প্রখর রোদে ছাঁয়ার খোঁজে বেরিয়ে মারা যাচ্ছে বকের ছানা

আপডেট: এপ্রিল ৩০, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:


নীড়ে প্রচণ্ড রোদ্রতাপ। সবে উড়তে শেখা বক ছানারা সেখানে আর থাকতে পারছে না। তাই একটু ছায়ার খোঁজে ডানা মেলছে। কিন্তু পিপাসায় কাতর বাচ্চাগুলো বেশি দূর উড়তে পারছে না। মাটিতে পড়ে মারা যাচ্ছে। গত ৩ দিন হতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরমাণু-চিকিৎসা কেন্দ্রের পাশে এমন ঘটনা ঘটছে বলে স্থানীয়রা জানান।

পরমাণু চিকিৎসা কেন্দ্রের পাশে সোমবারও (২৯ এপ্রিল) অন্তত ১০টি পাখির মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। চিকিৎসা কেন্দ্রের কর্মচারীরা পানি খাইয়ে বকপাখির বাচ্চাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। বন বিভাগের লোকজনও পড়ে যাওয়া পাখিগুলোকে গাছে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। চিকিৎসা কেন্দ্রের কর্মচারীদের মধ্যে কেউ কেউ বক ছানাগুলোকে পানি খাওয়াচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানান, এই এলাকাটিতে দীর্ঘদিন থেকে বক পাখিদের আবাস গড়ে উঠেছে। এখানে পাখিরা বাসা বেঁধে ডিম দেয়। বাচ্চা ফুটলে ও প্রাপ্তবয়স্ক হলে আবার উড়ে চলে যায়। আবার ডিম দেওয়ার সময় ফিরে আসে। বর্তমানে হাসপাতাল চত্বরের গাছে গাছে বক পাখির বাসা রয়েছে। প্রতিটি বাসায় আছে বাচ্চা। সম্প্রতি বাচ্চাগুলো উড়তে শিখেছে। এখন রাজশাহীতে চলছে টানা তাপপ্রবাহ। সদ্য উড়তে শেখা বাচ্চাগুলো এই তাপ সহ্য করতে না পেরে বাসা থেকে উড়ে ছায়াযুক্ত জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। এ সময় পিপাসায় কাতর অনেক বাচ্চা নিচে পড়ে মারা যাচ্ছে।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে হাসপাতাল চত্বরে গিয়ে দেখা গেছে, পরমাণু-চিকিৎসা কেন্দ্রের গাড়িচালক সোহেল, রিপন এবং পরিচ্ছন্ন কর্মচারী বিকাশ পড়ে যায়া ১টি বক ছানাকে পানি খাইয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। স্থানীয় ভাজা বিক্রেতা রোকনুজ্জামান জানান, তিন দিন ধরে গাছ থেকে বকছানা পড়ছে। একটু পানি খাইয়ে দিলেই ঠিক হয়ে যাচ্ছে। তিনি রোববার তিনটি বককে পানি খাইয়ে দিয়েছেন। তারপর উড়ে গেছে।

নাটোরের গুরুদাসপুর থেকে হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসা আবদুল কুদ্দুস জানান, একটা বক তার সামনেই রাস্তায় পড়েছিল। সেটি দেখে তিনি তার বোতল থেকে বাচ্চাটিকে একটু পানি খাইয়ে দিয়েছেন। কিছুক্ষণ পরে বকের বাচ্চাটি একাই উড়ে গেছে।

ওই এলাকায় সাটারিঙের কাজ করছিলেন মিস্ত্রি রজব আলী। তার সামনেই একটি বকছানা নালার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। সেটি দেখে রজব বকটিকে ওপরে তুলে রাখেন। কিছুক্ষণ পরে বাচ্চাটি উড়ে যায়। রজব আলী বলেন, ‘পানিতে পড়ার পরে বকটি সুস্থ হয়েছিল। তাই উড়ে যেতে পেরেছে।’

রাজশাহী বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, পাখি গাছ থেকে পড়ে মারা যাওয়ার খবর পাই গত রোববার। সেদিনই লোক পাঠিয়েছিলাম। পড়ে যাওয়া পাখিরা উড়তে না পারলে উদ্ধার করে রেসকিউ সেন্টারে নিয়ে আসতে বলেছিলাম। কর্মকর্তারা তিন-চারটি পাখিকে শুশ্রূষা দিয়ে সুস্থ করে আবার উড়িয়ে দিয়েছে।

জাহাঙ্গীর কবির বলেন, প্রখর তাপের কারণে সদ্য উড়তে শেখা বাচ্চারা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বাসা ছেড়ে বেরিয়ে আসছে। পরে আর ফিরতে পারছে না। তখন অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ছে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে এখন অতি তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। সোমবার বেলা ৩টায় রাজশাহীতে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এটিই এবারের মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আগের দিন রোববার তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি, শনিবার ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি ও শুক্রবার ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। গত ৩০ মার্চ রাজশাহীতে মাত্র এক মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। ৩১ মার্চ থেকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। সেদিন থেকে কোনো বৃষ্টি হয়নি। তাপমাত্রা বাড়ছেই।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ