পরীমনির সঙ্গে ‘প্রেমে’র দণ্ড, চাকরি হারাচ্ছেন সাকলায়েন

আপডেট: জুন ২৫, ২০২৪, ৩:৫৬ অপরাহ্ণ

 

সোনার দেশ ডেস্ক:


চিত্রনায়িকা পরীমনির সঙ্গে ‘অনৈতিক প্রেমের সম্পর্কে’ জড়ানোর কারণ দেখিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সুপারিশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।

বিষয়টিকে ‘অসদাচরণ’ বিবেচনা করে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী বিভাগীয় মামলায় ‘গুরুদণ্ড’ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে সাকলায়েনকে।
এ বিষয়ে মতামত চেয়ে সরকারি কর্মকমিশনকে (পিএসসি) গত ১৩ জুন চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রোকেয়া পারভীন জুঁই।

২০২১ সালের ৪ অগাস্ট পরীমনির বনানীর বাসায় অভিযান চালিয়ে এই চিত্রনায়িকা এবং তার সহযোগী আশরাফুল ইসলাম দীপুকে আটক করে নিয়ে যায় র‌্যাব। সেই রাতেই বনানীতে চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে রাজ এবং তার ব্যবস্থাপক সবুজ আলীকে র‌্যাব আটক করে।

পরদিন তাদের বনানী থানায় হস্তান্তর করে মাদক আইনে দুটি মামলা করা হয়। আর রাজের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় পর্নগ্রাফি আইনে আরেকটি মামলা।
সেসময় পরীমনির বাসায় অভিযান নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, ওই অভিযানের তিন দিন আগে তৎকালীন গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েনের সরকারি বাসায় ‘প্রায় ১৮ ঘণ্টা সময় কাটান’ পরীমনি।

কয়েকটি টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, ১ অগাস্ট সকালে পরীমনি নিজের গাড়ি নিয়ে ওই বাসায় যান এবং গভীর রাতে বেরিয়ে আসেন। গাড়ি থেকে নেমে তাদের দুজনের ওই বাসায় ঢোকা এবং মধ্যরাতে ভিন্ন পোশাকে নিচে নেমে আসার সিসিটিভি ভিডিও দেখানো হয় টেলিভিশনের সংবাদ প্রতিবেদনে।

এরপরই গোলাম সাকলায়েনকে ডিবি থেকে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) পশ্চিম বিভাগে বদলি করার কথা জানানো হয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশের তরফে।
বর্তমানে ঝিনাইদহ ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত গোলাম সাকলায়েনের বিষয়ে যে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তাতে বলা হয়েছে-ঢাকায় ডিবিতে কর্মকালে সাকলায়েনের সঙ্গে পরীমনির ‘ঘটনাক্রমে’ দেখা হয় এবং ‘যোগাযোগ’ আরম্ভ হয়।
“এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নায়িকা পরীমনির বাসায় নিয়মিত রাত্রিযাপন করতে শুরু করেন।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ অধিদপ্তরের এলআইসি শাখা সাকলায়েনের ফোনের সিডিআর বিশ্লেষণ করে দেখতে পেয়েছে, ২০২১ সালের ৪ জুলাই থেকে ৪ অগাস্ট পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন সময়ে নায়িকা পরীমনির বাসায় অবস্থান করেছেন।

নায়িকা পরীমনির মোবাইলের ফরেনসিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পুলিশ দেখেছে, সাকলায়েন ও পরীমনির মধ্যে ফোনে (মেসেজ, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ) যেসব কথোপকথন হয়েছে, তা “সাধারণ পরিচিতি বা পেশাগত প্রয়োজনে স্থাপিত কোনো সম্পর্কের নয়, বরং অনৈতিক প্রেমের সম্পর্ক।”

প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১ অগাস্ট গোলাম সাকলায়েনের রাজারবাগের সরকারি বাসায় যান পরীমনি, তখন ওই পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী সেখানে ছিলেন না। প্রায় ১৭ ঘণ্টা অবস্থান করে ২ অগাস্ট রাত দেড়টায় ওই বাসা ত্যাগ করেন এই চিত্রনায়িকা। এ বিষয়ে চিত্রনায়িকা পরীমনির বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি। ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েনের বক্তব্য জানতে মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি তা কেটে দেন।

বিচার বিভাগীয় মামলার সুপারিশে বলা হয়, বিবাহিত ও এক সন্তানের জনক সাকলায়েন “সরকারি দায়িত্বের বাইরে নায়িকা পরীমনির সঙ্গে অতিমাত্রায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন।”

প্রতিবেদন বলা হয়, অভিযোগের বিষয়ে সাকলায়েনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হওয়ার পর ‘অসদাচরণের’ প্রমাণ পাওয়ার কথা জানায় তদন্ত কমিটি। এরপর চাকরি থেকে কেন তাকে বরখাস্ত করা হবে না তার কারণ দর্শাতে বলা হয়।

জবাবে সাকলায়েন ‘চাকরি হতে বরখাস্তকরণ’ মামলার দায় থেকে অব্যাহতি প্রার্থনা করেন। তবে এই বক্তব্য সন্তোষজনক না হওয়ায় তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয় বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

জানতে চাইলে পিএসসির সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ বিষয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।“- বিডিনিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Exit mobile version