শিবগঞ্জে থামছেই না অবৈধভাবে পুকুর খনন

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪, ১১:১৯ অপরাহ্ণ


শিবগঞ্জ প্রতিনিধি:শিবগঞ্জে অবৈধভাবে পদ্মার মাটি ও বালু উত্তোলন ও পুকুর খননের রমরমা ব্যবসা চলছে। নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি, আমবাগান,ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে শত শত বাড়িঘর। প্রশাসন অভিযান চালালেও ক্ষান্ত হচ্ছে মাটি ও বালু উত্তোলন ও পুকুর খনন। তবে প্রশাসন বলছে অবৈধভাবে পদ্মা থেকে মাটি উত্তোলন ও অন্যান্য স্থানে পকুর খনন বন্ধে জোর পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে।
সরেজমিনে শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ও উজির পুর ইউনিয়নের পদ্মা নদীর ভাঙ্গন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বালু ও মাটি ভর্তি শত শত ট্রাক চলাচল করছে। প্রায় ৫০টি দল গ্রুপ করে মাটি ও বালু উত্তোলন করে ট্রাকতে ভর্তি করছে। মাটি ও বালু উত্তোলনের কারণে জমিগুলো প্রায় ২০ থেকে ২৫ফিট গর্ত হয়েছে। পাশে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফসল।

অবৈধভাবে পুকুর খনন এলাকাবাসী জানান, পাঁকা ও উজিরপুর ইউনিয়নের প্রায় প্রায় ১০কিলোমিটার জুড়ে চলছে মাটি ও বালু উত্তেলনের ধুমধাম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার কয়েকজন জানান, এ দুই ইউনিয়নের প্রায় ৩৫ সিন্ডিকেটের
মাধ্যমে প্রায় সাড়ে তিন শ খানা ট্রাকতে করে প্রতিদিনই হাজার হাজার গাড়ি মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। মাটি ও বালুগুলো বিভিন্ন ইটভাটায় ও ইমারত নির্মানকারীর নিকট বিভিন্ন দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সিন্ডিকেটগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী হওয়ার কারণে কোন ব্যক্তি ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না। যদিও তাদের ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। সুত্র আরো জানায়, সিন্ডিকেটের মধ্যে দলীয় নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিও সম্পৃক্ত আছে।তারা সম্মিলিত ভাবে বালু ও মাটি উত্তোলনের ঘাট থেকে উপজেলা ও সহকারী কমিশনার অফিসের আশেপাশে সার্বক্ষনিক পাহাড়া দেয়ার জন্য লোক নিযুক্ত করে রেখেছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার বা সহকারী কমিশনার কখন কোন এলাকায় যাবে তার তথ্য সংগ্রহ করে সিন্ডিকেটের কাছে সরবরাহ করই হচ্ছে তাদের কাজ। সরেজমিনে গিয়ে তার প্রমানও মিলে। কেউ কেউ সরাসরি এ
প্রতিবেদককে ছবি ডিলেট করতে বলেন এবং কেউ কেউ দলীয় পরিচয় দিয়ে বলেন বেকার অবস্থায় পেটের দায়ে এ কাজ করছি।

এবিষয়ে পাঁকা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক বলেন, ঘটনার সত্যতার স্বীকার করে বলেন ভৌগলিক কারণে নদী ভাঙ্গন এলাকায় কিছু বেকার যুবক এ কাজটি করছে। উজিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দুরুল হোদা অসুস্থ থাকায় তিনি কোন মন্তব্য দিতে পারেননি। অন্যদিকে উপজেলার শাহাবাজপুর, দাইপুকুরিয়া, কানসাট , চককীর্তি ও মোবারকপুর ইউনিয়নের আবাদী জমি ও আম বাগানের পাশে শতাধিক পুকুর খননের কাজ চলছে। যাবা পুকুর খনন করাচ্ছে তারা সরকার দলীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও অর্থশালী।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে ড্রেজার দিয়ে পুকুর খননের কাজ চলছে। মিডিয়ার উপস্থিতি টের পেয়ে মালিক পক্ষ গা ঢাকা দিচ্ছে। যারা কামলা হিসাবে উপস্থিত থাকছেন তারা শুধু বলেন আমরা পেটের দায়ে খাটছি এর বেশী কিছু বলতে পারবো না। সরজমিনে গেলে শাহাবাজপুর ইউনিয়নের মুসলিমপুর এলাকায় একটি মাটে পাশাপাশি কযেকটি পুকুর খননের কাজ চলছে। সেখানে উপস্থিত নাজির নামে যুবক বলেন আমরা ৩০জন এক সাথে মতস্য অফিসারের নিকট আবেদন করে পুকুর সংস্কার করছি। কোন নতুন কোন পকুর খনন করছি না। নতুন পুকুর গুলোর কথা জিজ্ঞেস করা মাত্র সে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে এবং ক্যামেরা ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে স্থানীয় দুই জন ব্যক্তির বাধার মুখে সে ব্যর্থ হয়। তবে মতস্য অফিসার আবু বাক্কার এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন আমি কোন অনুমতি দেয়নি। শুুধু পুরাতন পুকুর সংস্কারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছি।

এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, নতুন পুকুর খননের ব্যাপারে কোন অনুমতি নেই। তবে পুরাতন পুকুর সংস্কারের জন্য কয়েকটি আবেদন এসেছে। যা বিবেচনা করা হবে। তবে এ পর্যন্ত পুরাতন পুকুর সংস্কারে কোন অনুমতি দেয়া হয়নি। উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভুমি) জুবায়ের হোসেন বলেন,পদ্মার ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় মাটি ও বালু উত্তোনের ব্যাপারে প্রায় একশত জোরালো অভিযান চালানো হয়েছে। নষ্ট করা হয়েছে অনেকগুলো ট্রাক । ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অনেককে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। তাদের নজরদারির কারণে অনেক সময় ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের পাওযা যায় না। তবে অল্প সমযের মধ্যে অবৈধভাবে মাটি ও বালু উত্তোলন ও পুকুর খনন বন্ধ হবে।