দুর্ভোগ ও ভোগান্তি নিয়ে শেষ হলো রাবির ভর্তি পরীক্ষা

আপডেট: মার্চ ৭, ২০২৪, ১১:১৩ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নানা দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তাদের অভিযোগ, আবাসন সংকট, যাতায়াত সমস্যা, যানবাহনের বাড়তি ভাড়া আদায়সহ বিভিন্ন ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তারা বলছেন, ঢাবি ও চবির মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বিভাগীয় শহরে নেওয়া হলে তাদের সময়, অর্থসহ দুর্ভোগ অনেকাংশে কমবে।

ময়মনসিংহ থেকে মেয়েকে নিয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়াতে এসেছেন এনায়েত ধ্রুব। রেলওয়ে এই চাকরজীবী বলেন, ঢাকা থেকে ট্রেনের টিকিট পাইনি। বাসের টিকিটও ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। অনেক কষ্টে বাসের টিকিট ম্যানেজ করে আসতে হয়েছে। এখানে শুরু হয়েছে অটোরিকশা চালকদের কয়েকগুন ভাড়া বেশি নেওয়া। উপায় নাই দেখে ভাড়া বেশি দিতে বাধ্য হচ্ছি।

বরগুনা থেকে ছেলেকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে আসেন আরেক অভিভাবক আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, ছেলেকে অনেক দূর থেকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে এসেছি। ভালো হোটেল না পাওয়ায় ছেলেসহ আবাসিক হলে থেকেছি। যানবাহনেও কয়েকগুন ভাড়া নিচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ঢাবির মতো বিভাগীয় পর্যায়ে হলে আমরা এসব ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাব। এমনকি যদি সব বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিলে বেশি সুবিধা হতো।

লালমনিরহাট থেকে ফয়সাল জুলফিকার ও তার স্ত্রী খালেদা তাদের মেয়েকে নিয়ে গতকাল রাজশাহীতে এছিলেন। এখানে তাদের কোনো আত্মীয় না থাকায় আবাসন সংকটে ভুগতে হয়েছে। তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে থাকার মত কোনো জায়গা না পেয়ে আমরা ২০ কিলোমিটার দূরে বানেশ্বরে একটি আবাসিক হোটেলে ১২০০ করে ভাড়া দিয়ে থাকতে হয়েছে। সেখানে থাকার মত তেমন ভালো অবস্থা ছিল না। সে অনুযায়ী ভাড়া অনেক বেশি নেয়া হয়েছে।

যানবাহনের ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, ট্রেনের টিকিট প্রথমে না পাওয়ায় আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। পরে বাসে রাজশাহীতে আসি। এছাড়াও ক্যাম্পাসের বাইরের হোটেলগুলোতে তুলনামূলক খাবারের দাম একটু বেশি নিচ্ছে।

পরীক্ষার ভোগান্তির ব্যাপারে জানতে চাইলে তাদের মেয়ে জয়িতা ফয়সাল বলেন, এরকম পরিস্থিতিতে পরীক্ষার কক্ষে এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করে। এমনকি পরীক্ষার জন্য মানসিক প্রস্তুতি কমে যায়। এ কারণে আশানুরূপ পরীক্ষা ভালো হয় না। রাবির ভর্তি পরীক্ষা বিভাগীয় পর্যায়ে নিলে আমাদের এরকম ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।

বুধবার রাবির পরীক্ষা চলাকালিন সময় দেখা যায়, কিছু অভিভাবক বাড়ি থেকে রান্না করে নিয়ে এসেছে। রংপুর থেকে এসেছেন জাকির হোসেন। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন নিজের মেয়ে, ভাগ্নে ও ভাস্তেদের। তিনি বলেন, এর আগে রাজশাহীতে এসে দেখেছি খাবারের দাম। তাই এবার আমার বউ সারারাত জেগে খাবার রান্না করে দিয়েছেন। তাই নিয়ে এসেছি। গতবার এক প্লেট ভাতই নিয়েছিল ৫০ টাকা। এখানে এসে মেহেরচণ্ডি থেকে রাবিতে আসবো অটোচালক ৩০০ টাকা ভাড়া চেয়েছে। দামাদামি করে ২০০ টাকায় এসেছি।

আগামীবার থেকে ঢাবি এবং চবির মত বিভাগীয় পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কর্তৃপক্ষ। রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলছেন, তারা ছুটির দিনে পরীক্ষা নিবেন। তাই কোনো সমস্যা হবেনা। বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল সিদ্ধান্তের মালিক অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল। কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা আশা করছি যে, আগামীতে আমরা বিভাগীয় পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষা নিবো। এখানে কারও ব্যাঘাত ঘটবেনা। কারণ পরীক্ষাগুলো আমরা নিবো ছুটির দিনে। ঢাবি এবং চবি ইতিমধ্যে এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিচ্ছে।