ভিক্ষা করে বাঁচতে চান না, বিধাব ভাতার টাকায় চলে না সংসার II নাটোরে দীর্ঘ ৪৫ বছরে ছবেদার জীবন চলে দেইল্যা (জ্বালনী) বিক্রি করে

আপডেট: মার্চ ২৪, ২০২৪, ১০:০৫ অপরাহ্ণ


নাটোর প্রতিনিধি:ভিক্ষা করে বাঁচতে চান না, বিধাব ভাতার টাকায় চলে না সংসার। তাই জীবনের পড়ন্ত বিকেলে এসেও নিজে ভ্যান চালিয়ে জ্বালনী (শুকনা গবর) বিক্রি করে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন ছবেদা বেগম। প্রায় শত্তর বছরে এসেও থামেনি তার চলার গতি। স্বামী-সন্তান বলতে কেউ নেই। তাই রোদ বৃষ্টি কি শীত-গরম, এসব তার কাছে একই রকম মনে হয়। নিজের জায়গা জমি নেই। বসবাস করেন, গোদাই নদীর পাড়ে ছোট্ট ঘড়ে। যেখানে থাকেন সেটাও অন্য মানুষের বাড়ি সামনে । তাই পালমন্দ শুনেই সেখানে থাকতে হয় তাকে।

জানা যায়, নাটোর শহরতলী মদনহাট মধ্যপাড়া প্রায় ৭০ বছর বয়সী ছবেদা বেগম, ভ্যান চালিয়ে অজো পাড়া গায়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে জ্বালানী (শুকনা গবর) কিনেন। সেই জ্বালানী নিয়ে শহরের ভ্যান চালিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। এতে সারাদিনে ১০০ কিংবা ২০০ টাকা আয় করেন। আয় করা আর বিধবা ভাতার টাকা এই দিয়েই চলে সংসার, ওষুধ পত্রসহ সবকিছু। অসুস্থ থাকলে ওইদিন আয় বন্ধ হয়ে যায়। পরের দিন কীভাবে চলবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়েন তিনি। এরপরেও বার্ধক্যের কাছে মাথা নত করেননি। ভিক্ষাবৃত্তিতে যাননি বরং জ্বালনী পরিশ্রম করে বেঁচে আছেন, নাটোর সদর উপজেলার মদনহাট গ্রামের বৃদ্ধা ছবেদা বেগম।

কথা হয় তার নাতি শাহীনের সাথে। তার মতে, প্রায় ৪৫বছর পূর্বে নানা আক্কাস আলী মারা যান। ঐ সময় তার তিন বছরের এক মেয়ে ছিল তাকে নিয়ে একটানা ৪৫ বছর ধরে জ্বালনী বিক্রি করে আসছে।

তিনি আমার মা মারা যায়, নানীর অসুখ হলে দেখার কেউ নাই, তাই আমাকে বিয়ে দিছে। স্ত্রী-সন্তান আর নানীকে নিয়ে এক সাথেই থাকি। কিন্তু দিন মুজুরের কাজ করে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তাই এই বয়সেও তার নানীকে ভ্যান চালিয়ে জ্বালানী বিক্রয় করতে হয়।

ওই গ্রামের প্রতিবেশী শফির মোল্লা বলেন, ছবেদা বেগম এর অভাবি সংসার তাই (ঘুটা -দেইল্যা) জ্বালনী বিক্রি করে চলে। যৌবন কালে স্বামী মৃত্যুর পর আর (কাজ-কাম) বিয়ে সাধী করে নাই। স্বামী-সন্তান নাই, এলাকার সবাই তাকে ভালো বাসে এবং তার ব্যাপারে খারাপ বলতে পারেনা কেউ। নাতিকে নিযে ওই নদীর ধারে বসবাস করে।

ঘোড়াগাছা গ্রামের শাহিনা বেগম বলেন, ছবেদার বাড়ি নদীর ওপার সে ভ্যান চালায় আর দেইল্যা (জ্বালনী) বিক্রি করে খায়। আমাগারে কাছ থেকে এক পন(৮০)টা ১শ টাকা দিয়ে নগদও নেয় আবার বাকিও নেয় । তা বাজারে বিক্রয় করে যা লাভ হয় তাই দিয়ে কোন সংসার চলে তার ।

স্থানীয় চা দোকানী জহুরুল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ওই মহিলা (নারী) আগে মাথায় করে এখন ভ্যানে করে দেইল্যা জ্বালনী বিক্রি করে আমরা কিনি। এতে আমাদের জ্বালানী সাশ্রয় হয়।
এ ব্যাপারে দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য মাসুদ পারভেজ সোহাগ বলেন, ছবেদা বেগম আমার ওয়ার্ডের সে মদনহাট মধ্য পাড়ার বাসিন্দা। তার দুরাস্থা দেখে তাকে বিধবা কার্ড করে দেয়া হয়েছে এবং স্থানীয়দের সহায়তায় একটি ভ্যান কিনে দেওয়া হয়।

জ্বালনী ছোট্র একটা ঘড়ে তার নাতি, নাত বৌ ও তাদের এক সন্তান নিয়ে বাস করে। আত্মীয় স্বজন আসলে সেখানে থাকার কষ্ট হয়। সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পের একটা ঘড় তার নামে বরাদ্ধ দেওয়া যায়, তার জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করবো।

জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূইঞা জানান, তার সম্পর্কে জেনে তাকে স্থায়ীভাবে কোন কিছু করা যায় সে ব্যাপারে আমরা তাকে ডেকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব।