বদলগাছীতে ডিসি ইউএনওর নির্দেশনা উপেক্ষা করে চলছে হাটে বাজারে অতিরিক্ত টোল আদায়

আপডেট: এপ্রিল ২৫, ২০২৪, ৮:০৮ অপরাহ্ণ

বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি:


নওগাঁর বদলগাছী হাটে বাজারে অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধে ডিসি ইউএনওর নির্দেশনা উপেক্ষা করে চলছে অতিরিক্ত টোল আদায়। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলছে কিন্তু কে শোনে কার কথা। প্রতিটি হাট বাজারে টোল আদায়ে যেন হজবরল অবস্থা। কোনো ইজারাদার মানছে না টোল আদায় নীতিমালা, মানছে না ডিসি ইউএনওর নির্দেশ দেয়া চিঠি।

এলাকা ঘুরে জানা যায়, দীর্ঘ দিন থেকে অতিরিক্ত টোল আদায় ও কৃষক হয়রানি বন্ধে প্রতিবাদ করে আসছে এলাকাবাসী। পত্র পত্রিকায় লেখালেখি চলছে বছরের পর বছর। কোনো প্রতিকার পায়নি কৃষক। সরকারি নীতিমালা অনুসারে কোনোক্রমেই দুপক্ষের কাছ থেকে টোল নেয়া যাবে না। টোল নিতে হলে রশিদ দিতে হবে। রশিদে তারিখ, টাকার পরিমাণ ও পণ্যের নাম উল্লেখ থাকতে হবে। রশিদ বইতে হুবহু কপি সংরক্ষণ করতে হবে। হাটে খোলা জায়গায় রেট চার্ট ঝুলাতে হবে। হত দরিদ্র অথবা কোনো রকমে দিনানিপাত করে এমন কোনো ভাসমান, অস্থায়ী দোকান থেকে টোল নেয়া যাবে না।

নওগাঁ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলা ১৪২৯ সনে সর্বশেষ অনুমোদিত টোল রেট তরকারী, পটল, বেগুন, মুলা, সিম, লাউ, কপি ইত্যাদি কৃষিজাত শাকসবজি, মহিশের গাড়ি, গরুর গাড়ি প্রতি টোল ১৫ টাকা, টমটম গাড়ি প্রতি ১২ টাকা, তরকারি দোকান প্রতি (বড়) ১২ টাকা, ছোট দোকান ৭ টাকা, রবি শস্য মশুর, ছোলা, অড়হড়, মুগ, মাসকালাই, খেসারি মণ প্রতি ৭ টাকা, গরু, মহিশের গাড়ি ৪ মণ পর্যন্ত ১২ টাকা, ৪ মণের উর্দ্ধে হলে ১৪ টাকা, আলু, ধনে, পেঁয়াজ, আদা মণ প্রতি ৮ টাকা, গাড়ি ৪ মণ পর্যন্ত ১৪ টাকা, তার উর্দ্ধে হলে ২০ টাকা, খাজা, মুড়ি, মুড়কি, ভাজা, বাদাম ঝুড়ি, চানাচুর দোকান প্রতি ৫ টাকা, গুড় মণ প্রতি ৮ টাকা, মাছ মণ বা ২ ডালি হলে ১২ টাকা, ডালি প্রতি ৫ টাকা, মুদির দোকান প্রতি ৮ টাকা, গরু, মহিশ, ঘোড়া ৫০০ শত টাকা, ছাগল, ভেড়া প্রতি ২০০শত টাকা, ক্রেতার কাছ থেকে টোল আদায় করতে হবে। নীতিমালা উপেক্ষা করে আদায় করা হয় ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে যেন মগের মল্লুক।

গত পহেলা বৈশাখ থেকে সরকারি নীতিমালা অনুসারে টোল আদায় করতে প্রতিটি হাট ইজারাদারকে ডিসির আদেশ মোতাবেক ইউএনও সর্বশেষ অনুমোদিত টোল রেট নীতিমালা সংযুক্ত করে গত ৯ এপ্রিল চিঠি দেন। পহেলা বৈশাখ থেকেই ইউএনওর চিঠি উপেক্ষা করে হাটে হাটে চলছে অতিরিক্ত টোল আদায়ের প্রতিযোগিতা। শনিবার (২০ এপ্রিল) বদলগাছী হাটে সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহকালে কোথাও কোনো রেট চার্ট ঝুলানো দেখা যায়নি। সুবলডাঙ্গা গ্রামের কৃষক রহিম জানান ৮৩ কেজি আলু বিক্রি করেছে, টোল নিয়েছে ২০ টাকা হারে এবং ঝাড়ুদার নিয়েছে ১০ টাকা করে। একই কথা বললেন পটল বিক্রেতা জালাল। ব্যবসায়ীরা টোলের টাকা কেটে নিয়ে বেগুন, পটলের মূল্য পরিশোধ করে কৃষদের।

পটল, আলু ব্যবসায়ী বাবু, আনোয়ার, মোস্তফা জানান হাট ইজারাদারের নির্দেশে কৃষকের কাছ থেকে ২০ টাকা হারে টোল কাটে তারা। হাটে দেখা হয় হাট ইজারাদার জনির সঙ্গে অতিরিক্ত টোল আদায় বিষযে জানতে চাইলে ইউএনওর চিঠি পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে তিনি জানান কৃষকের কাছ থেকে টোল নেয়া হচ্ছে না। নেয়া হয় ব্যবসয়িী বা ক্রেতার কাছে। ৬০ কেজি ওজনের এক বস্তা পটল, আলু, বেগুনের জন্য টোল নেয়া হয় ৩০ টাকা। ১২০ কেজি ওজনের বস্তা হলে নেয়া হয় ৫০ টাকা। মঙ্গলবার কোলার হাটে তথ্য সংগ্রহকালে বলরামপুর গ্রামের কৃষক সোহাগ জানায় ৩২ কেজি পটল এনেছিল। টোল নিয়েছে ২০ টাকা। আরো অর্ধশতাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা একই কথা জানায়। ব্যবসায়ী আতোয়ার বলেন, প্রতি হাটে ৫০/৬০ মন পটল কিনে।

ইজারাদারের নির্দেশে কৃষকের কাছে ২০ টাকা হারে টোল কাটা হয়। এটা বর্তমানে ডিজিটার নিয়মে পরিণত হয়েছে প্রশাসন বন্ধ করতে না চাইলে আনারা লিখে কোনো লাভ হবে না। ওই ব্যবসায়ী আরো বলেন, পাশর্^বর্তী থিলকপুর হাটে কৃষকদের কাছ থেকে কোনো টোল কাটা হয় না। অতিরিক্ত টোল আদায়ে প্রতিবাদ জানিয়ছে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবু খালেদ বুলু। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সামসুল আলম খান অতিরিক্ত টোল আদায় ও কৃষক হয়রানি বন্ধে সম্প্রতি জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে জেলা প্রশাসকের আদেশে ইউএনও অতিরিক্ত টোল আদায় বা দুপক্ষের কাছ থেকে টোল আদায় বন্ধ করে নীতিমালা অনুসারে টোল নিতে চিঠি দিয়ে নির্দেশ দেন হাট ইজারাদারদের। কেন নির্দেশ অমান্য করে অতিরিক্ত টোল নেয়া হচ্ছে এবং কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান সোহাগ (অ.দা.) জানান নির্দেশ অমান্য করলে হাট ইজারা আইন অনুসারে ইজারাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ