কেশরহাটের আলোচিত প্রধান শিক্ষক শফিকুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা বোর্ডের নোটিশ!

আপডেট: মে ২, ২০২৪, ৯:০৮ অপরাহ্ণ


মোহনপুর প্রতিনিধি:


মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট উচ্চবিদ্যালয়ের আলোচিত প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম সাময়িক বরখাস্ত হবেন মর্মে ব্যবস্থা নিতে ইউএনও বরাবর নোটিশ প্রদান করেছেন রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড। এনিয়ে প্রধান শিক্ষক সপ্তম বারের সাময়িক বরখাস্তের নোটিশ প্রাপ্ত হলেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও সরকারী এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি জালিয়াতির মামলায় প্রধান শিক্ষক শফিকুল স্বস্ত্রীক দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেশরহাট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুর্নীতিবাজ হিসেবে এলাকায় আলোচিত। শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম রাজনৈতিক মহলের ছত্রছায়াই বিদ্যালয়ের অর্থসম্পদ লুট করে অঢেল সম্পদের মালিক বনেছেন। তার বিরুদ্ধে ডজন খানেক মামলার মধ্যে এখনও প্রায় ৫টি মামলা চলমান রয়েছে।

গত ২০ এপ্রিল রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের নোটিশে জানা গেছে কেশরহাট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা চলমান। প্রধান শিক্ষক শফিবুল ইসলাম ফৌজদারী মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিনে রয়েছেন। এ মামলাটি বর্তমানে চলমান থাকায় সরকারী কর্মচারী আইন ২০১৮ এর ৩৯ নম্বর ধারার ২ নম্বর উপধারায় বর্ণিত বিধান অনুসারে তিনি অবশ্যিক সাময়িক বরখাস্ত হবেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহি অফিসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহন করবেন। এছাড়াও মামলাটি নিষ্পত্তিতক সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় খাকবেন। প্রধান শিক্ষক এ আদেশ বাস্তবায়ন পুর্বক শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীদের সরকারি অংশের বেতন ভাতার বিলে স্বাক্ষর করতে পারবেন বলে উল্লেখ করা হয়। ২০১৮ সালে রাজশাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে (মোহনপুর) এ মামলাটি করেছিলেন শিক্ষার্থী অভিভাবক আবদুল আজিজ। মামলা নং ৪৬২ সি/২০২৩। এ মামলার বর্ণিত ধারা সমূহ ৪০৬/৪২০/৪৬৮/৪৭১ দঃ বিঃ।

উল্লেখ, ২০১৬ সালে প্রধান শিক্ষক শফিকুল ছিলেন, ধামিন নওগাঁ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি এবং তার স্ত্রী ছিলেন প্রধান শিক্ষক। সে সময়ে তারা দুজন যোগসাজস করে প্রাথমিক বিদ্যালয় নামীয় জমি (জেএল নং ৩৬১) জালিয়াতী, মিথ্যা দলিল প্রনয়ণ, জাল দলিলকে খাটি দলিল দেখিয়ে নিজে দখল করেন। আলোচিত এঘটনায় প্রধান শিক্ষকের আপন মামা সাবেক ইউপি সদস্য নায়েব আলী মণডল আদালতে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় শফিকুল ইসলাম স্ত্রীসহ দীর্ঘদিনের জন্য কারাবাসে যান। মহামান্য আদালতে বিদ্যালয়ের জমি জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণিত হলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি ফেরত দিয়ে স্বস্ত্রীক জামিন লাভ করেন।

এছাড়াও স্থানীয় সূত্র জানায়, কেশরহাট উচ্চবিদ্যালয়ে ৫টি বহুতল ব্যবসায়িক ভবনসহ শতাধিক দোকানপাট রয়েছে। যার অধিকাংশই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই একক আধিপত্য বিস্তার করে ডকুমেন্টস ছাড়াই ভাড়া দেয়ার লাখ লাখ টাকা জামানতের অর্থভোগ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এধরণের ঘটনায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিজাম উদ্দিন নামের একজন ভাড়াটিয়া আদালতে মামলা দায়ের করেন। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একমাত্র খেলার মাঠ ও জমি ম্যানেজিং কমেটির সিদ্ধান্ত ছাড়াই ব্যাংকে মরগেজ দিয়ে ঋণ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। প্রধান শিক্ষক শফিকুলের বিরুদ্ধে।

শিক্ষাবোর্ডের নোটিশ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়টির সাবেক সভাপতি রুস্তম আলী প্রামাণিক অন্যের নিয়োগের টাকা খরচ করে এধরণের অভিযোগ করে আসছেন। নিজের টাকা খরচ করা লাগলে এসব করতেন না। তবে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক আমাকে সাময়িক বরখান্তের নোটিশ করেছেন এমনটি শুনেছি। এখন পর্যন্ত এবিষয়ে কোনো নোটিশ আমি পাইনি।

বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি রুস্তম আলী প্রামাণিক বলেন, প্রধান শিক্ষক একজন দূর্নীতিবাজ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনি একজন দুষিত মানুষ। কেশরহাট পৌর এলাকা শিক্ষাকেন্দ্রিক এলাকা হিসেবে প্রসিদ্ধ। এখানে অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ অর্থ ক্যালেংকারি বা বিদ্যালয়ের জমি জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন না। আর প্রধান শিক্ষক শফিকুল জালিয়াতির মাধ্যমে একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি জালিয়াতির মামলায় স্ত্রীসহ তিনি দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছিলেন। তিনি এখন পর্যন্ত এ স্কুলের টাকা, সম্পদ তসরুপ করেই চলেছেন। তার বিরুদ্ধে বিদ্যালয় ভিত্তিক ২০টির মতো অভিযোগ ও মামলার কোনোটায় হাজত খেটেছেন, কোনোটায় জামিনে আছেন। আবার ৫/৬টি মামলা চলমান আছে। তাকে অপসরাসন করা না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিদ্যালয়টির শিক্ষা ব্যবস্থা।

জানতে চাইলে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা-বোর্ডের বিদ্যালয়-পরিদর্শক মো. জিয়াউল হক বলেন, কেশরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের বিদ্যালয়ের প্রধান-শিক্ষক শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এহেতু মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি সাময়িক বরখাস্তপ্রাপ্ত হবেন মর্মে মোহনপুর উপজেলা নির্বাহি অফিসারকে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ