দই বিক্রেতা জিয়াউল পাচ্ছেন একুশে পদক

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪, ১০:৫৭ অপরাহ্ণ


ভোলাহাট প্রতিনিধি:চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে একুশে পদকে ভূষিত হতে যাচ্ছেন জিয়াউল হক। মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আইরিন ফারজানা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একটি তালিকা প্রকাশিত হলে সেখানে ভোলাহাট উপজেলার এই কৃতি সন্তান মো. জিয়াউল হক ঘোষের নাম উঠে আসে। তিনি সমাজসেবায় বিশেষ অবদান রাখায় তাকে সরকার স্বীকৃতি স্বরূপ একুশে পদকে ভূষিত করতে যাচ্ছে। জানা গেছে, পেশায় দই বিক্রেতা জিয়াউল হক সাদা মনের মানুষ হিসেবে খ্যাত। উপজেলার দলদলী ইউনিয়নের চামা মুশরীভুজা গ্রামের মরহুম তৈয়ব আলী মোল্লা এবং শরীফুন নেসার ঘর আলোকিত করা ছেলে মো. জিয়াউল হক দই বিক্রি করে উপার্জিত অর্থের একটা অংশ থেকে জিয়াউল হক সাধারণ পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেছেন।

একুশে পদক শুধু তাই নয়, হাফেজিয়া মাদ্রাসা, এতিমখানা, মসজিদ নির্মাণ, বাড়ি নির্মাণ সহ নানা ধর্মীয় এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে এবার একুশে পদকে ভূষিত হতে যাচ্ছেন জিয়াউল হক। তার একুশে পদক পাওয়ায় আনন্দে ভাসছে পুরো জেলা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষ তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। এনিয়ে ভোলাহাট উপজেলায় তাকে নিয়ে গর্ববোধ করেছেন বিভিন্ন মহল।

জিয়াউল হক (৯১) বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে রাষ্ট্রীয়ভাবে একুশে পদকের জন্য তালিকা প্রস্তুত করা হয়। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি যোগাযোগ করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) এ কে এম গালীভ খানের সঙ্গে। এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে যান।

জিয়াউল হক বলেন, তৎকালীন ইউএনও তার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত মনোনয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠান। এরপরেই ২০২৪ সালের ২১শে পদকের জন্য তার নাম ঘোষণা করা হয়। তিনি বলেন, মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ১জন উপসচিব ফোন করে প্রথমে মনোনীত হওয়ার বিষয়টি জানান।

জিয়াউল হক আরও বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ৬৫ বছর ধরে জেলায় ঘুরে ঘুরে মাথায় করে দই বিক্রি করি। দই বিক্রির টাকা দিয়ে ১৯৬৯ সালে ভোলাহাট উপজেলার মুসরিভূজা গ্রামে জিয়াউল হক সাধারণ পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করি। এরপর থেকেই আমার সমাজসেবা শুরু। এলাকার স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে বই প্রদান, স্কুল-কলেজে বেতন দেওয়াসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অনুদান দিয়ে আসছি। আমার মাধ্যমে শত শত মানুষ উপকৃত হচ্ছে। যত দিন বেঁচে থাকব, মানুষের সেবা করে যেতে চাই।’

একুশে পদকের জন্য মনোনীত হওয়ার বিষয়ে জিয়াউল হক বলেন, ‘এই পদক শুধু আমার একার নয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী এ জন্য গর্বিত। এই পদক আমার সমাজসেবাকে আরও অনুপ্রাণিত করবে।’
তার এই গৌরবগাঁথা সাফল্যের জন্য শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে ভোলাহাট উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রাব্বুল হোসেন বলেন, সাদা মনের মানুষ জিয়াউল হক আমাদের ভোলাহাট উপজেলা তথা বাংলাদেশের জন্য গর্বের। এই অর্জনের জন্য ভোলাহাট উপজেলার পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি।

উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছেন ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাশেদুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. বাবর আলী বিশ্বাস, জেলা পরিষদ সদস্য হোসেন আরা পাখি, দলদলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হক চুটু সহ বিভিন্ন মহলের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।