চারঘাটে বছর ধরেই চলছে রাতে পুকুর খনন, প্রশাসনের ব্যবস্থা নেই

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪, ২:৪৫ অপরাহ্ণ


চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি :এক সময় চোখ মেললেই প্রাণ ভরে যেতো সবুজের সমারোহে। চারদিকে ফসল আর আমবাগান। কৃষকের প্রাণ ভরে থাকতো বছর জুড়ে। তবে কৃষকের সেই প্রাণভরা বুক চিরে এখন শুধুই পুকুর আর পুকুর। বছর ধরেই এখন চারঘাটের কৃষি জমির বুক চিরে অবৈধ পুকুর খননের মহোৎসব।

পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন সময় সংবাদ প্রকাশসহ কৃষকদের বুক ফাটা কান্নায় মাঝে মধ্যে স্থানীয় প্রশাসন একটু নড়ে চরে বসে। ফলে অবৈধ পুকুর খননকারীদের কাজে ব্যবহৃত ভ্যাকু মেশিনের ব্যাটারি খুলে নেয়া ও জরিমানার মধ্যেই আছে স্থানীয় প্রশাসনের কার্যক্রম। বছর ধরেই চারঘাটে এখন পুকুর খনন চলছে বাধাহীন ভাবে।

অভিযোগ উঠেছে সরকারি দপ্তর কিছু অসৎ কর্মকর্তা ম্যানেজ করে চারঘাটের চিহ্নিত কয়েকটি সিন্ডিকেট কৃষি জমির ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করে আসলেও দেখার কেউ নেই। ফলে অনেকটা বাধাহীন ভাবেই চলছে পুকুর খননের মহোৎসব। এতে করে শুধু কৃষি জমিই নষ্ট হচ্ছে না, পরিবেশের ওপরও বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে।

অপরদিকে মাটি বহনকারী ট্রাক্টর চলাচলের কারণে সড়ক-মহাসড়কেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। দ্রুত এর অবসান না হলে জলাবদ্ধতাসহ পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ারও আশঙ্কা করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবি পুকুর খনন বন্ধে জোর-প্রচেষ্টা ও অভিযান চালাচ্ছে।

চারঘাটের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকদিন ধরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার নিমপাড়া, চারঘাট, ভায়ালক্ষিপুর ও শলুয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অবাধে চলছে পুকুর খনন। তবে অধিকাংশ পুকুর খননকারীরা বিভিন্ন জমির মালিকদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে লিজ নিয়ে এসব পুকুর খনন করছেন।

আর সাবাড় করা হচ্ছে আমসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের বাগান। ধ্বংস করা হচ্ছে ধানসহ তিন ফসলি জমির। এতে সাময়িক জমির মালিকরা লাভবান হলেও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে পড়ছেন পুকুর খননকারী জমির আশেপাশে থাকা বাগান মালিক ও ফসলি জমির মালিকরা। তাদের দাবি, এভাবে যেখানে সেখানে পুকুর খননের ফলে জ্বলাবদ্ধতাসহ জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। কমছে কৃষি জমির পরিমাণ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিমপাড়া ইউনিয়নের নন্দনগাছী বাজারের জনৈক ব্যবসায়ী বলেন, শলুয়া ইউনিয়নে এক প্রভাবশালী ছত্রছায়ায় রাতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। এক শিক্ষক প্রতিরোধে ইউএনও অফিসে, ভূমি অফিসে অভিযোগ করলে অসাধু চক্রের নেতারা অভিযোগকারীকে হুমকি দেয়। পরে খবর পেয়ে প্রশাসন গিয়ে ভেকুর ব্যাটারিসহ সব ভেঙ্গে দেয়। শুধু ফকিরপাড়া মাঠে নয়, ভাটপাড়া মাঠ জুড়ে আগে যেখানে দেখা গেছে, গম ও ধানের শীষ। এখন সেখানে তাকালেই দেখা যাবে পুকুর আর পুকুর। এভাবে পুরো উপজেলার বেশির ভাগ মাঠ জুড়েই এক শ্রেণির অসাধূ ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরেই পুকুর খনন করে চলেছেন।

শুধু নিমপাড়া ইউনিয়নেই পুকুর খনন সীমাবদ্ধ নয়। উপজেলার শলুয়া, ভায়ালক্ষিপুর, ইউসুফপুর, সারদা ও চারঘাট সদর ইউনিয়নেরও বেশির ভাগ মাঠ জুড়েই এখন চলছে পুকুর খননের মহোৎসব। দেখার যেন কেউ নেই। এতে করে পুকুর খননকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দ্রুত এসব অবৈধ পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকার সর্বস্তরের কৃষক সমাজ।

এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদা খানম বলেন, পুকুর খনন সম্পুর্ণ ভাবেই অবৈধ। তার পরেও উপজেলার যে প্রান্তেই পুকুর খননের সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও যারা সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করছে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক ভাবে ও সকলের সহযোগিতায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ