৩২ বছরের শ্রেষ্ঠ শিশু সংগঠন, নাই বসার স্থানটুকুও!

আপডেট: মে ৭, ২০২৪, ১০:৩০ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:


১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি বরেন্দ্র শিশু থিয়েটারকে রাজশাহী জেলার শ্রেষ্ঠ শিশু সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ ৭ বছরের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের পর এ স্বীকৃতি মেলে। স্বীকৃতির পর পেরিয়ে গেছে আরও ২৫ বছর। দেশের এমপি, মন্ত্রীসহ অনেক গুণি ব্যক্তিকে সংগঠনটির ব্যানারে সম্মাননাও দেয়া হয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় বিভাগীয় শহর রাজশাহীর শ্রেষ্ঠ এ শিশু সংগঠনটি এখনো বসার স্থানটুকুও করতে পারে নি। পথে, ঘাটে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফাঁকা ক্লাস রুমসহ সংগঠনটির উদ্যোক্তার বাসাতেই চলে শিখন কার্যক্রম।

সংগঠনটির দেয়া তথ্যমতে, শিশু কিশোর সংগঠনটি মূলত একটি নাট্য সংগঠন। সংগঠনটির মাধ্যমে ছোটদের এবং বড়দের সর্বমোট ৬২টি নাটক (গীতি আলেখ্য ও শ্রুতি নাটকসহ) মঞ্চস্থ হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, রাজধানীর বিভিন্ন মঞ্চ, রাজশাহী, যশোর, ঈশ^রদী, দিনাজপুর, পঞ্চগড়সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সংগঠনটির শিল্পীরা কাজ করেছেন।

নাটকগুলো মোট ১৮৬ বারের অধিক মঞ্চস্থ হয়ে হাজার হাজার দর্শককে মুগ্ধ করেছে। ৩২ বছরে অভিনয় করেছে প্রায় দেড় হাজার শিশু-কিশোর ও যুবক। সংগঠনের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ছেলে-মেয়েদের মধ্যে কেউ কেউ বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। একজন নাট্যশিল্পী রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগে শিক্ষক হিসেবেও কর্মরত আছেন।

সুদীর্ঘ ৩২ বছর ধরে একটি জাতীয় পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ শিশু সংগঠন শিক্ষানগরী রাজশাহীতে নিরলসভাবে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও নাটকসহ সমাজসেবামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯৯৩ সালের ২৬ শে মার্চ এই অলাভজনক, অসাম্প্রদায়িক এবং অরাজনৈতিক শিশু সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

বরেন্দ্র শিশু থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী। তিনি বলেন, আমার শখের এই শিশু সংগঠনটির নেই কোনো চাঁদা, নেই চাঁদার রশিদ বই। নেই কোনো ডোনেশন, নেই ঘর, নেই বসার স্থান। আমি প্রাইভেট পড়ায়ে অর্থ সংগ্রহ করে সংগঠনটির কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছি দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে। চারটি স্মরণিকা প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে ২-৩ টি করে বিজ্ঞাপন পেয়েছি। এর বাইরে আর আয়ের তেমন কোন মাধ্যম নেই।

তিনি আরও বলেন, বরেন্দ্র শিশু থিয়েটারের মাধ্যমে দেশের গুণিজনকে এবং সংগঠনের গুণি শিল্পী ও কর্মীদের সম্মাননা প্রদান করেছি। ২০১৮ সালে তৎকালীন সংষ্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি, ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান পদ্মভূষণ, রামেন্দু মজুমদার, সঙ্গীতাচার্য অমরেশ রায় চৌধুরী, নৃত্য গুরু বজলুর রহমান, শাহীন আক্তার রেণী (বিশিষ্ট সমাজসেবী) ও রাজশাহীর গুণি শিল্পি মো. কামারুল্লাহ সরকারকে এ সংগঠনের পক্ষ থেকে সম্মাননা দেয়া হয়েছে।

২০১০ সালে সম্মাননা প্রদান করা হয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাসিক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, ভারত থেকে আগত ড. সুশীল ভট্টাচার্য (শিক্ষাবিদ) ও মলয়চন্দন মুখোপাধ্যায় (বিশিষ্ট নাট্যকার)।

দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী বলেন, ২০১৫ সাড়ম্বরে বরেন্দ্র শিশু থিয়েটারের ২৫ বর্ষপূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানেও দিনাজপুরের ১৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছিলো সংগঠনের পক্ষ থেকে। বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সশরীরে উপস্থিত থেকে এ সম্মাননা নিয়েছেন। গুণি ব্যক্তিদের সম্মান করতে পেরে বরেন্দ্র শিশু থিয়েটার ধন্য।

তিনি বলেন, বরেন্দ্র শিশু থিয়েটার ২০১৮ সালে থিয়েটারের রজত জয়ন্তী উপলক্ষে ২৫ বছরের প্রতীক হিসেবে ২৫টি শিশুতোষ নাটক মঞ্চস্থ হয় রাজশাহীস্থ পদ্মা মঞ্চে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ২৫টি, নাট্যদল ২৫টি শিশুতোষ নাটক মঞ্চস্থ করে এই নাট্যমঞ্চে। সকল নাটকের রচয়িতা ছিলাম আমি দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী।

ব্যানার্জী বলেন, প্রতিবছর রাষ্ট্রীয় দিবস আড়ম্বরের সাথে পালন করি। সংগঠনটি সমাজ সেবামূলক কার্যক্রম, বৃক্ষরোপণ, বন্যার্তদের সাহায্যদান, শীতার্তদের পুরাতন বস্ত্র বিতরণ, গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে প্রাইভেট পড়ানো প্রভৃতি সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালিত করে আসছে। আড়াই হাজারের উপরে বৃক্ষ রোপণ করেছি।

দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী বলেন, এ সময়ে এসে রাজশাহী নগর পিতার কাছে অনুরোধ রাখতে চাই, শিশু সংগঠনটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য একটি বসার জায়গা একান্তই জরুরি। একটি স্থায়ী বসার জায়গা পেলে সংগঠনটি একটি মর্যাদা পাবে।

উল্লেখ্য, দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী শুধু বরেন্দ্র শিশু থিয়েটারই পরিচালনা করেন না। তিনি দিনাজপুর এবং রাজশাহীতে সাতটি অলাভজনক সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান মাসিক পেনশনের অর্থে পরিচালনা করে থাকেন। এরমধ্যে দুটি গ্রন্থাগার এবং একটি শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। এই গবেষণা কেন্দ্রের মাধ্যমে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মবার্ষিকী পালনসহ বাংলাদেশ ও বিশে^র শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করছেন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Exit mobile version