কাজ সম্পন্ন হচ্ছে।
নাটোর সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সূত্র জানায়, পাবনা সার্কেলের আওতায় নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ এই তিন জেলার বিভিন্ন মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে মোট ২৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হয়। প্রকল্পে নাটোরের দুর্ঘটনাপ্রবণ বনপাড়া-হাটিকুমরুল, নাটোর-পাবনা এবং নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে গড়মাটি বাজার, বনপাড়া বাসস্টান্ড, আহম্মদপুর বাজার, হয়বতপুর বাজার, নাটোর পুলিশ লাইন, চাঁদপুর বাজার এবং গোরস্থান বাজার এই সাতটি স্থানে ব্লাকস্পট নির্মাণ করা হচ্ছে। নাটোর অংশে এই সাতটি ব্লাক স্পট নির্মাণ কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে আট কোটি টাকা।
নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে হওয়ার কারণে কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। অত্যন্ত নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ডিভাইডার তৈরি করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এতে নির্মাণের পরপরই ভেঙে যাচ্ছে। এই নিয়ে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয় এলাকাবাসীদের মধ্যে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বনপাড়া বাসস্টান্ডে সড়ক ও জনপদ অধিদফতরের প্রকৌশলী মোহাম্মাদ মাসুদের উপস্থিতিতে কাজ করছেন একদল শ্রমিক। এসময় গণমাধ্যমের উপস্থিতি পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় জনতারা। বেশ কয়েকজন বলেন, রাস্তার ডিভাইডার নির্মাণ কাজ খুবই নিম্নমানের। শুধুমাত্র রাস্তার ওপর পিলার দিয়েই ডিভাইডার দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া যে ব্লকগুলো ব্যবহার করা হয়েছে তা খুবই নি¤্নমানের। শুধু বালি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। নির্মাণের পরপরই অনেক স্থানে ভেঙে পড়ছে। আবার কতগুলো স্থানে ফেটে চৌচির হয়েছে। যে উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে তা বাস্তবায়নই হচ্ছে না।
বনপাড়া বাসস্টান্ডের ফল ব্যবসায়ী সোহেল হোসেন বলেন, দুর্ঘটনা রোধে বনপাড়া বাসস্ট্যান্ডে ডিভাইডার নির্মাণ করা হলেও তা অত্যন্ত নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে করা হচ্ছে। এর প্রমাণ হলো- নির্মাণ করার পরপরই অনেক স্থানে ভেঙে গেছে। আবার কিছু কিছু স্থানে ডিভাইডার ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিভাইডার নির্মাণ শ্রমিক বলেন, সরকারি কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপের কারণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা কাজের কদারকির মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ঘুষ নিয়ে যায়। যার কারণে কি মানের কাজ হচ্ছে, সেটা কেউ দেখে না। সরকারি কর্মকর্তারা আসলেও কিছুক্ষণ থেকে আবার চলে যায়।
নিম্নমানের কাজের কথা স্বীকার করে উপস্থিত প্রকৌশলী মোহাম্মাদ মাসুদ বলেন, কিছু কিছু স্থানে অনিয়ম এবং নিম্নমানের কাজ হতে পারে। যেসব স্থানে নিম্নমানের কাজ হয়েছে, সেসব স্থানে আমরা মেরামত করার জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বলেছি।
জানতে চাইলে মীর হাবিবুল আলম কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকার মীর হাবিবুল আলম বলেন, নিয়ম মেনেই সকল কাজ করা হচ্ছে। তবে বৃষ্টির কারণে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর গাড়ির ধাক্কায় কোথাও কোথাও ডিভাইডার ভেঙে গেছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
এ বিষয়ে নাটোর সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ করার আগেই আমরা তাদের প্রয়োজনীয় মালামাল রাজশাহী ল্যাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করি। সেখানে নি¤্নমানের সামগ্রী পাওয়া গেলে তা যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ডিভাইডার এবং প্রশস্তকরন কাজ নিয়ম মেনেই তৈরি করছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। তবে কোন ধরনের অনিয়ম এবং নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।