এবার আমের ফলন কম, আকার বড় II লাভের আশায় আমচাষিরা

আপডেট: মে ১১, ২০২৪, ১২:১৫ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:


আম নিয়ে বাগানী, চাষী, ব্যবসায়ী কেউই এবার হিসাবের সমীকরণ ঠিকমতো মেলাতে পারেন নি। একারণে লাভের প্রত্যাশাতেও ছিলো নানা গুঞ্জন। কারণ প্রতিকূল আবহওয়ার কারণে এবার আমের মুকুল, গুটি নিয়ে ছিলো শঙ্কা। ফলন নিয়েও নানা শঙ্কা এখনো আছে। তবে এবার গাছে গাছে আমের সংখ্যাগত পরিমাণ কম থাকলেও আকার বড় হওয়ায় শেষ সময়ের হিসাবে লাভের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজশাহী অঞ্চলজুড়ে এবার আমের উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা আছে। এমনিতেই এবার গাছে মুকুল এসেছিল কম। যেসব মুকুল ছিল সেগুলো থেকে গুটিও এসেছে কম। আবার কাক্সিক্ষত সময়ে বৃষ্টির বদলে ছিলো খরতাপ। এতে ঝরে পড়ছে গুটি। তবে গাছে এখন যে আম আছে, সেগুলো আকারে বড়। আর এতেই লাভের আশায় স্বপ্ন বাঁধছেন চাষীরা।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এসব গাছ থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার ১৬৪ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হতে পারে বলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত আদৌ এবার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি না? তা নিয়ে সবার মধ্যেই শঙ্কা আছে।
গত বছর আম বিক্রি থেকে রাজশাহীতে চাষিদের আয় হয়েছিল প্রায় ১ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। এবার সে হিসাব নিয়ে আগেই মন্তাব্য করতে চান না সংশ্লিষ্টরা।

বাঘার আমবাগানের মালিক আব্দুল কাদের বলেন, এবার আম নিয়ে তেমন আশাবাদী হতে পারি নি। কারণ মুকুল কম। আবার গুটিও কম। এখন সেই আম যদি ঝরে পড়ে তাহলে আশাবাদী হওয়ার কী আছে? প্রকৃতি যদি সহায় হয় তবে হয়তো হতাশা কাটবে এমনটা আশা ছিলো। শেষ সময়ে এসে আমের আকারটা ভরসা জুড়াচ্ছে।

গাছে যে আম আছে তা টিকিয়ে রাখতে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পর করছেন চাষিরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে এ জেলায় প্রায় ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এতে গাছ রয়েছে প্রায় ৭৫ লাখ ৭৯ হাজার ৮২৫টি। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৫০ হাজার টন।

শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর এলাকার আম-চাষি ও বাগান-মালিক মো. শামীম বলেন, এ বছর বাগানে মুকুল কম আসায় গুটিও কম এসেছিলো। আবার গুটি ঝরেও পড়েছে অনেক। তবে শেষ সময়ে এসে আমের আকার স্বস্তি এসেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক জানান, এবার আমের অফ ইয়ার। এক বছর গাছে বেশি মুকুল এলে পরের বছর কম আসে। আম ঝরে পড়ার বিষয়টি এখনো তীব্র হয় নি। তবে দাবদাহ দীর্ঘ হওয়ায় আমের ফলন কমবে এটা শঙ্কা ছিলো। শেষ হিসাবে আমের আকার নিয়ে চাষীরা সন্তুষ্ট।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের উপ-পরিচালল ড. মোতালেব হোসেন বলেন, আমের অফ ইয়ার ও অন ইয়ার বলে একটা বিষয় প্রচলিত আছে। বড় গাছ এগুলোতে এ বিষয়ে বেশি দেখা যায়। গত বছর যেহেতু ফলন বেশি এসেছিলো, একারণে এসব গাছে এবার কম। তবে ছোট গাছ যেগুলো সেগুলোতে আম মুটামুটি ভালো আছে। গত বছরের চেয়ে এবার উৎপাদন খুব কম হবে বলে মনে হয় না। আমাদের পর্যবেক্ষণে আমের ভালো উৎপাদনের বিষয়টি উঠে আসছে। তবে অগ্রিম মন্তব্য করা যর্থার্থ হবে না।

এদিকে, রাজশাহীতে আম পাড়ার বিষয়ে আলোচনায় রোববার (১২ মে) আলোচনায় বসবেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক। এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ট্রেনে আম পরিবহণের বিষয়ে অংশীজনদের নিয়ে শনিবার (১১ মে) রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে অংশীজনদের নিয়ে আলোচনায় বসবেন রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম। এদিকে নাটোরে নিরাপদ আম ও লিচু আহরণ-সংরক্ষণ এবং বাজারজাত-করণ নিশ্চিত করতে আগামী ১৫ মে হতে আম ও ২০ মে লিচু গাছ থেকে নামানোর তারিখ নির্ধারণ করেন।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে নাটোর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা বাগান মালিক, ব্যবসায়ী, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাসহ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত বাহিনীর কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এ তারিখ ঘোষণা করেন।

সভায় জানানো হয়, আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকায় এবারে আম লিচুসহ গ্রীষ্মকালীন ফল দেরিতে এসেছে। বাজারে যাতে অপরিপক্ব এবং ভেজালমিশ্রিত কোনো ফল বিক্রি করতে না পারে সেই জন্যই কৃষি বিভাগের সমন্বয়ে এ ফল আহরণ সংরক্ষণ এবং বাজারজাতকরণ বিষয়ক সভা করা হয়েছে।

সভায় ঘোষিত তারিখ অনুযায়ী স্থানীয় মোজাফফর জাতের লিচু আহরণ করতে পারবেন ২০ মে থেকে এবং বোম্বাই ও চায়না জাতের লিচু ২৭ মে থেকে আহরণ করা যাবে। এছাড়া স্থানীয় গুটি জাতের আঁটির আম ১৫ মে থেকে নামানো যাবে। গোপালভোগ আম ২৫ মে, রানী পছন্দ ৩০ মে, খিরসাপাত ৩০ মে, লক্ষণভোগ ৫ জুন, বারিআম ১০ জুন, ল্যাংড়া ১২ জুন, মোহনভোগ ২০ জুন, হাড়িভাঙ্গা ২৫ জুন, আম্রপালি ২৫ জুন, ফজলি ৩০ জুন, মল্লিকা ৫ জুলাই, আশ্বিনা ২০ জুলাই ও গৌরমতি জাতের আম ২০ আগস্ট থেকে আহরণ ও বাজারজাতকরণ করতে পারবেন আমচাষি, বাগান মালিক, আড়ত মালিক এবং ব্যবসায়ীরা। এর আগে আম বা লিচু বাজারজাত করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়গুলো মনিটরিং করতে কৃষি বিভাগের পাশাপাশি প্রশাসন আলাদা তদারকি ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

নওগাঁ ও নাটোরে স্থানীয়ভাবে সময় নির্ধারণ করা হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলায় এখনো আম সংগ্রহের তারিখ ঘোষিত হয় নি।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ