নাবিকদের সঙ্গে দিন দিন কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা

আপডেট: মার্চ ১৯, ২০২৪, ১:৩৭ অপরাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক:


জলদস্যুদের কবলে পড়া কবির গ্রুপের জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’র নাবিকদের সঙ্গে দিন দিন কঠোর হচ্ছে দস্যুরা। সব নাবিক সুস্থ থাকলেও তাদেরকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না জাহাজটির কম্পিউটার রুমে। শুধু তাই নয়, সেখানে মজুত পানিও দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। এ কারণে পানি ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছে দস্যুরা। পুরো দিনে মাত্র দুই-এক ঘণ্টা মজুত থাকা পানি ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে নাবিকদের।

বাকি সময়ে সাগর থেকে পানি নিয়ে ব্যবহার করতে হচ্ছে। সোমবার (১৮ মার্চ) রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানান চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বাসিন্দা বদরুল ইসলাম। তিনি এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে জিম্মি অয়েলার মোহাম্মদ শামসুদ্দিনের ভগ্নিপতি। বদরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার শ্যালক শামসুদ্দিনের সঙ্গে রবিবার কথা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টার দিকে তিনি মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করেছেন। তবে তিনি সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছে। আরও বলেছেন, নাবিকদের সে দেশের মোবাইল সিম দেওয়ার কথা বলে সবার কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে দস্যুরা। তবে তারা কোনও সিম নাবিকদের দেয়নি। এটা এক ধরনের প্রতারণা করেছে।

রাতে নাবিকরা নিজ নিজ কেবিনে ঘুমাতে গেলে সেখানে দুই-এক ঘণ্টা পর পর দস্যুরা দরজা ধাক্কাতে থাকে। এভাবে বিরক্ত করছে দস্যুরা।’ বদরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘ফোনে শামসুদ্দিন বলেছেন, দস্যুরা এখনও জাহাজ মালিকের কাছে কোনও দাবি-দাওয়া জানায়নি। তারা চাচ্ছে, মালিকপক্ষ তাদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ করুক। তাহলে মুক্তিপণের অর্থ বেশি করে নিতে পারবে। অপরদিকে জাহাজ মালিক চাচ্ছে, দস্যুরা তাদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ করে দাবি-দাওয়া বলুক।’

এদিকে, জাহাজটিতে থাকা ২৩ নাবিককে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্বজনরা। তাদের পরিবারে চলছে কান্নার রোল। স্বজনদের কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। একটি সূত্র জানিয়েছে, যে দস্যু গ্রুপ এমভি আবদুল্লাহকে প্রথমে জিম্মি করেছে তারা পরে দ্বিতীয় দস্যু গ্রুপের কাছে হস্তান্তর করেছে। এখন দ্বিতীয় গ্রুপটি মুক্তিপণ চাইবে নাকি তারা নতুন করে অন্য গ্রুপের কাছে দেবে তা বলা যাচ্ছে না। এদিকে, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের নাবিকদের চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে ওই জাহাজে থাকা ৫৫ হাজার টন কয়লা।

সম্প্রতি জাহাজটি চিফ অফিসার ক্যাপ্টেন আতিক উল্লাহ খান জাহাজটির মালিক পক্ষের কাছে পাঠানো এক অডিও বার্তায় বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে, আমাদের জাহাজে কিছু কোল্ড কার্গো আছে। প্রায় ৫৫ হাজার টন। এগুলো একটু ডেঞ্জারাসও (ঝুঁকিপূর্ণ)। ফায়ারেরও ঝুঁকি আছে। লাস্ট যখন অক্সিজেন মেপেছি তখন ৯-১০ শতাংশ লেভেল পেয়েছি। এটি নিয়মিত মনিটরিং করতে হয়। কোনও কারণে অক্সিজেন লেভেল বেড়ে গেলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। এটার একটু ব্যবস্থা করবেন, স্যার।’ কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মো. মিজানুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জিম্মি নাবিকদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তারা সুস্থ আছেন।

এখন পর্যন্ত দস্যুরা জাহাজ মালিকের কাছে কোন দাবি-দাওয়া জানায়নি। আমরা তাদের সঙ্গে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত সে রকম কোনও সোর্স আমরা পাইনি যার মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারবো। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। জাহাজসহ নাবিকদের অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে আনাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’ জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানটির অধীনে মোট ২৪টি জাহাজের মধ্যে সর্বশেষ যুক্ত করা জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ।

২০১৬ সালে তৈরি এই বাল্ক ক্যারিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। ড্রাফট ১১ মিটারের কিছু বেশি। গত বছর জাহাজটি এসআর শিপিং কিনে নেওয়ার আগে এটির নাম ছিল গোল্ডেন হক। মালিকানা পরিবর্তনের পর জাহাজের নামও পরিবর্তন করা হয়।

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে গত ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। এর মধ্যে ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরের জলদস্যুর কবলে পড়ে জাহাজটি। এরপর থেকে জাহাজটি দস্যুদের নিয়ন্ত্রণে আছে।- বাংলা ট্রিবিউন

Exit mobile version