আফগানদের স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে প্রথমবার স্বপ্নের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা

আপডেট: জুন ২৭, ২০২৪, ১:২৫ অপরাহ্ণ


সোনার দেশ ডেস্ক :


ম্যাচের তখন স্রেফ পাঁচ ওভার পেরিয়েছে। ধারাভাষ্যে ইয়ান স্মিথ বললেন, “গুড টস টু লুজ ফর সাউথ আফ্রিকা।” ততক্ষণে পাঁচ ওভারেই পাঁচ উইকেট নেই আফগানিস্তানের। অথচ টস জিতলে আগে ব্যাটিংই নিতেন প্রোটিয়া অধিনায়ক এইডেন মারক্রাম। টস হার তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে তো বটেই!

তবে টসেই তো আর ম্যাচ নির্ধারিত হয় না। বোলিংয়ে দুর্দান্ত পরিকল্পনা এবং শৃঙ্খলা ও স্কিল দিয়ে সেসবের অসাধারণ বাস্তবায়নে আফগান ব্যাটিং স্রেফ গুঁড়িয়ে দিলেন তারা। উইকেট যেমই হোক, কোনো দল ৫৬ রানে অলআউট হলে তো মাচ সেখানেই শেষ!

আফগানদের স্বপ্নরথ থামিয়ে ৯ উইকেটের জয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়ানডে ও টি—টোয়েন্টি মিলিয়েই তাদের প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনাল এটি। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে তাদেরকে ফেভারিটের কাতারে রাখেননি খুব বেশি লোকে। অতীতের সব ব্যর্থতা, অপ্রাপ্তি আর হাহুতাশকে পেছনে ফেলে টানা আট জয়ে বিশ্ব আসরের ফাইনালে এইডেন মারক্রামের দল।

প্রোটিয়াদের আগুনে বোলিংয়ের পাশাপাশি বলতে হবে আফগানদের ব্যাটিং ব্যর্থতার কথাও। যে লড়াইয়ের জন্য তারা পরিচিত, সেটির ছাপ দেখা গেল না আফগান ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ম্যাচটিতে।

এই ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে এবারের বিশ্বকাপে আগের চার ম্যাচের তিনটিতেই আগে ব্যাট করা দল গুটিয়ে গেছে একশর নিচে। ব্যাটসম্যানদের জন্য উইকেট ছিল অনেকটা বিভীষিকার। তবে সত্যি বলতে, এই ম্যাচের উইকেট বোলিং সহায়ক হলেও খুব ভয়ঙ্কর ছিল না। অন্তত, ৫৬ রানে অলআউট হওয়ার মতো তো নয়ই!

টি-টোয়েন্টিতে আফগানদের সবচেয়ে কম স্কোর এটি। আগের সর্বনিম্ন স্কোর ২০১৪ বিশ্বকাপে বাংলাদেশে বিপক্ষে ৭২। এত কম ওভারে (১১.১) অলআউটও আগে হয়নি তারা।

বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে একশর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার প্রথম নজিরও এটি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসেই সব ধরনের টুর্নামেন্ট মিলিয়ে নক আউট ম্যাচে সবচেয়ে কম স্কোর এটিই।

ম্যাচের প্রথম ওভারেই মার্কো ইয়ানসেনের ছোবল দিয়ে শুরু। পাওয়ার প্লেতেই বাঁহাতি এই পেসারের শিকার আরও দুটি। ম্যাচের সেরাও তিনিই।
পাওয়ার প্লেতেই কাগিসো রাবাদা এক ওভারে উইকেট নেন দুটি। উইকেট শিকার উৎসবে পরে যোগ দেন আনরিখ নরকিয়া ও তাব্রেইজ শামসি।

আফগানদের একজন ব্যাটসম্যানও দাঁড়াতে পারেননি এ দিন। আজমাতউল্লাহ ওমারজাইয়ের ১০ রানই দলের সর্বোচ্চ।
টসের সময় রাশিদ খান বলেছিলেন, খুব বেশি ঘুমানোর সুযোগ তারা পাননি। বাংলাদেশের বিপক্ষে সুপার এইটের স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচের পর সেন্ট ভিনসেন্ট থেকে ত্রিনিদাদে আসতে হয়েছে তাদের।

ফ্লাইট চার ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়ায় তাদের অপেক্ষাও বেড়েছে। ঠাসা সূচির কারণে ম্যাচের আগের দিন অনুশীলনের কোনো সুযোগ ছিল না। আফগান অধিনায়ক বলেছিলেন, তার পরও তার দল দারুণ উজ্জীবিত।

তবে অতি উত্তেজনায় হোক বা উপলক্ষের চাপে, টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা আফগানরা শুরু থেকেই ছিল ছন্নছাড়া। ব্যাটিংয়ের মূল ভরসা রাহমানউল্লাহ গুরবাজ প্রথম ওভারেই বিদায় নেন শূন্য রানে। ইয়ানসেনের বলটি ছিল প্রায় হাফ ভলি, কিন্তু বলের কাছে না গিয়েই আলগা শট খেলেন টুর্নামেন্টের সফলতম ব্যাটসম্যান।

এই টুর্নামেন্টে রেকর্ড তিনটি শতরানের বন্ধ গড়া উদ্বোধনী জুটি ভেঙে যায় চার রানেই।
সেটি কেবল শুরু। দ্রুতই গুরবাজের পথ ধরেন সতীর্থরা। ইয়ানসেনের পরের ওভারেই ভেতরে ঢোকা বল জায়গা দাঁড়িয়ে খেলে বোল্ড গুলবাদিন নাইব।

তৃতীয় ওভারে আক্রমণে এসে জোড়া আঘাত হানেন কাগিসো রাবাদা। তার প্রথম বলেই দারুণ ইন কাটারে উড়ে যায় ইব্রাহিম জাদরানের বেলস। তিন বল পর আরেকটি ইন কাটারে বাতাসে ডিগবাজি খায় মোহাম্মদ নাবির অফ স্টাম্প।

ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পাওয়া নানগেলিয়া খারোটেকে পরের ওভারে বিদায় করেন ইয়ানসেন। আফগানদের রান তখন ৫ ওভারে ৫ উইকেট ২৩।
উইকেট পতনের সেই ধারা চলতেই থাকে। বিপর্যয় কাটানোর মতো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ব্যাটিং দেখা যায়নি আফগানদের মধ্যে। আনরিখ নরকিয়ার প্রথম ওভারেই উড়িয়ে মেরে আউট হন আজমাতউল্লাহ ওমারজাই।

বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার তাব্রেইজ শামসি প্রথম ওভারেই দারুণ বোলিংয়ে শিকার ধরেন দুটি। রাবাদাকে টানা দুটি বাউন্ডারিতে পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেন রাশিদ। কিন্তু আফগান অধিনায়কের অফ স্টাম্প উপড়ে দেন নরকিয়া।

এরপর শেষ উইকেটও দ্রুতই তুলে নেন শামসি। এবারের আসরে স্রেফ চার ম্যাচ খেলেই ১১ উইকেট শিকার করলেন ৩৪ বছর বয়সী এই স্পিনার। ম্যান অব দা ম্যাচ হয়েছেন তিনি দুটি ম্যাচে।
দক্ষিণ আফ্রিকার রান তাড়ায় আফগানরা চেষ্টা করেছেন বল হাতে লড়াই করতে। কুইন্টন ডি কককে ফিরিয়ে এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি উইকেটের রেকর্ড এককভাবে নিজের করে নিয়েছেন ফাজালহাক ফারুকি (১৭ উইকেট)। তবে ম্যাচের ফল নিয়ে কোনো সংশয় তখন ছিল না। হয়তো আফগানদেরও নয়।

রিজা হেনড্রিকস ও এইডেন মারক্রাম অনায়াসেই পাড়ি দেন বাকি পথ। দারুণ কিছু শট খেলে দুজন ম্যাচ শেষ করে দেন ৮.৫ ওভারে। উল্লাসে মেতে ওঠে তাদের ডাগ আউট।

অসাধারণ এক অভিযানের আফগানদের শেষটা হলো চরম হতাশায়। তবে মাথা উঁচু রাখতে পারেন রাশিদ খানরা। বিশ্বমঞ্চে আফগান ক্রিকেটের উজ্জ্বল বিজ্ঞাপন হয়েই থাকবে এই আসর।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ১১.৫ ওভারে ৫৬ (গুরবাজ ০, জাদরান ২, নাইব ৯, ওমারজাই ১০, নাবি ০, খারোটে, জানাত ৮, রাশিদ ৮, নুর ০, নাভিন ২, ফারুকি ২*; ইয়ানসেন ৩-০-১৬-৩, মহারাজ ১-০-৬-০, রাবাদা ৩-১-১৪-২, নরকিয়া ৩-০-৭-২, শামসি ১.৫-০-৬-৩)।
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৮.৫ ওভারে ৬০/১ (ডি কক ৫, হেনড্রিকস ২৯*, মারক্রাম ২৩*; নাভিন ৩-০-১৫-০, ফারুকি ২-০-১১-১, রাশিদ ১-০-৮-০, ওমারজাই ১.৫-০-১৮-০, নাইব ১-০-৮-০)।
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৯ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: মার্কো ইয়ানসেন।
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Exit mobile version