নওগাঁয় অবৈধভাবে ডলার লেনদেনে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ নাহিদ!

আপডেট: এপ্রিল ২৭, ২০২৪, ৯:৫৭ অপরাহ্ণ


নওগাঁ প্রতিনিধি:


নেই কোনো কর্ম ও চাকরি। ছিলো না কোনো ব্যবসাও। এসব কিছু না থাকলেও হয়েছেন বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক। যখন ইচ্ছে কিনছেন নতুন মোটরসাইকেল, করছেন বাড়ি। আবার টাকার গরমে বউকে পছন্দ না হওয়ায় মোটা অংকের টাকা দিয়ে ছেড়ে দিয়ে আবার দ্বিতীয় বিয়ে করারও অভিযোগ নাহিদের বিরুদ্ধে।
কোনো কিছু না করেই সম্পদের অভাব নেই তার। এতো তাড়াতাড়ি কীভাবে আর্থিক পরিবর্তন তা নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা।

সম্প্রতি অর্থ-সম্পদের মালিক বনে গেছেন মাত্র ২৮ বছরের নাহিদ হোসেন নামের এক যুবক। তার চাল চলনে এমনটাই বলছেন স্থানীয়রা। আবার কেউ কেউ হাসির ছলে বলছেন, আলাউদ্দিনের প্রদীপ পেয়ে থাকতে পারে নাহিদ। অভিযোগ অন-লাইনে অবৈধ ডলারের ব্যবসা পরিচালনা সহ বিদেশি ভার্চুয়াল ব্যাংকে ডলার লেনদেন ও বিদেশি ব্যাংক- ক্যাশ অ্যাপ সাপোর্ট দেয়ার। আর এগুলো করেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন নাহিদ হোসেন সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের (চাকলা উচ্চ বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে) গ্রামের গোলাম হোসেনের ছেলে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত তিন বছর আগেও কিছু না থাকলেও বর্তমানে বাড়ি গাড়িসহ নগদ টাকা ও সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। কয়েক বছর আগে নাহিদের বাবা গোলাম দিনমজুরের কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালাতো। নাহিদের দাদারও ছিলও না তেমন কোনো সহায় সম্পদ বা নগদ অর্থ। তাই পারিবারিক সূত্রে পায়নি তেমন কিছু। স্থানীয়রা বলছেন পুরোপুরি বেকার ছিল নাহিদ। কিন্তু গত দুই বছরের ব্যবধানে নাহিদ এখন কোটিপতি স্টাইলে চলাফেরা করছে। আর তার এমন পরিবর্তন দেখে স্থানীয়রা হতবাক। করেনা কোনো কর্ম বা চাকুরী। নেই কোনো ব্যবসা। অথচ তার এখন সম্পদের অভাব নেই, এতো তাড়াতাড়ি তার এমন পরিবর্তন নিয়ে এলাকায় চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বর্তমানে বাড়ি পছন্দ না হওয়ায় সেটা ভেঙে পাঁচতলা বিশিষ্ট বাড়ি নির্মাণ করছে বলে জানা গেছে। তবে সম্প্রতি এলাকায় একটি দোকান ভাড়া নিয়ে খুচরা চাল দোকান দিয়েছেন। যা লোক দেখানো বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চাকলা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশেই পূর্বের বাড়ি পছন্দ না হওয়ায় ৫তলা বিশিষ্ট বাড়ি নির্মাণ করছেন তিনি। আবার শ্যামপুর গ্রামে তার নানার বাড়ির এলাকায় কিনেছে বেশ কছিু ফসলি জমি। বর্তমানে ব্যবহার করছে আর ওয়ান ৫আপডেট ভার্সনের মোটরসাইকেল। আছে দেড়শ সিসির পালসার গাড়িও। আছে কয়েকটি নামি-দামি মোবাইল ফোন। স্বর্ণও বানিয়েছে কয়েক ভরি। বরিউল নামের এক স্বর্ণকারের কাছে সে স্বর্ণের কাজ করিয়ে নিয়েছেন। স্বর্ণ বানানোর সত্যতা নিশ্চিত করে কারিগর রবিউল বলেন, আমরা তো আর দোকানদার নয়। তাই কি পরিমাণ সে স্বর্ণ বানিয়েছে তার রশিদ দিবো। তবে সে স্বর্ণ বানিয়েছে।

এদিকে নাহিদ গত ২০২২ সালের ১১জানুয়ারি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে সংসার টিকেনি বেশিদিন। মাত্র কয়েক মাস সংসার করে শিফা খাতুন নামের ওই গৃহবধুকে তালাক দেয় নাহিদ। কেন তালাক দেয় এমন প্রশ্নে শিফা জানান, আমার কোনো দোষ ছিলো না। আমি তার চোখে দেখতে অসুন্দর সেজন্য আমাকে বিনা কারণে তালাক দিয়েছে নাহিদ। বলা যায় আমাকে জোর করে তালাক দিয়েছে সে। সে সময় আমি ছিলাম অসহায়। আমার নিজের বলতে তেমন কেউ ছিলো না এবং থানায় গেলে তবুও কেউ কিছু করতে পারবে না তার এটা বলে আমাকে ভয় দেখায়। বলতে গেলে আমি এতিম। গত বছরের জুলাই মাসে ভালো পরিমাণ নগদ অর্থ (১০লাখ টাকা ও ৫ ভরি) স্বর্ণ তাকে দেয়া হয়। তবে জানা যায়, শিফাকে তালাক দিয়ে গত ২০২৩সালের ৭জুলাই মুন নামের মেয়েকে ২য় বিয়ে করে নাহিদ।

গত ৯ মাস আগে চাকলা স্কুল মোড়ে দোকান ভাড়া নিয়ে নায্য মূল্য চাল ঘর নামে প্রতিষ্ঠান দিয়েছে নাহিদ। সেখানে তার বাবাকে দেখতে পাওয়া যায়। তবে অনেকেই বলছেন সম্পদের তথ্য যেন ফাঁস না হয় এবং মানুষের মনে সন্দেহ না জন্মায়, দায় এড়ানোর জন্য দোকানটি দিয়েছে। নাহিদের বাবা পড়াশোনা না জানলেও দিয়ে রেখেছেন দামি পিসি ও মনিটর। এলাকাবাসী বলছেন যে দোকান দিয়েছে সেটা শুধু মানুষকে বোকা বানানোর জন্য, যাতে মানুষ বুঝে সে ব্যবসা করে। আসলে তার সম্পদকে ঢাকতে কৌশল অবলম্বন করেছে সে। তার বাবা সহজ সরল এবং বয়স্ক। সেজন্য দোকানে তাকে বসিয়ে রেখে সে অবৈধভাবে অনলাইনে কাজ করে সে। নাহিদ অন-লাইনে স্কিপ্ট কারেন্সি, জুয়া, অবৈধ ডলার লেনদেন, ক্যাশ আপ সাপোর্ট ইত্যাদির সাথে জড়িত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভ্যানচালক বলেন, নেটে কি ব্যান খেলে নাহিদ। লেখাপড়া করতে করতে আঙুল ফুলে কলা গাছ। কিছুদিন আগে ভাত পেলনা। এখন কিবা করে এসব করিচ্ছে। এটা কি হকের টাকা। এটা কিন্তু হকের টাকা না।

স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, তাদের অবস্থা ভালো ছিল না। নাহিদের দাদা এবং গোলামের বাবা রাইস মিলের ড্রাইভার ছিল। সে পৈতিকভাবে কোনো সম্পত্তি বা নগদ তেমন অর্থ পায়নি। শোনা যায় নেটের কি যেন করে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আগের বউয়ের কোনো দোষ ছিল না, তারপরও টাকা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। তাকে কিছু করতেও দেখিনি। এখন যে দোকান দিয়েছে সেটা লোক দেখানো শো হিসেবে।

তার নানার বাড়ি শ্যামপুর এলাকার একজন বৃদ্ধ বলেন, আমার বাড়ির পাশে কয়েক শতক জমি কিনেছে কিছুদিন আগে। এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে এতো টাকা ইনকাম করছে সে সেটা সত্যিই রহস্যজনক।

আরেক মুরুব্বি একইভাবে বলেন, মোবাইলের মাধ্যমে ডলার ভাঙাচুরা করে নাহিদ। বৈধ পথে এতো তাড়াতাড়ি এভাবে সম্পদের মালিক হওয়া কোনো ভাবেই সম্ভব না। এছাড়া নিজের বাড়ির পাশাপাশি মামার বাড়ির বড় বড় অনুষ্ঠানে নাহিদই খরচ করে। শুনেছি তার মায়ের নামেই অনেকগুলো ব্যাংকে একাউন্ট করে রেখেছে সে, নিজের নামে তো আছেই এগুলো অতি শীঘ্রই জব্দ করা হোক ও তার প্রতিটি ব্যাংক একাউন্ট নজরদারি করা হোক এটাই আমাদের দাবি। মাঝে মাঝে বিভিন্ন দেশে যাতায়াতও করে। এত টাকার মালিক হওয়া বৈধভাবে কখনোই সম্ভব নয়।

স্থানীয় এক ফ্রিলান্সারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি যতদূর জানি সে অবৈধ ডলার লেনদেন, ক্যাশআপ সাপোর্ট, সিপিএ মার্কেটিং এগুলোর সাথে জড়িত, গত দুই- তিন বছরের মধ্যে প্রভাবশালী হওয়ায় তার ভয়ে কেউ মুখ খুলে না। তবে তার মায়ের নামে বেশিরভাগ ব্যাংক একাউন্ট খোলা এবং ভালোভাবে তদারকি করলে তার অবৈধ সম্পদ সব বের হবে। যদি কেউ ফিল্যান্সার হয় তাহলে বাংলাদেশী যে কোন ব্যাংকের মাধ্যমে আয়কৃত রেমিটেন্স তার একাউন্টে নিয়ে আসতে পারবে। ব্যাংকে ডুয়েল কারেন্সি একাউন্ট থাকতে হবে। এছাড়া রেমিটেন্স গ্রহণ করার জন্য যাবতীয় তার বৈধ কাগজপত্র ব্যাংক কৃর্তক জমা নিয়ে তাকে একটি একাউন্ট করে নিতে হবে। সে যদি প্রকৃতপক্ষে ফ্রিল্যান্সার হয় আইডি কার্ডের জন্য আইসিটি মন্ত্রনালয়ে আবেদন করতে হবে। তার পর আইডি গ্রহণ করে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে স্বীকৃতি নিতে হবে।

নাহিদের সেই দোকানের ব্যানারে তার মোবাইল নাম্বার প্রথমে দিলেও সরিয়ে নিয়ে পাশের দোকান ভাই-ভাই কম্পিউটার এন্ড স্টুডিও’র মালিক জাহিদ রানার মোবাইল নাম্বার দেওয়া আছে এটির কারন খুঁজতে জানা যায় জাহিদ ও এগুলোর সাথে জড়িত এবং কিছু মাস আগে প্রায়ই জাহিদের দোকানে রাত্রি যাপন করে তাদের সে কাজগুলো পরিচালনা করেছে। জনমনে সন্দেহ সৃষ্টির পড়ে সেখানে আর তাদের রাত্রিযাপন করতে দেখা যায়নি। এদিকে নাহিদের ২য় বোউ, শাশুড়ি, শ্বশুর আরো কয়েকজনে সাথে নিয়ে মাঝে মাঝে রাজশাহী শহরের একটি অভিজাত ফ্লাটে থাকেন বলেও জানা গেছে।

এ বিষয়ে নাহিদ মুঠোফোনে নাহিদ বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমার প্রথম স্ত্রী থাকাকালীন দ্বিতীয় স্ত্রীর বাবার কাছে থেকে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। অনলাইনে যে ডলার লেনদেন করছেন, সেটা কি বৈধভাবে করছেন এমন প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, সেটা দেখার জন্য প্রশাসন আছে আপনি কে বলেই ফোনের সংযোগ কেটে দেয়।

নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( প্রশাসন ও অর্থ ) গাজিউর রহমান বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার অবৈধ লেনদেনে লেনদেন হলে তা অবশ্যই অপরাধ। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Exit mobile version