কেরু থেকে মদ তৈরির ১৩ হাজার লিটার স্পিরিট গায়েব

আপডেট: জুন ২৬, ২০২৪, ১:৩০ অপরাহ্ণ

কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড

সোনার দেশ ডেস্ক :


দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোম্পানি। এ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন মালামাল চুরি, গায়েবসহ নানা অনিয়মই যেন এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ নামমাত্র তদন্ত কমিটি করে দোষীদের সাময়িক শাস্তি দিলেও কিছুদিন পর তারা আবারও সেই একই কারবার করে বহাল তবিয়তে থাকেন।

এবার কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ডিস্টিলারি বিভাগে ১৩ হাজার ১৯০ দশমিক ৭৫ লিটার ডিএস স্পিরিট (মদ তৈরির কাঁচামাল) গায়েব হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই স্পিরিটের আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা। কেরু ডিস্টিলারিতে ডিএস স্পিরিট দিয়ে বিলেতি মদ ফরেনলিগারের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ উৎপাদন করা হয়।

এসব মালামাল গায়েবে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ডিস্টিলারি বিভাগে ব্র্যান্ডেড ওয়্যারহাউজের (ডিস্টিলারি ভান্ডার) সাবেক ইনচার্জ এ কে এম মাজেদুর রহমান ওরফে তুফানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তবে ঘটনাটি জানাজানি হলেও অজ্ঞাত কারণে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি।

দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি ডিস্টিলারি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ডিস্টিলারি বিভাগে ব্র্যান্ডেড ওয়্যারহাউজে কর্মরত সহকারী ইনচার্জ জাহাঙ্গীর হোসেন পদোন্নতি পেয়ে ইনচার্জ হন। এর আগে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি ডিস্টিলারি বিভাগে ব্র্যান্ডেড ওয়্যারহাউস ইনচার্জ ছিলেন এ কে এম মাজেদুর রহমান ওরফে তুফান।

ডিস্টিলারি বিভাগে ব্র্যান্ডেড ওয়্যারহাউজে বর্তমান ইনচার্জ হিসাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত জাহাঙ্গীর হোসেন লিখিত অভিযোগে বলেন, ‘আমাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার সময় ডিএস গোডাউন, ডিএস স্পিরিটের ৩ নম্বর ভ্যাট গোডাউনে সরেজমিনে গভীরতা ছিল ১০৯ ইঞ্চি।

যার বাস্তবিক মজুত রয়েছে ৩৫ হাজার ৫১২ দশমিক ২৩ লিটার। কিন্তু হস্তান্তর তালিকায় মজুত রয়েছে ৩৯ হাজার ৭১১ দশমিক ৫৫ লিটার। ৭ নম্বর ভ্যাট গোডাউনে সরজমিনে গভীরতা ৫৩ ইঞ্চি। যার বাস্তবিক মজুত রয়েছে ৪ হাজার ৮০৪ দশমিক ৩০ লিটার। কিন্তু হস্তান্তর তালিকায় মজুত রয়েছে ১৩ হাজার ৭৯৫ দশমিক ৭৩ লিটার।

এ ছাড়া ১০ নম্বর ভ্যাটে ৪ ইঞ্চি মালামাল কম আছে। ভ্যাট নম্বর ৩, ভ্যাট নম্বর ৭ ও ভ্যাট নম্বর ১০ বাস্তবিক মজুত অনুযায়ী ১৩ হাজার ১৯০ দশমিক ৭৫ লিটারের বেশি মালামাল কম থাকায় আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেনি। এ ব্যাপারে আমি গত ২ মে দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। বিষয়টি কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করেন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। এ নিয়ে কেরু ক্যাম্পাসে চলছে আলোচনা-সমালোচনা ঝড়।’

স্থানীয় শ্রমিকেরা বলছেন, ‘এ কে এম মাজেদুর রহমান ওরফে তুফানের ব্যাপারে অজ্ঞাত কারণে এ বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে কেরুর এক শ্রমিক নেতা তেলেসমাতি কারবার করে থামিয়ে দিয়েছে বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।’

এ ব্যাপারে সোমবার (২৪ জুন) দুপুরে দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি ডিস্টিলারি বিভাগের ব্র্যান্ডেড ওয়্যারহাউজের (ডিস্টিলারি ভান্ডার) সাবেক ইনচার্জ এ কে এম মাজেদুর রহমান ওরফে তুফানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘জাহাঙ্গীর হোসেন যখন দায়িত্ব নিতে আসেন তখন খাতাই ঠিক হয়নি। উনি দায়িত্ব না নিয়ে শ্রীমঙ্গলে বসে আছেন।

পরে আলমগীর এসে খাতা ঠিক করে দিয়েছে। মালামাল কোন শর্টফট নেই। আমি নিজে এখন ওয়্যারহাউজ চালাচ্ছি। জুনের পরে এসে হিসাব দেখে যাবেন, সব ঠিক আছে। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন। আর যেটা ওয়্যারহাউজে থাকে ২-১ শত লিটার এটা কোনও বিষয় না।’
এ ব্যাপারে জিএম (ডিস্টিলারি) রাজিবুল ইসলাম, কোনও বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, ‘ডিস্টিলারি বিভাগের ব্র্যান্ডেড ওয়্যারহাউজ (ডিস্টিলারি ভান্ডার) থেকে মালামাল গায়েব হয়েছে এমন তথ্য জানা যায়। পরে আমাকে জানানো হয় এসব ঠিক আছে। তবে আমি বিষয়টি অফিসে এসে খতিয়ে দেখবো।’

এ ব্যাপারে দর্শনা কেরু কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’
তথ্যসূত্র : বাংলাট্রিবিউন

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Exit mobile version