লড়াই এখন মধ্য আর কট্টরপন্থির, কাকে বেছে নেবে ইরানের জনগণ?

আপডেট: জুন ২৯, ২০২৪, ১:৪৫ অপরাহ্ণ


সোনার দেশ ডেস্ক :


জনগণের ক্রমবর্ধমান হতাশা আর পশ্চিমা চাপের মধ্যে অনুষ্ঠিত ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চার জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ভোট গণনায় লড়াইটা এসেছে ঠেকেছে দুই প্রার্থীর মধ্যে। এর মধ্যে আবার অল্প ব্যবধানে এগিয়ে আছেন একমাত্র মধ্যপন্থী প্রার্থী।

শনিবার দুপুর পর্যন্ত এক কোটি ৪০ লাখ ভোট গণনা হয়েছে । এর মধ্যে মধ্যপন্থি প্রার্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান পেয়েছেন ৫৯ লাখ ভোট। আর তার নিটকতম প্রতিদ্বন্দ্বি সাইদ জালিলি পেয়েছেন ৫৫ লাখ ভোট।

ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মোহসেন ইসলামি শনিবার সকালে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এ তথ্য প্রকাশ করেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
সম্প্রতি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্টি ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর কারণে দেশটিতে আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আয়োজন করা হয়।

ইরান সমর্থিত ফিলিস্তিনি দুই সশস্ত্র সংগঠন হামাস ও হেজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধ এবং ইরানের দ্রুত অগ্রসরমান পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমাদের চাপের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নিতে যাচ্ছেন দেশটির ভোটাররা।

যদিও এই নির্বাচন দেশটির নীতিতে কোনো বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে না বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ১৯৮৯ সাল থেকে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার পদে থাকা ৮৫ বছর বয়সী আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উত্তরাধিকার নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে ভোটের ফলাফল ।
চাপে থাকা অর্থনীতি, আর খর্ব হওয়া রাজনৈতিক ও সামাজিক স্বাধীনতা নিয়ে জনঅসন্তোষ সত্ত্বেও ইরানের কট্টরপন্থি প্রশাসন বিপুল ভোট পড়বে বলে দাবি করলেও আদতে তা হয়নি।

তবে যিনিই প্রেসিডেন্ট হোন না কেন, তিনি পারমাণবিক কর্মসূচি কিংবা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বিভিন্ন মিলিশিয়া গ্রুপগুলোকে সহায়তা দেওয়ার নীতি রাতারাতি বদলে ফেলবেন, তেমনটা আশা করা যায় না। কারণ খামেনি আগেই বলে দিয়েছেন, সবগুলোই রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ বিষয়।

তারপরও ইরানের পররাষ্ট্র ও আঞ্চলিক নীতিতে অনেকটাই প্রভাব বিস্তার করতে পারেন দেশটির প্রেসিডেন্ট।
গত ১৯ মে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে মারা যাওয়ায় ওই শূন্য পদে আগাম নির্বাচন হয়। সংবিধান অনুযায়ী, ৫০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন দিতে হয়।

নির্বাচনে ছয়জন প্রার্থী হওয়ার অনুমতি পেয়েছিলেন। পরে দুজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। নির্বাচনী দৌড়ে থাকা চার প্রার্থী হলেন- রক্ষণশীল মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফ, মধ্যপন্থি মাসুদ পেজেশকিয়ান, কট্টরপন্থি সাইদ জালিলি এবং রক্ষণশীল মোস্তফা পুরমোহাম্মদি।

প্রেসিডেন্ট হতে ভোটের লড়াইয়ে থাকা চার প্রার্থীর মধ্যে তিনজনই কট্টরপন্থি হিসেবে পরিচিত, আর একজন কম পিরিচিত মধ্যপন্থি, যিনি সাম্প্রতিক সময়ে কোণঠাসা হয়ে পড়া সংস্কারপন্থিদের সমর্থন পাচ্ছেন।

মধ্যপন্থি প্রার্থী পেজেশকিয়ানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, ছোট ছোট শহর ও গ্রামগুলোতে এ পর্যন্ত ভোটগণনার যে চিত্র, তাতে প্রতিদ্বন্দ্বির চেয়ে এগিয়ে আছেন পেজেশকিয়ান।

প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত মুখ হচ্ছেন পার্লামেন্টের স্পিকার ও ইরানের শক্তিশালী রেভুল্যুশনারি গার্ডের সাবেক কমান্ডার রক্ষণশীল মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফ এবং খামেনির সঙ্গে চার বছর কাজ করে আসা সাইদ জালিলি।

ইরানের কট্টর ধর্মীয় নীতির সমালোচকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি নির্বাচনে ভোটারদের কম উপস্থিতিই প্রমাণ করে, দেশটির শাসনব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গেছে।
২০২১ সালের ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৪৮ শতাংশ এবং মার্চে পার্লামেন্ট নির্বাচনে ৪১ শতাংশ ভোট পড়েছিল।

অসমর্থিত একটি সূত্রের বরাতে ইরানি বার্তা সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, শুক্রবারের নির্বাচনে পড়া ভোট গণনায় এ পর্যন্ত যে চিত্র পাওয়া গেছে, তাতে সম্ভবত দ্বিতীয় দফা ভোটের পথে হাঁটতে হবে, যেখানে লড়াইটা হবে জালিলি আর পেজেশকিয়ানের মধ্যে।

নিয়ামানুযায়ী কোনো প্রার্থী যদি প্রথম দফার নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পান তাহলে ফলাফল ঘোষণার পর প্রথম শুক্রবার এগিয়ে থাকা দুই প্রার্থীর মধ্যে থেকে একজনকে বেছে অনুষ্ঠিত হবে চূড়ান্ত ভোটাভুটি।

মধ্যপন্থি পেজেশকিয়ান ইরানের ধর্মতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রতি বিশ্বস্ত হলেও পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা, অর্থনৈতিক সংস্কার, সামাজিক উদারীকরণ এবং বহুদলীয় রাজনীতির পক্ষে।

শুক্রবার ভোট দেওয়ার পরও তিনি বলেছেন, “আমরা হিজাব আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল কিন্তু নারীদের কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ কিংবা অমানবিক আচরণ করা উচিত নয়।”
এ সময় তিনি কুর্দি তরুণী মাশা আমিনির মৃত্যুর প্রসঙ্গ টানেন।

ইসলামি পোশাক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ইরানের নীতি পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন মাশা আমিনি। ২০২২ সালে পুলিশি হেফাজতেই তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে ইরানি জনগণ। সে সময় প্রথমবারের মতো ব্যাপক জনরোষ দেখতে পায় দেশটির ধর্মীয় শাসকগোষ্ঠী।
ভোটে পেজেশকিয়ানের জেতার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হওয়ায় চার বছর ধরে ভোট বর্জন করে আসা সংস্কারপন্থিরাও উৎসাহী হয়ে উঠতে শুরু করেছেন। সংস্কারপন্থিদের অধিকাংশই তরুণ ভোটার।

৪৫ বছর বয়সী স্থপতি পিরোজ বলেন, “আমি মনে করি পেজেশকিয়ান ঐতিহ্যগত এবং উদার উভয় চিন্তাধারার প্রতিনিধিত্ব করেন।”
ভোট বর্জনের পক্ষে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এক্সে #ঊষবপঃরড়হঈরৎপঁং প্রচার চালান সংস্কারপন্থিরা। তারা বলছেন, ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি শুধু ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের বর্তমান ব্যবস্থাকে বৈধতাই দেবে।

ভোটর বর্জনের পক্ষে ৫৫ বছর বয়সী লেখক শাহারজাদ আফ্রাশেহ বলেছেন, “তরুণদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছেৃতরুণদের রাস্তায় হত্যা করা হচ্ছেৃআমরা এতো সহজেই এসব ভুলে যেতে পারি নাৃএতকিছুর পর ভোট দেওয়াটা অযৌক্তিক।”

পেজেশকিয়ানের নিটকতম প্রতিদ্বন্দ্বি কট্টরপন্থি সাইদ জালিলি পিছিয়ে আছেন মাত্র ১০০০ ভোটে। ছবি: রয়টার্স
পেজেশকিয়ানের নিটকতম প্রতিদ্বন্দ্বি কট্টরপন্থি সাইদ জালিলি পিছিয়ে আছেন মাত্র ১০০০ ভোটে। ছবি: রয়টার্স
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী ২০২২-২৩ সালের আন্দোলনে ৭১ শিশুসহ ৫০০ জন নিহত, কয়েকশ মানুষ আহত এবং কয়েক হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Exit mobile version