সাবেক গভর্নর ডা. এ এম মালিকসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা আটক

আপডেট: ডিসেম্বর ২৪, ২০২৩, ১২:০৪ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:


২৪ ডিসেম্বর ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ২৪ ডিসেম্বর গুরুত্বপূর্ণ ও ঘটনাবহুল একটি দিন। এদিন পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর ডা. এ এম মালিক, মন্ত্রিসভার ৮ সদস্য, আমলা ও পুলিশের নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তাসহ মোট ৩০ জনকে আটক করে বাংলাদেশ পুলিশ।

আটকরা হলেন-গভর্নর ডা. এ এম মালিক, মন্ত্রী আবুল কাসেম, মন্ত্রী নওয়াজেশ আহমদ, মন্ত্রী আব্বাস আলী খান, মন্ত্রী আখতার উদ্দীন আহমদ, মন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক, মন্ত্রী জসিমুদ্দিন, মন্ত্রী এ কে এম ইউসুফ, মন্ত্রী সোলায়মান, চিফ সেক্রেটারি মোজাফফর হোসেন, স্বরাষ্ট্র সচিব এম এম কাজিম, কমিশনার এস এ রেজা, আইজিপি এম এ কে চৌধুরী, এআইজিপি এম এ আর আরিফ, ডিআইজি এম এম হাসান, বিডিএলজি সেক্রেটারি মোজাফফর আহমদ, শিক্ষা সেক্রেটারি মুফতি মাসুদুর রহমান, তথ্য সেক্রেটারি হুমায়ুন ফয়েজ রওশন, পরিকল্পনা বোর্ড সদস্য হাসান জহির, জয়েন্ট সেক্রেটারি তথ্য আসলাম ইকবাল, স্বরাষ্ট্র ক্যাপ্টেন খালেদ আহমদ, এসএনজিএ ক্যাপ্টেন আফতাব উদ্দীন আহমদ, মহিবুল্লাহ শাহ, লে. কমান্ডার এ. এ নাসিম, মো. আশরাফ, এস.কে মাহমুদ, আব্বাস খান, এ. এরফান মান্নী, সালমান খালেক ও পাঞ্জাব কন্টিনজেন্ট রানা মুশতাক।

২৪ ডিসেম্বর পুলিশ সদর দপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলে, ‘২৫ মার্চ পরবর্তী সময়ে দখলদার পাক বাহিনীর বর্বরতার দোসর শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
গ্রেপ্তারদের কয়েকজন হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, পুলিশের ডিআইজি এস এম নওয়াব, ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম আহমদ চৌধুরী, সাবেক পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি মেজর আফসার উদ্দিন, মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরী, ফজলুল হক এমএনএ, রাজাকারের ডিপুটি ডিরেক্টর জহুরুল হক, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডা. এ এম বাসেত, আলবদর নেতা এবিএম আব্দুল খালেক মজুমদার, মিরপুর মুজাহিদ পার্টির কমান্ডার মোক্তার, আলবদর সদস্য আশরাফ আলী, কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির সদস্য হাকিম ইনতাজুর রহমান আখুনজাদা, ফরিদাবাদ মাদ্রাসার মাওলানা বজলুর রহমান।

২৪ ডিসেম্বর ৫৪ জন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী এক যুক্ত বিবৃতিতে ঢাকা শহরে নৃশংস গণহত্যা এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচার চেয়ে পূর্ণ তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।

তারা বলেন, ‘যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও নৃশংস বর্বরতার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদেরকে কোনোমতেই জেনেভা কনভেনশনের ছত্রছায়ায় থাকতে দেওয়া যেতে পারে না ‘

যুক্ত বিবৃতিতে সই করেন কবি জয়নুল আবেদীন, সুফিয়া কামাল, সৈয়দ আলী আহসান, কামরুল হাসান, সমর দাস, এ.বি.এম. মুসা, কামাল লোহানী, ফয়েজ আহমদসহ অন্য বুদ্ধিজীবীরা। একইসঙ্গে তারা বিচারের জন্য একটি আন্তর্জাতিক কমিশন গঠনের আবেদন জানান।

২৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার ব্যাংকগুলোকে কয়েকটি নির্দেশনা দেয়। এর মধ্যে একটি হলো-১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানে পাঠানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যাংক যেসব ব্যাংক ড্রাফট, মেইল ট্রান্সফার, টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফার ইস্যু করেছিল, সেসব টাকা পাঠানো বাতিল করতে হবে।

২৪ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি ছাড়া স্বাধীনতা সম্পূর্ণ হবে না। নেতাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাত থেকে মুক্ত না করা পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।’

২৪ ডিসেম্বর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ৮৯ হাজার পাকিস্তানি সেনা মিত্র-বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।’
২৪ ডিসেম্বর লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং বলেছেন, ‘ভুট্টো যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি আস্থা পোষণ করেন, তবে অবিলম্বে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেয়া উচিত।’

২৪ ডিসেম্বর বিবিসির এক খবরে জানা যায়, ‘পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টো বাংলাদেশে সামরিক বিপর্যয় ও পশ্চিম পাকিস্তান-ভারত সীমান্ত বরাবর যুদ্ধ-বিরতি বিষয়ে তদন্তের জন্য বিচারপতি হামুদুর রহমানের (বাঙালি এই বিচারপতি ১৯৬২ সালের শিক্ষানীতি কমিশন প্রধান ছিলেন, যে নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষা আন্দোলন গড়ে উঠেছিল) নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করেছে।

২৪ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তার এক প্রভাবশালী দৈনিকের সম্পাদকসহ হাজারো মানুষ একটি মিছিল বের করে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে সমাবেশ করে নিজেদের সরকারের কাছে তারা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানায়।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Exit mobile version