৩৩ লাখ টাকা আয়কর বকেয়া রেখেই চেয়ারম্যান প্রার্থী বাতেন !

আপডেট: মে ২, ২০২৪, ১০:০২ অপরাহ্ণ

পাবনা প্রতিনিধি:


প্রায় ৩৩ লাখ টাকা আয়কর বকেয়া রেখেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার অভিযোগ উঠেছে আব্দুল বাতেনের বিরুদ্ধে।
আয়কর কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বিষয়টি লিখিতভাবে জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তাকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তার প্রার্থী হওয়ার বৈধতা নিয়ে চলছে সমালচনা।
আব্দুল বাতেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর ছোট ভাই ও সাবেক পৌর মেয়র। তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
প্রথম ধাপে ৮ মে পাবনার বেড়া, সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বেড়া উপজেলায় আবদুল বাতেনসহ চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী রয়েছেন ৯ জন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাহিদা অনুযায়ী গত ১৬ এপ্রিল আয়কর সার্কেল-১১ (কাশিনাথপুর) কার্যালয় থেকে উপ-কর কমিশনার সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেওয়া হয় সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে।
সেই চিঠিতে বেড়া উপজেলায় নির্বাচনে অংশ নেওয়া ১১ জন প্রার্থীর আয়কর সংক্রান্ত তথ্য দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল বাতেনের ৩২ লাখ ৮২ হাজার ৩২১ টাকা আয়কর বকেয়া রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে উপ-কর কমিশনার সাইফুর রহমান চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকেই প্রার্থীদের আয়কর সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছিল। আমরা প্রার্থীদের নামের আয়করের তথ্য তাদেরকে দিয়েছি। আব্দুল বাতেনের কর বকেয়া রয়েছে কয়েক বছর আগের। তাঁকে কর পরিষোধের জন্য চিঠিও দেয়া হয়েছে। তিনি এই করের টাকা কমাতে আপিল করেছেন।

কর বকেয়া থাকতে তিনি আয়কর সনদ পেলেন কিভাবে জানতে চাইলে সাইফুর রহমান বলেন, সনদের সঙ্গে সঠিকভাবে কর পরিশোধের কোন সংযোগ নেই। কেউ আয়কর রির্টান জমা দিলেই তিনি আয়কর সনদ পেতে পারেন। আব্দুল বাতেন সাহেবও রির্টান জমা দিয়ে সনদ পেয়েছেন। কিন্তু তাঁর সম্পদ ও আয় অনুযায়ি কর বকেয়া রয়েছে।
এদিকে বড় অংকের আয়কর বকেয়া রেখে তিনি কিভাবে বৈধ প্রার্থী হলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ বিষয়ে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা আব্দুল বাতেনের প্রতিদ্বন্দী চেয়ারম্যান প্রার্থী আফজাল হোসেন বলেন, যেখানে বাড়ির বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকলে প্রার্থীতা বাতিল হয়। সেখানে এত টাকা আয়কর বকেয়া রেখে কিভাবে তিনি বৈধ প্রার্থী হলেন এটি বুঝে উঠতে পারছিনা। বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা অবশ্যই তদন্ত করে দেখবেন।

আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী রেজাউল হক বাবু বলেন, প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ের দিন রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। তিনি এটি কর্ণপাত করেননি, এড়িয়ে গেছেন। আইনের বিষয়টি তিনিই ভালো জানেন। তবে এত টাকা আয় কর বকেয়া থাকার পরেও প্রার্থীর বৈধতা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে।

তবে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল বাতেন বলেন, ‘আমার কোন আয়কর বকেয়া নেই। যিনি চিঠি দিয়েছেন তাকে কিজ্ঞাসা করে দেখেন কোন বছরের বকেয়া আমার। ১৯৭৮ সাল থেকে আমি নিয়মিত আয়কর পরিষোধ করে আসছি। আমার প্রতি বছরের আয়কর সনদ রয়েছে। তবে কেউ আমার প্রার্থীতা বাতিলের জন্য ষড়যন্ত্র করে এমন অভিযোগ তুলতে পারে। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখার দাবি করছি।’
জেলা রির্টানিং কর্মকর্তা ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রার্থীর যোগ্যতা অযোগ্য বিধিতে আয়কর বিষয়ে সনদ দেবার কথা বলা হয়েছে। এখানে আয়কব বকেয়া নিয়ে কিছু বলা নেই। আব্দুল বাতেন মনোনয়ন পত্রের সঙ্গে তাঁর সর্বশেষ কর প্রদানের সনদ জমা দিয়েছেন। ফলে তাঁর প্রার্থীতা বাতিল হয়নি।’

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Exit mobile version