কালো পোশাকে ৯ মুখোশধারী বের হয় কবরস্থান থেকে, কাঁধে ছিল ব্যাগ’

আপডেট: মার্চ ২০, ২০২৪, ২:৫৯ অপরাহ্ণ

 

পাবনা প্রতিনিধি:


‘আমি ফজরের নামাজ পড়ে কোরআন তেলাওয়াত শেষে বাইরে বের হই। ভোরের আলো কেবল ফুটছে, কিছুদিন আগে আমার ভাই মারা গেছে। তাই কবরস্থানের দিকে যাই। সেখানে কালো পোশাক পরা, মুখে মুখোশ ৯ ব্যক্তিকে কবরস্থান থেকে বের হতে দেখি। তাদের কাঁধে ছিল ব্যাগ।’
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ভোরে নিজের চোখে দেখা ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন রেখা খাতুন। তার বাড়ি আমিনপুর থানার খাস আমিনপুর গ্রামে। স্বামীর নাম সেলিম মোল্লা। এদিন বিকেল ৪ টার দিকে খাস আমিনপুর কবরস্থানের পাশে দাঁড়িয়ে কথা হয় তাঁর সাথে।

রেখা বলেন, ‘কালো পোশাক পরা মুখোশধারীরা দুই গ্রুপে প্রথমে তিনজন পরে বাকি ছয় জন কবরস্থান থেকে বের হয়ে যায়। এরপর একটি ট্রাকে চড়ে চলে যায় তারা। পরে দোয়া দরুদ পড়ে বাড়িতে ফিরে ভাবি, না জানি কালো পোশাক পরা ওরা কী করছে। পরে সকালে আমার স্বামী বাজার থেকে ফিরে আমাকে জানায় কঙ্কাল চুরির কথা। তখন আমি বলি তাহলে কালো পোশাক পরা ওই লোকগুলো এই কাজ করেছে।’

কবরস্থান থেকে রাতের অন্ধকারে ১৫টি মরদেহের কঙ্কাল চুরি হয়। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ভোররাতের দিকে এ ঘটনা ঘটে। সকালে বিষয়টি টের পায় স্থানীয়রা। এরপর থেকেই কবরস্থানে স্বজনেরা ভিড় করতে থাকেন। কঙ্কাল চুরি নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে জেলা জুড়ে দেখা দেয় চাঞ্চল্য। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বিকেলে কবরস্থানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কবরস্থানে অনেক মানুষের ভিড়। কেউ বাইরে দাঁড়িয়ে দেখছেন, কেউবা কবরস্থানে নেমে ঘুরে ঘুরে কঙ্কাল চুরির বিষয়টি দেখছেন। দেখা যায়, কবরগুলোর বাঁশের চারাট উপরে তোলা। কবরের মাটি খুঁড়ে তোলা হয়েছে। এরকম ১৫টি কবরের একই চিত্র।

সেখানে কথা হয় জাতসাকিনী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আবুল কালাম মন্ডলের সাথে। তিনি বলেন, এখানে মোস্তাফিজুর রহমান নামের একজন ব্যাংকে চাকরি করেন। ৪০ দিনের ব্যবধানে তার বাবা-মা দু’জনেই মারা যায়। সকালে বাজারে এসে তার সাথে বসে চা খাচ্ছিলাম। তখন তিনি বলেন, কবর খোড়া, কঙ্কাল নাই। তখন আমি কবরে গিয়ে সত্যতা পাই। পরে দেখি কবরের ভেতর থেকে মরদেহের মাথা নাই। প্রত্যেকটা কবর থেকে মাথা তুলে নিয়ে গেছে।’

খাস আমিনপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থানের সভাপতি বাবুল উদ্দিন মন্ডল বলেন, ‘আমরা জানার পরপরই দ্রুত থানাকে জানাই। পুলিশ এসে দেখে গেছে। এটার তদন্ত হওয়া উচিত। এরকম ঘটনা আমাদের এলাকায় আগে কোনোদিন হয়নি। কারা, কী কারণে এটা করছে তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।’

এ বিষয়ে আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ বলেন, ‘কবর থেকে কঙ্কাল চুরি হয়েছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। কোনো চক্র জড়িত আছে কিনা তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত বলা যাবে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ