‘নাটোরে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে ও নৌকা বিরোধীদের পক্ষ নিলে, তাঁকে নিশ্চিহ্ন করার হুমকি’

আপডেট: ডিসেম্বর ১৬, ২০২৩, ৭:৫৩ অপরাহ্ণ


নাটোর প্রতিনিধি:


নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনের বর্তমান এমপি ও নৌকার প্রার্থী ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীর অনুসারী রুবেল বালির বিরুদ্ধে নৌকার বিপক্ষে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে, ও নৌকা বিরোধীদের পক্ষ নিলে, তাঁকে নিশ্চিহ্ন করার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

ওই এমপির নিজ গ্রাম ভবানীপুরে এক নির্বাচনী প্রস্তুতি সভা থেকে এমন হুমকি দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে এক সভায় রুবেল বালির এমন বক্তৃতা শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে অন্য প্রার্থীরা নির্বাচনী পরিবেশ ও সুষ্ঠু ভোট নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে এমপির ভাগনে জহির উদ্দিন ও রুবেল বালির নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৩৫ যুবক বড়াইগ্রাম উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রউফের দপ্তরে ঢুকে তাঁকে মারধর করে। এ সময় রুবেল বালি আবদুর রউফের ডান হাত কেটে নেয়ার হুমকি দেন।

বড়াইগ্রাম থানার পুলিশ পরিদর্শক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) সিরাজুল ইসলাম জানান, মারধরের অভিযোগ এনে শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রউফ বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় এমপি ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীর ভাগনে জহির উদ্দিন, রুবেল বালিসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় অন্তত ৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।

এ ঘটনার রেশ না যেতেই রুবেল বালির বক্তৃতা ফেসবুকে ছড়িয়েছে। এতে প্রয়াত এমপি আবদুল কুদ্দুসের ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আসীফ আবদুল্লাহ বিন কুদ্দুস শোভনের নাম উল্লেখ করে রুবেল বালি বলেন, ‘যে শোভনের পক্ষে প্রচারণা ও এজেন্ট হবে, সে এলাকায় বাস করতে পারবে না। তার কোনো অস্তিত্ব রাখা হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘শোভন নৌকার পক্ষে কাজ করার অঙ্গীকার করলেও নিজেই স্বতন্ত্র দাঁড়িয়েছেন। ডামির বদলে বিদ্রোহী হয়েছেন। তিনিসহ বিরোধীরা নৌকা ডুবানোর ষড়যন্ত্র করছে।’

রুবেল বালির মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায়। প্রতিবাদ জানিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী শোভন বলেছেন, এমপির কর্মী-সমর্থকরা যে উগ্র আচরণ করছে, তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেবেন বলে জানান তিনি।

দুটি ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান এমপি ডা. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘রুবেল বালিসহ যারা শিক্ষা কর্মকর্তাকে মারধর করেছে, তাদের আমি চিনি না। এসবের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’ রুবেল বালির বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নজরে আসার পর ধরতে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাকে ধরতে পারেনি। একটি মহল সুনাম নষ্ট করতে আমার নাম ভাঙিয়ে নানা ষড়যন্ত্র করছে।’

এদিকে শুক্রবার দুপুরে বনপাড়া আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ডা. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘কারা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢুকে আমার নাম ব্যবহার করে লাঞ্ছিত করেছে, আমি জানি না। সন্ত্রাসী কখনও আওয়ামী লীগের অনুসারী হতে পারে না।’ এ সময় সাংবাদিকরা মারধরে এমপির আপন ভাগনে জামাল, জহির, শামসুদ্দিন ও অনুসারী রুবেল বালি নেতৃত্ব দেন এবং তাদের নামে মামলা হয়েছে জানালে এমপি কোনো মন্তব্য করেননি।

বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ও বনপাড়া পৌর মেয়র কে এম জাকির হোসন বলেন, ‘স্বার্থ হাসিলে এমপি নিজের ভাগনেদেরও চিনছেন না। অভিযোগের বিষয়ে পদক্ষেপ না নিয়ে তিনি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন। যে অবস্থা হয়েছে, তাতে নৌকার ভরাডুবির শঙ্কা বাড়ছে।’

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ