পিছিয়ে পড়া নারীদের এগিয়ে নিতে অনুপ্রেরণার নাম নওগাঁর রাহেলা

আপডেট: এপ্রিল ২৮, ২০২৪, ২:৪১ অপরাহ্ণ


আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি:


পিছিয়ে পড়া নারীদের কাছে এগিয়ে চলার অনুরেপ্ররণার নাম হচ্ছে মোছা. রাহেলা চৌধুরী টফি। কৈশোরে জীবনের অর্থ বুঝে ওঠার আগেই রাহেলাকে জীবন সংগ্রামে নামতে হয়েছিল। অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মাঝেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছেন একজন মানুষ হিসেবে। তিনি সমাজের অবহেলিত মানুষদের পাশে সহযোগিতার বার্তা নিয়ে দাঁড়িয়ে আসছেন।

হাত বাড়িয়েছেন সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের সেবায়। উভয় ক্ষেত্রেই তিনি সফল হয়েছেন। প্রত্যন্ত পল্লীতে জন্মগ্রহণের পর কেবলমাত্র নিজ প্রচেষ্টা ও কর্মদক্ষতার মাধ্যমে বর্তমানে তিনি নওগাঁ জেলার একটি পরিচিত মুখ। সমাজের নির্যাতিত ও পিছিয়েপড়া নারীদের নেতৃত্ব বিকাশের জন্য অনুকরণীয় এক দৃষ্টান্তের সাম রাহেলা। ইতোমধ্যেই সমাজের পিছিয়েপড়া মানুষদের পরম বন্ধুরূপে খ্যাতি অর্জন করেছেন রাহেলা চৌধুরী।

রাহেলা চৌধুরী টফি মহাদেবপুর উপজেলার প্রত্যন্ত জোয়ানপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাক সরদার ও মা মৃত বেগম সুফিনাত জুলফিকার দম্পতির সাধারণ পরিবারে ১৯৭২ সালের পহেলা মার্চে প্রথম সন্তান হিসেবে জন্ম নেন। এরপর তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার কাছে হার মেনে ১৪ বছর বয়সে বদলগাছী উপজেলার বদলগাছী ইউনিয়নের চাকরাইল গ্রামের আব্দুল আউয়াল চৌধুরীর সঙ্গে পারিবারিক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

পরবর্তিতে নিজের স্বপ্নপূরণ করতে স্বামী ও শ্বশুর পরিবারের কারো কাছ থেকে তেমন একটা সহযোগিতা না পেলেও শত বাঁধা উপেক্ষা করে এসএসসি পাশ করেন। নিজের এক ছেলে আর এক মেয়েকে শিক্ষিত করেছেন।
২০১৬ সালে জেলা পরিষদ নির্বাচনে (সংরক্ষিত-২) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি সফল হতে পারেন নি। পরবর্তিতে ২০১৯ অপরাজিতা প্রকল্পের সাথে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আগের চেয়ে নিজের জ্ঞান ও দক্ষতার পরিধি বৃদ্ধি করেন।

জনগণের মাঝে সম্পৃক্ততা বাড়াতে তিনি ২০০১ সাল থেকে সমাজ সেবামূলক কাজের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। নারীর রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, লিগ্যাল এইড প্রাপ্তি ও উঠান বৈঠক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সব সময় তিনি মানুষের পাশেই থাকছেন।

বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের কাছে যোগ্যতা প্রামাণ করে ২০২২ সালের জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৬ নং সাধারণ আসনে সদস্য হিসেবে বিজয়ী হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন রাহেলা। সেই নির্বাচনে তার প্রতিপক্ষ পুরুষ প্রার্থী ১০/১২ লক্ষ টাকা খরচ করেন। কালো টাকা, পেশীশক্তি ও পুরুষতান্ত্রিকতাকে মোকাবেলা করে রাহেলা মাত্র ১ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন। যদি নির্বাচনে কালো টাকা ব্যবহার না হতো তাহলে তিনি কমপক্ষে ৪০ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হতে পারতেন বলে জানান রাহেলা।

রাহেলা বলেন, জেলা পরিষদের সাধারণ আসনে সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে অপরাজিতা প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অপরাজিতা প্রকল্প উৎসাহ, সাহস, তথ্য সহায়তা, অ্যাডভোকেসিসহ প্রচার-প্রচারণায় ব্যাপক সহায়তা করেছে। অপরাজিতা প্রকল্পের স্বপ্নেই আমি জেলা পরিষদের সাধারণ আসনের সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। অপরাজিতা কর্মীগণ গোপনীয়তা বজায় রেখে নির্বাচনে বিজয়ের লক্ষে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার-চেয়ারম্যানদের সঙ্গে অ্যাডভোকেসি করেছেন। আগামীতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে সমাজের অসহায়, গরিব, দুঃখী, পিছিয়েপড়া মানুষদের জন্য আরো বেশি বেশি কাজ করার স্বপ্ন বুনছেন তিনি।

তিনি বর্তমানে বদলগাছী উপজেলা মহিলা আ’লীগের সভাপতি হিসেবে প্রতিটি ইউনিয়নে মহিলা আ’লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে গিয়ে দুই হাজারের অধিক নারীকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করেছেন এবং শতাধিক নারীকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সহায়তায় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বাংলাদেশ আ’লীগের মূল কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করেছেন। রাহেলা চৌধুরী শত শত সালিশি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেন এবং অনেক মামলা ইউনিয়ন অপরাজিতা নেটওয়ার্র্র্র্কের সভাপতির মাধ্যমে গ্রাম আদালতে প্রেরণ করেন।

তিনি স্বপ্ন দেখেন সমতার সমাজ শিগগিরই প্রতিষ্ঠিত হবে। যে সমাজ ব্যবস্থায় নারী-পুরুষ সমান আত্মবিকাশের সুযোগ পাবে। চলমান পুরুষতান্ত্রিকতার পরিবর্তে গড়ে উঠবে বৈষম্যহীন নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক নতুন সমাজ ব্যবস্থা।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ