গুরুদাসপুরে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা আসামি গ্রেফতার II কারাগারের ‘বন্ধু’ বলে দিলেন খুনের কথা, ২ বছর পর লাশের ‘হদিশ’

আপডেট: মার্চ ২, ২০২৪, ৮:২০ অপরাহ্ণ


নাটোর প্রতিনিধি:নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার বেকারি শ্রমিক মো. মফিজুল ইসলামকে হত্যা ও গুমের প্রায় দুই বছর পর লাশের হদিশ মিলেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।
২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে উপজেলার চাঁচকৈড় খলিফাপাড়া এলাকার মো. আজাত মোল্লা ও মোছা. মাইনুর বেগম দম্পতির ছেলে মফিজুলকে (২৫) হত্যার পর লাশ গুম করা হয়।

চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা গুরুদাসপুর-সিংড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, কারাগার হতে মুক্তি পায়া এক আসামির কাছ থেকে তথ্য পায়ার পর নিহত মফিজুলের মা মাইনুর বেগম বাদী হয়ে ১টি হত্যা ও গুমের মামলা করেন। মামলায় ৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও দুজনকে আসামি করা হয়েছে। শনিবার (২ মার্চ) উপজেলার চাঁচকৈড় পুরানপাড়ার আবু তাহের খলিফা ওরফে তারা খলিফা (৫৫), তার মেয়ে তানজিলা আক্তার (২০) এবং তানজিলার মামা খামাড়নাচকৈড় এলাকার মো. আব্দুস সামাদের ছেলে মো. আশরাফুল ইসলামকে (৪৮) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এছাড়া কারাগারে বন্দি তানজিলার স্বামী সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার তালোম কাচারিপাড়া এলাকার মো. ওজারত আলীর ছেলে মো. আল হাবিব সরকারকে (২৫) একি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
র‌্যাব-৫ নাটোর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সন্জয় কুমার সরকার জানান, আশরাফুলকে শনিবার সকালে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার গোলচত্বর এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। দুপুরে বাড়ি থেকে তানজিলা ও তার বাবা তারা খলিফাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার তিনজনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব ও পুলিশ জানায়, মফিজুলের লাশটি হত্যার পর গুরুদাসপুরের পুরানপাড়া মাদ্রাসার সেপটিক ট্যাংকির পাশে মাটিচাপা দেওয়া হয়। সেটি শনিবারই তোলার কথা ছিল। কিন্তু সমস্যার কারণে আজ উত্তোলন করা যায়নি। রোববার সকালে তোলা হবে।

তানজিলা ও মফিজুল চাঁচকৈড় খলিফাপাড়ায় একটি বিস্কুট তৈরির কারখানায় কাজ করতেন। সেসময় তারা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়।
মামলার বরাতে র‌্যাব কর্মকর্তা সন্জয় কুমার সরকার বলেন, মফিজুলের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি একপর্যায়ে তানজিলার বাবা তারা খলিফা জানতে পারেন। তখন তিনি মোবাইল ফোনে মফিজুলকে খুনের হুমকিও দেন।
“এর জের ধরে ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী তানজিলাকে দিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মফিজুলকে ডেকে আনা হয়েছে। তানজিলাদের বাড়ি আসার পর আসামিরা মফিজুলকে আটকে ফেলে ও তার মুখ স্কচ টেপ দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়।

“তারপর মফিজুলকে মাটিতে ফেলে আসামিরা তার বুকে শাবল দিয়ে আঘাত করে। শাবলটি বুকে ঢুকে ঘটনাস্থলেই মারা যায় মফিজুল। পরে মরাদেহ ১টি প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে বাড়ির পাশের মাদ্রাসার সেফটি ট্যাংকির পাশে মাটিতে পুতে রাখে।”

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, এর মধ্যে তানজিলা ও আল হাবিব সরকারের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়। তাদের সংসারে অশান্তি শুরু হয়। একপর্যায়ে তানজিলা তার স্বামীর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা করেন।
“এই মামলায় ২০২৩ সালের নভেম্বরে পুলিশ আল হাবিব সরকারকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। কারাগারে গিয়ে আল হাবিবের সঙ্গে পরিচয় হয় খলিফাপাড়ার মো. জাকির মুন্সীর সঙ্গে এবং দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়।”

সন্জয় কুমার সরকার বলেন, “কারাগারে থাকা অবস্থাতেই আল হাবিব সরকার কথাচ্ছলে জাকির মুন্সীকে স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়টি জানান এবং সেই সূত্রে যে মফিজুলকে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়েছে সেটিও বলে দেন।”

গত সপ্তাহে জাকির মুন্সী জামিনে কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে মফিজুলের মায়ের কাছে খুনের বিষয়টি জানিয়ে দেন। পরে সেটি এলাকাবাসীও জানতে পারে। এরপরই মফিজুলের মা মাইনুর বেগম মামলা করেন।