বিনা যুদ্ধে হার মানতে নারাজ সুনক

আপডেট: জুলাই ২, ২০২৪, ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ


সোনার দেশ ডেস্ক :


নব্বই মিনিটের শেষ মাথায় পৌঁছে গোল শোধ। এক্সট্রা টাইমের দু’মিনিটের মধ্যে বিপক্ষের গোলে বল ঢুকিয়ে ছিনিয়ে নেওয়া জয়। ইউরোর টানটান উত্তেজনা মনে করিয়ে দেয়, ফুটবলের মতোই জীবনেও যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ লড়াই। স্লোভাকিয়ার বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের অবিশ্বাস্য লড়াই রুখে দাঁড়ানোর সাহস জুগিয়েছে অগ্নিপরীক্ষার দিকে এগিয়ে যাওয়া সুনককে।

রবিবার রাতের ইউরো ম্যাচের উত্তেজিত মুহূর্তে নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় সুনক পোস্ট করেন, ‘ইটস নট ওভার আনটিল ইটস ওভার’, অর্থাৎ, শেষ না দেখে ছাড়বো না। বলা যায় আর ৭২ ঘন্টা পর তাঁর ভাগ্য নির্ধারণের আগে জনতাকে বুঝিয়ে দিলেন শেষ মিনিট পর্যন্ত দাঁত কামড়ে রাজনৈতিক লড়াই চালিয়ে যাবেন। যতই জাতীয়-আন্তর্জাতিক-আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যমে তাঁর হার নিয়ে গণনা ঘোষণা করে দেওয়া হোক। ৮ জুলাই পর্যন্ত তিনি জমি আঁকড়ে থাকবেন।

ভোট পূর্ববর্তী সমীক্ষা বলছে ঋষি সুনকের কনজারভেটিভ দল পার্লামেন্টের ৬৫০টি আসনের মধ্যে স্রেফ ৫৩টি আসন পাবে। ৭২ শতাংশ জনতা কনজারভেটিভ বা বর্তমান শাসক দল বিরোধী মনোভাব পোষণ করছেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এর কারণ গোটা নির্বাচনী প্রচার ঋষি সুনক কতটা অযোগ্য সেটাকে কেন্দ্র করে সাজানো হয়েছে।

কিন্তু গত ১৪ বছর ধরে কনজারভেটিভ পার্টির একের পর এক অপদার্থতা এই বিদ্বেষের মূলে রয়েছে। ঋষি সুনক শুধুমাত্র সেই বিষোদগারের প্রাপক। মানুষ এখন স্রেফ বদল চাইছেন, বদলের ভাল–মন্দ সম্পর্কে কারোর বিশেষ আগ্রহ নেই। অবশ্য সুসংহত পরিবর্তন নিয়ে বিরোধীদের সেরকম পরিকল্পনাও নেই। এটা শুধুই দোষারোপ ও পাল্টা দোষারোপের পালা।

ব্রেক্সিট ভোটের সময় থেকেই টালমাটাল চলছে ব্রিটেনে। ইউরোজোনের আর্থিক মন্দা ব্রিটেনের বাজারে বিরূপ প্রকোপ ফেলে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এসেও দেখা যায় সেই মন্দার ঢেউ থেকে বাঁচবার পরিপক্ক উপায় নেই ব্রিটেনের কাছে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পদত্যাগ করে জানান ব্রেক্সিট তিনি সামলাতে পারবেন না।

ব্রেক্সিট সামলানোর দায়িত্ব পরে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র কাঁধে। অর্থনৈতিকভাবে সফল ও কৌশলগত ব্রেক্সিট নিয়মাবলী কার্যকরী করতে ব্যর্থ হন মে। আসরে নামেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। সাধারণ নির্বাচনে বিরোধী লেবার দলের থেকে ৮০ টি আসন সেবার বেশি পেয়েছিল জনসনের কনজারভেটিভ। সেই সরকারে বাঁধ সাধলো কোভিড।

কোভিডকালে নিয়ম লঙ্ঘন করে বাসভবন ও সংসদ চত্বরে মোচ্ছব করার স্ক্যান্ডালে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন জনসন। তাঁর ক্যাবিনেটে অর্থসচিব বা চ্যান্সেলর সুনক কিন্তু কোভিডকালে অর্থনৈতিক ছাড় ও ব্যবসায়িক সুবিধার মাধ্যমে ব্রিটিশ ইকোনমির চাকা সচল রাখেন। জনসন পরবর্তী সময় সর্বকালের স্বল্প মেয়াদকালের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস ব্রিটেনের হাল ধরেন।

দেখা যায় ফ্রিজে রাখা লেটুস পাতা সরকারের চেয়ে বেশিদিন টিকে গেছে। ঠিক এই কারণেই ব্রিটেনের রাজনৈতিক সাংবাদিকতার মহলে ঋষি সুনককে পরিত্রাতা ও পরিস্থিতির শিকার বলে উল্লেখ করা হয়। বিশ্লেষকরা বলেন, টোরি (কনজারভেটিভ দলের ডাক নাম) পার্টির নামজাদা খেলোয়াড়রা কেউ কেন সামনে আসছে না দলের এই দুর্দিনে?

ডেভিড ক্যামেরন বিদেশ সচিব হয়ে ফিরে এসেছেন। আপাতত তাঁর একমাত্র অ্যাচিভমেন্ট তিনি লর্ড উপাধি পেয়েছেন। বরিস জনসন পেপারের কলামনিস্ট। লিজ ট্রাস আমেরিকার ইনফোটেনমেন্টে মন দিয়েছেন। টেরেসা মে মাঝে মধ্যে টিভিতে মন্তব্য করেন। কেউই কিন্তু দলের উদ্ধারে এগিয়ে আসেননি। ঋষি সুনক নিজের কেন্দ্র নর্থ ইয়র্কশায়ার থেকেই হয়তো হেরে যাবেন।

কারণ একমাস আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্তিম দিন ডি–ডে উদযাপনে তিনি নরম্যান্ডি না গিয়ে টিভিতে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন। ব্রিটিশ অহং এর সূক্ষ্ম জায়গা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ জয়। আর সুনকের কেন্দ্রতে বেশিরভাগ পরিবার সেনার সঙ্গে যুক্ত। যাদের এক বা দুই প্রজন্ম যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছে। সেখানে ডি–ডে উদযাপন মিস করা আর বসে নিজের ডাল কাটা একই জিনিস।

তেমনই অক্টোবর–নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচন ঘোষিত হলে মূল্যবৃদ্ধি কিছুটা হ্রাস থাকতো। সে ক্ষেত্রে পাবলিক সেন্টিমেন্ট কিছুটা হলেও সরকারের দিকে যেত। কিন্তু তা না করে সুনক হঠাৎ করেই জুলাইয়ে নির্বাচন ঘোষণা করলেন।

কানাঘুষো খবর, ইংলিশ চ্যানেলের তীরে এতো অভিবাসী বোঝাই নৌকা ভিড়ছিল যে পরিযায়ী ইস্যুতে সুনক আর ঝুঁকি নিতে চাননি। এর পর নির্বাচনের দিনকে কেন্দ্র করে জুয়া ও বাজি ধরার অভিযোগ ওঠে টোরি সাংসদদের উপর। এবং তা প্রমাণিত। কাজেই বিশেষজ্ঞদের মতে, দলের অন্দরেই অন্তর্ঘাতের স্পষ্ট ছাপ। তাই ৫ ফুট ৬ ইঞ্চির ভারতীয় জামাই চক্রব্যূহ ভেদ করবেন কী করে?
তথ্যসূত্র: আজকাল অনলাইন

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ