অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগ : পৌনে ৬ লাখ টাকাসহ পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুই প্রকৌশলী আটক

আপডেট: এপ্রিল ২৩, ২০২৪, ১১:১৮ অপরাহ্ণ


পাবনা প্রতিনিধি:


অনৈতিক লেনদেনের অভিযোগে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দুই উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীকে আটক করেছে পুলিশ। উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান ঠিকাদার রাজিব ও কনকসহ কয়েকজন। এ সময় ওই দুই প্রকৌশলীর কক্ষ থেকে ৫ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে তাদের আটক করা হয়। দিনভর নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সন্ধ্যার পর তাদেরকে পুলিশ আটক করে সদর থানায় নিয়ে যায়।

অনৈতিক লেনদেনের আটক দুই প্রকৌশলী হলো, পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মাসুদ রানা (২৯) পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের টিকশাইল গ্রামের মিনহাজুল ইসলামের ছেলে এবং একই কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন (৪২) কুমিল্লার মেঘনা থানার শিবনগর এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে।

প্রত্যেক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পেয়ে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডে অনুসন্ধানের কাজে যান পাবনার কয়েকজন সাংবাদিক। তারা উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাসুদ রানার কক্ষে গেলে ওই কক্ষ ভেতর থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। কয়েকবার নক করার পর মাসুদ রানা দরজা খোলেন। ভেতরে ঠিকাদার ও স্থানীয় কমিশনার আরিফুজ্জামান রাজিব, ঠিকাদার কনক ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোশাররফসহ কয়েকজনকে দেখা যায়। এ সময় টেবিলে বিপুল অর্থও দেখতে পান সাংবাদিকরা।

এ সময় সরকারি অফিসে ঠিকাদারের সাথে বন্ধ কক্ষে কিসের অর্থ লেনদেন হচ্ছে তা সাংবাদিকরা জানতে চান। কিন্তু কোনও সদুত্তর দিতে তারা পারেননি। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে পুলিশকে খবর দেন ওই সাংবাদিকরা। পুলিশ এসে পৌঁছানোর আগেই সেখান থেকে পালিয়ে যান ২ ঠিকাদার। পরে পুলিশ এসে দুই প্রকৌশলীকে আটক করে এবং দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদককে খবর দেন। সেখানেই দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের কাছ থেকে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন দুদক ও পুলিশ। পরে সন্ধ্যার পর তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড চত্বরে উপস্থিত আনিছুর রহমান মারুফ এক ঠিকাদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রত্যেক অফিসের কাজে কর্মকর্তাদের বিশেষ কমিশন দিতে হয়। কাজের শুরু থেকে ধাপে ধাপে এসব টাকা দিতে হয়। না দেয়া হলে কাজে বিল আটকে দেওয়া হয়। এসব কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমুলক সাজা হওয়া উচিত। যাতে অন্য কেউ এমন কাজ করার সাহস না পায়।’

তবে তানভীর আহমেদ দীপ নামের আরেক ঠিকাদার বলেন, ‘আটক দুইজন ষড়যন্ত্রের শিকার হতে পারেন। কারণ তারা মাত্র কয়েকমাস হলো এখানে যোগদান করেছে। এতো দ্রুত এসব টাকা লেনদেন করবে এটা অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। কোনো ঠিকাদার তাদের কাছ থেকে সুবিধা মতো কাজ (প্রকল্প) না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে তাদেরকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসিয়েছে বলে ধারণা তার।’

এ বিষয়ে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, ‘ঘটনাটি জানতে পেরেছি। দুদক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি দেখছেন। কোথাকার টাকা, কীভাবে লেনদেন হলো সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলী বলেন, ‘পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈকত ভাই আমাদের ফোন করে জানান যে সেখানে ঘুষের টাকা লেনদেন হচ্ছে। এমন খবর পেয়ে আমরা সেখানে গিয়ে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকাসহ দুই উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীকে আটক করে থানায় নিয়ে এসেছি। এখন তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে সত্যতা পেলে দুই প্রকৌশলী এবং ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে দুদক বিষয়টি অনুসন্ধান করবে। তবে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মন্তব্য করতে রাজী হননি দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয় পাবনা শাখার কর্মকর্তারা।