বইছে তাপদাহ, বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ II হাসপাতালের শিশু ও মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগির চাপ

আপডেট: এপ্রিল ১৯, ২০২৪, ১২:১৫ পূর্বাহ্ণ


মাহাবুল ইসলাম:


তীব্র রোদ-গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে জনজীবনে। রাজশাহী অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি ও তীব্র তাপদাহ। যার প্রভাব পড়ছে জনস্বাস্থ্যে। জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়াসহ নানা রোগের প্রদুর্ভাব বেড়েছে। ডাক্তারের চেম্বারের বাইরে হাসপাতালে দীর্ঘ হচ্ছে রোগীর সিরিয়াল।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বারান্দায় ‘তিল’ পরিমাণ ঠাঁই নাই। ওয়ার্ডগুলোতে রোগী ঠাসা। একই চিত্র হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে। বহির্বিভাগেও শিশু ও মেডিসিন চিকিৎসকদের চেম্বারের সামনে রোগীদের দীর্ঘ সিরিয়াল দেখা গেছে। মৃতের সংখ্যায় যোগ হচ্ছে হিট স্ট্রোকের রোগী। হাসপাতালের ইনডোর, আউটডোর ও জরুরি বিভাগে রোগীর চাপ যেমন বাড়ছে, তেমনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকেও রোগী বাড়ছে।

রামেক হাসপাতালের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, গত ১৬ এপ্রিল হাসপাতালের আউটডোরে ১৯ জন, ইনডোরে ৩৮ জন এবং জরুরি বিভাগে ৭৮ জন ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। যা গতকাল (১৭ এপ্রিল) আরও বেড়েছে। ১৭ এপ্রিল ১২ বছরের কম বয়সী শুধু শিশু ডায়রিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছে ২৪ জন। ১২ বছরের বেশি শিশু ভর্তি হয়েছে ১৪ জন। যা গত ১৮ এপ্রিল ১২ বছরের কম-বয়সী শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ জনে এবং ১২ বছরের বেশি বয়সী ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু ভর্তি আছে ১৫ জন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অব্যাহত তাপ প্রবাহের কারণে হাসপাতালে চাপ বেড়েছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগে শিশুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন আফরোজা বেগম। তিনি বলেন, তার বাচ্চার বয়স দেড় বছর। গত কয়েকদিন থেকে সর্দি কাশি জ্বরে ভুগছে। এলাকার ফার্মেসি থেকে ওষুধ খাওয়েছেন। কিন্ত সুস্থতা আসে নি। তাই সরকারি হাসপাতালে এসেছেন। কিন্তু এখানে এসে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
জরুরি বিভাগে শিশুকে ভর্তি করেছেন বাঘার বাসিন্দা নুরবানু বেগম। তিনি বলেন, দুই দিন আগে হঠাৎ করে বাচ্চা পাতলা পায়খানা করে। এরপর পায়খানার দ্বার দিয়ে শুধু পানি নামতে থাকে। বাধ্য হয়ে ওইদিন রাতেই হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। এখন অনেকটাই সুস্থ আছে।

চিকিৎসাকরা বলছেন, ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। দূষিত পানি পান করার মাধ্যমে এ রোগ হয়। সাধারণত দিনে তিন বা এর চেয়ে বেশি বার পাতলা পায়খানা হতে শুরু করলে তার ডায়রিয়া হয়েছে বলে ধারণা করা গেছে। গরম পড়লেই ডায়রিয়ার সমস্যা মারাত্মক আকার-ধারণ করে। বিশেষ করে শিশু-কিশোররা এই রোগে-বেশি ভুক্তভোগী হয়।

অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন, যেখানে-সেখানে ও পানির উৎসের কাছে মলত্যাগ, সঠিক উপায়ে হাত না ধোঁয়া, অপরিচ্ছন্ন উপায়ে খাদ্য সংরক্ষণ এবং ঘন ঘন লোডশেডিঙের কারণে এ সময় দোকান, রেস্তোরাঁ বা বাসায় পচন ধরা ফ্রিজের খাবার গ্রহণ ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ। তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের।

রামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, আবহওয়াজনিত কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা রাখা হয়েছে।
রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, উপজেলা পর্যায়েও ডায়রিয়া রোগী আসছে। তবে মহামারি আকার ধারণ করে নি। আসলে মানুষ অস্বাস্থ্যকর খাবার বেশি খাচ্ছে।

রাস্তার ধারের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রতি মানুষের সচেতনতা না বাড়লে ডায়রিয়া মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাবে। আমরা চিকিৎসার পাশপাশি সচেতনতামূলক কার্যক্রমও উপজেলায় চালাচ্ছি।