এক পিস ডাবের দাম ১৮০ টাকা! বাধ্য হয়েই কিনছেন ডায়রিয়া ও পানিশূন্যতার রোগী, মন্তব্য করতে চান না ভোক্তা দপ্তর!

আপডেট: এপ্রিল ১৯, ২০২৪, ১২:১২ পূর্বাহ্ণ


মাহাবুল ইসলাম:


বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) তখন ঘড়ির কাটায় দুপুর ২ টা। কড়া রোদের মধ্যে একটু স্বস্তি খুঁজতে যারা ডাবের দোকানের ধারে কাছে যাচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই দাম শুনেই চলে যাচ্ছেন। প্রশ্ন জাগতে পারে, তাহলে যারা ডাব কিনছেন, তারা কি বিত্তশালী। এর উত্তর যেমনই হোক, কিছু মানুষ যে বাধ্য হয়েই ডাব কিনছেন তা টের পাওয়া গেলো মুহূর্তেই।

রাজশাহী নগরীর ব্যস্ততম এলাকা জিরোপায়েন্ট মসজিদের সামনে ডাব বিক্রি করছিলেন তিন ব্যবসায়ী। এসময় আশরাফ আলী নামের এক ডাব ব্যবসায়ীকে এক ক্রেতা এসেই দুইটি ডাব কেটে ব্যাগে দিতে বলেন। ডাব বিক্রেতা ডাব কেটে ব্যাগে দিয়ে দেন। ডাব হাতে নিয়ে এবার ডাবের দাম কত দিতে হবে? জানতে চান ক্রেতা। এবার দাম শুনে হতবাক হয়ে যান। মিডিয়াম সাইজের দুইটি ডাবের দাম চাওয়া হয় ২৮০ টাকা।

এবার ব্যবসায়ী ও ক্রেতার মধ্যে শুরু হয় বাকযুদ্ধ। পরাস্ত হয়ে ক্রেতা একটি ডাব রেখে দিতে বলেন। কিন্তু ডাব কাটা হয়ে গেছে, তাই নিতে অস্বীকৃতি জানালো বিক্রেতা। শেষে নানা অনুরোধে একটি ডাব রেখে একটি বিক্রির বিষয়ে সম্মত হলেন ওই বিক্রেতা।

এ নিয়ে কথা বলতে চাইলে ওই ক্রেতা বলেন, আমার নাম বলতে চাই না। তবে আমি এখানকারই বাসিন্দা। হঠাৎ করেই তীব্র গরমে পাতলা পায়খানা হয়েছে। আমি ভেবেছিলাম ডাবের দাম ৬০-৭০ টাকা হবে। ১৪০ টাকা পিস ডাব! কি বলবো ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। বাধ্য হয়ে একটা ডাব নিলাম। দুটো ডাব কেনার মতো অবস্থা নেই।

এবার কথা হয় ডাব বিক্রেতা আশরাফ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ইদের আগেও ডাবের এতো চাহিদা ছিলো না। ইদের পর গরমও অনেক পড়েছে। ডাবের চাহিদাও বেড়েছে। ১০০ টাকার উপরে ডাব কিনতেই হচ্ছে। একারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমার কাছে তিন কোয়ালিটির ডাব আছে- ১৪০ টাকা, ১৩০ টাকা আর ১১০ টাকা। আরেক ডাব বিক্রেতা মো. মানিক হোসেন। তিনি বলেন, বড় ডাব তিনি ১৫০ টাকা পিস, মাঝারিটা ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা আর ছোটটা ১১০ থেকে ১২০ টাকা দামে বিক্রি করছেন।

চৈত্রের খরতাপে পুড়তে থাকা রাজশাহীতে হঠাৎ করেই ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। ওষুধের পাশাপাশি ডাব খাওয়ার পরামর্শও দিচ্ছেন চিকিৎসাকরা। তাইতো নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকায় ওষুধের পাশাপাশি ডাবের ব্যবসাও বেশ জমজমাট। কিন্তু ডাব কিনতে গিয়ে দিশেহারা রোগী ও রোগীর স্বজন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের সামনেসহ লক্ষ¥ীপুর এলাকায় অন্তত ১০ জন ডাব বিক্রেতার দেখা মেলে। যাদের কেউ অস্থায়ী ভ্যানে আবার কেউ স্থায়ী দোকানে ডাব বিক্রি করছেন। বরাবরের মতোই এখানে ফলের সঙ্গে ডাবের দামও বেশ চড়া। বুধবার এ এলাকায় এক পিস ডাব ১৮০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে। যেখানে রোগীর কথা চিন্তা করে বাধ্য হয়েই বেশি দামে ডাব কিনছেন ক্রেতারা। তবে এ বিষয়ে এখানকার খুচরা বিক্রেতারা প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে চান নি।

তবে একাধিক সূত্র বলছে, পাইকারি পর্যায়ে ডাবের দাম বৃদ্ধি পেলেও এতো অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে নি। পাইকারিতে ১০০ টাকার নিচেই ডাব কেনাবেচা হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে তা ১৮০ টাকায় যাওয়ার যৌক্তিকতা নেই।

ক্রেতারা বলছেন, সব জায়গায় দুর্বৃত্তায়ন শুরু হয়েছে। সুযোগ পেলেই ফায়দা লুটছে ব্যবসায়ীরা। নজরদারি না থাকায় যে যা খুশি তাই করছে। এ নিয়ে কথা বলেও কোনো লাভ নেই। তবে যখন বিপদে পড়েন তখন বাধ্য হয়েই কিনতে হয়।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ইব্রাহীম হোসেন প্রথমে বলেন, ‘আমার কোনো মন্তব্য নেই’। পরক্ষণেই বলেন, এটা কৃষিপণ্য। এটা কিভাবে বিক্রি হয় আপনারা জানেন। তারপরও বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবো।