বিদায়ী বছরে যাদের হারিয়েছে রাবি পরিবার

আপডেট: ডিসেম্বর ২৮, ২০২৩, ১১:১২ অপরাহ্ণ


রাবি প্রতিবেদক:


দেখতে দেখতে আরেকটি বছর আমাদের মধ্য থেকে বিদায় নিতে চলেছে। নতুন বছরে জীবনটাকে একটু ভিন্নভাবে সাজানোর পরিকল্পনাও হয়তো করে ফেলেছেন অনেকেই। কেও হয়তো নিজের প্রিয়জন হারিয়ে অগোছালোও হয়েছেন খানিকটা। কেউবা থেমে গিয়েও নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছেন নতুন বছরে।

বিদায়ী এই বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হারিয়েছে বেশকিছু মেধাবী শিক্ষার্থী, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এবং একজন কর্মচারী। যারা আর ফিরবে না আমাদের মধ্যে। পরিচিত সেই মুখগুলো চিরদিনের জন্য পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে। একটু পেছনে ফিরে দেখা যাক। তাদের নিয়েই আজকের প্রতিবেদন।

চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী সাইমা আরাবী ইভা। ১৯ জানুয়ারি অতিরিক্ত ঔষধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পরদিন ২০ জানুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। রাজশাহীর কর্ণহার থানার দেবেরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি।

২০২০-২১ সেশনের ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী এস এম আব্দুল কাদির শরিফ। ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে রাজশাহী নগরীর অক্ট্রয় মোড় সংলগ্ন ষষ্ঠীবাড়ি ছাত্রাবাস থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার রঘুনাথপুর এলাকার মোখলেছুর রহমানের ছেলে।

পরদিন ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ী এলাকায় ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের ২০২০-২১ সেশনের আবু সাঈদ ওসামা মারা যান। বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বুধপাড়া এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে তিনি।

লোক প্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তানভীর ইসলাম। ৮ জুন দিবাগত রাতে বিনোদপুর এলাকার একটি ছাত্রাবাস থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সেসময় কক্ষ থেকে একটি চিরকুট পাওয়া যায়। উদ্ধার করা চিরকুটের একটি লাইন ছিল, ‘শেষমেষ একাকিত্ব আমাকে গিলে খেলো।’ নীলফামারী সদর থানার কাঞ্চন পাড়ার আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে তিনি।

২০১৭-১৮ সেশনের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের ফরহাদ হোসেন রনি। ২ অক্টোবর ঢাকায় মিরপুরের একটি মেসে মারা যান এই শিক্ষার্থী। তার বাড়ি কুমিল্লা জেলায়।

৯ ডিসেম্বর রাতে প্রাইমারি নিবন্ধন পরীক্ষা শেষ করে বাড়ি থেকে হলে ফেরেন ২০১৭-১৮ সেশনের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী ফুয়াদ আল খতিব। পরদিন ১০ ডিসেম্বর বিকেলে শহিদ শামসুজ্জোহা হলের নিজ কক্ষ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে হল প্রশাসন। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম রাজিবপুর গ্রামের আমিনুল ইসলাম সাজুর ছেলে তিনি।

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক জমসেদ আলী সরকার। ১৯৮০ সালে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন এবং ২০১৫ সালে অবসর গ্রহণ করেন। কর্মজীবনে অধ্যাপনা ছাড়াও রাবি ছাপাখানার প্রশাসকসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দায়িত্বও পালন করেন। ১৯ জুলাই ভোরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন এই অধ্যাপক।

৭ আগস্ট অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক শাহ্ মুহম্মদ হাবীবুর রহমান ইন্তেকাল করেন। ১৯৭০ সালে শিক্ষকতায় যোগ দেন এবং ২০১২ সালে অবসর গ্রহণ করেন। রাবির নির্বাচিত সিনেট, সিন্ডিকেট ও ফাইন্যান্স কমিটির সদস্য, বিভাগীয় সভাপতি ও দুই দফায় জনসংযোগ দফতরের প্রশাসকসহ অন্য কয়েকটি দায়িত্ব পালন করেন এই অধ্যাপক।

আরবি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মু. নকীবুল্লাহ। ১৪ সেপ্টেম্বর ভোরে স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। অধ্যাপনা জীবনে তিনি বিভাগীয় সভাপতিসহ অন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। আরবি ছন্দ বিজ্ঞান, আরবি অলংকারশাস্ত্র ও আমেল শতক গ্রন্থের প্রণেতাও তিনি।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সৈয়দ কামাল মোস্তফা। ১৮ সেপ্টেম্বর ভোরে স্থানীয় পদ্মা আবাসিক এলাকায় নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। ১৯৭২ সালে শিক্ষকতায় যোগ দেন ও ২০১৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন তিনি।

ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আহসান হাবীব। ১২ অক্টোবর ভোরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি। ১৯৯৪ সালে রাবি ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রযুক্তি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন ও ২০০৬ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন।

গত ৪ ডিসেম্বর নিজ বাড়ির বাথরুম থেকে রাজন কুমার নামে এক কর্মচারীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের সদস্যরা। বাসা নগরীর রাজপাড়া থানার লক্ষ্মীপুরের বাকির মোড় এলাকায়। তিনি উপাচার্যের বাসভবনে সুইপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ