বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় তৃতীয় পাবনার সুদীপ্ত

আপডেট: মার্চ ২২, ২০২৪, ৪:১৬ অপরাহ্ণ

বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় তৃতীয় পাবনার সুদীপ্ত
শাহীন রহমান, পাবনা:


‘বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল আমি বড় হযে ডাক্তার হবো। কিন্তু আমার দুই বোনের ইচ্ছা আমি যেন বুয়েটে পড়ি। সেই থেকে মনের মধ্যে প্রকৌশলী হওয়ার জন্য স্বপ্ন বুনতাম করতাম। বুয়েটে পড়ার স্বপ্ন দেখতাম। সেই লক্ষ্য নির্ধারণ করে পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। আজ সে স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় খুব খুশি।’
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুপুরে পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার বাসায় বসে এভাবেই নিজের অনুভূতির কথা জানাচ্ছিলেন সুদীপ্ত পোদ্দার। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন তিনি।

ওই মহল্লার বাসিন্দা প্রবীর কুমার পোদ্দার (স্বপন) ও মিতু পোদ্দার দম্পতির একমাত্র ছেলে সুদীপ্ত পোদ্দার। দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে সুদীপ্ত সবার ছোট। বাবা ব্যবসায়ী ও মা গৃহিণী। তার এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত সুদীপ্ত ও তার পরিবার। সেইসাথে খুশি তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষকরা।

নিজের এই সাফল্যের পেছনে তার বাবা-মা, বোন ও শিক্ষকদের অবদান রয়েছে বলে জানান সুদীপ্ত। ভবিষ্যতে একজন প্রকৌশলী হয়ে দেশ ও মানুষের সেবা করতে চান সুদীপ্ত।

আলাপকালে জানা যায়, তাদের পৈত্রিক নিবাস পাবনার বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানার ভবানীপুর মাসুমদিয়া গ্রামে। সন্তানদের লেখাপড়ার সুবাদে ২০১৩ সাল থেকে তাদের বসবাস পাবনা শহরে। লেখাপড়ায় তারা তিন ভাই বোন অত্যন্ত মেধাবী।

বড় বোন শর্মিতা পোদ্দার ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে কেমিস্ট্রিতে মাস্টার্স করে সংসারী হয়েছেন। আর ছোট বোন স্বর্না পোদ্দার পাবনা সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজে একাউন্টিং এ মাস্টার্স শেষ করে বিসিএস প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর সবার ছোট সুদীপ্ত পোদ্দার বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় সারাদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান অধিকার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

সুদীপ্ত জানান, ‘দুই বোনের উৎসাহে ছোটবেলা থেকেই বুয়েটে পড়ার স্বপ্ন দেখতাম। সেই লক্ষ্য স্থির করে চালিয়ে গেছি পড়াশোনা। অবশেষে স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় খুব খুশি। ভবিষ্যতে ভাল প্রকৌশলী হিসেবে দেশ ও মানুষের সেবা করতে চাই। আমার সাফল্যের পেছনে বাবা-মা, বিশেষ করে দুই বোনের অবদান সবচেয়ে বেশি। শিক্ষকরাও সবসময় অনুপ্রাণিত করেছে।’

সুদীপ্ত পোদ্দার জানান, ‘পড়াশোনায় আমার কোনো নির্ধারিত সময় ছিল না। নির্ধারণ করে প্রতিতিন যে ১২ ঘণ্টা, ১০ ঘণ্টা পড়তে হবে তা কখনই ভাবিনি। যখন মনে হয়েছে আজ আমার এই পড়াটুকু শেষ করতে হবে। সেটা নির্ধারণ করে পড়াশোনা করেছি। আর নিজের ওপর আস্থা ছিল।’
সুদীপ্তর বাবা-মা প্রবীর কুমার পোদ্দার (স্বপন) ও মিতু পোদ্দার বলেন. ‘ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী।

পড়াশোনার বাইরে কোথাও কিছু করতো না। ওকে কখনও পড়ার জন্য বলতে হয়নি। কেজি স্কুল থেকেই সে এইসএসসি পর্যন্ত বরাবর প্রথম হয়ে আসছে। সৃষ্টিকর্তার কাছে চাইতাম, ছেলেটার পরিশ্রমে ফল যেন দেন। আজ সেই চাওয়া পূরণ হয়েছে। আশা করি ভবিষ্যতে সে মানুষের মতো মানুষ হয়ে দেশ আর মানুষের সেবা করবে।’

সুদীপ্তর ছোট বোন স্বর্না পোদ্দার বলেন, ‘আমি জানতাম আমার ভাইটা প্রথম তিনজনের মধ্যে থাকবে। ওর উপর আস্থা ছিল, ও পারবে। তৃতীয় হওয়ায় অন্যরকম আনন্দ লাগছে। মনে হচ্ছে আমরা সবাই এই সাফল্য অর্জন করেছি। সুদীপ্ত যেহেতু বরাবর ক্লাসে এক নাম্বার ছিল। ভবিষ্যতেও সব কাজে যেন এক নাম্বারই থাকে।’

এ বিষয়ে সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মাহবুব সরফরাজ বলেন, ‘আমাদের জন্য অনেক আনন্দের খবর। যারা বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার সুযোগ পায় তারা স্কুল লেভেল থেকেই ভাল ছাত্র। সেই ভালটাকেই আমরা যত্ন নিতে পারছি, এটা আমাদের জন্য তৃপ্তির জায়গা। এটা কারো একার কৃতিত্ব নয়। মূল কৃতিত্ব শিক্ষার্থীর অবশ্যই। তার বাবা-মা, শিক্ষক আমরা সহায়ক ভূমিকা পালন করেছি।’

উল্লেখ্য, পাবনা জেলা স্কুল থেকে অষ্টম ও দশম শ্রেণি এবং সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন সুদীপ্ত। আর সবগুলো পরীক্ষাতেই গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছেন তিনি। তার মতো একই কলেজের আরো ৫ জন শিক্ষার্থী বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ