‘সমাজ থেকে মাদক ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করাই আমার লক্ষ্য’

আপডেট: মে ৬, ২০২৪, ৮:৪৫ অপরাহ্ণ


শিবগঞ্জ সংবাদদাতা সফিকুল ইসলাম:


আমার স্বপ্ন আমার দেশ ও সমাজ থেকে কুসংস্কার দূর করে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, মাদকমুক্ত সমাজ ও অসহায় ও হতভাগা নারীদের মাঝে শিক্ষার ছড়িয়ে দিতে চাই। বাংলাদেশকে সোনার দেশে পরিণত করতে হলে সুশিক্ষিত নাগরিক দরকার। আর সুশিক্ষিত নাগরিক হতে হলে অবশ্যই মাদক ও বাল্যবিয়ে মুক্ত সমাজ দরকার। তাই আমার স্বপ্ন কারাতে প্রতিযোগিতায় শুধু দেশেই নয়, বিশ্ব বিজয়ী হয়ে আমি এ তিনটি কাজ করবো।

কথাগুলো বললেন কারাতে প্রতিযোগিতায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে প্রায় ২৩টি স্বর্ণপদক, পাঁচটি তাম্র পদক ও ৬টি রৌপ্য পদক প্রাপ্ত রোকিয়া খাতুন। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের অজোপাড়া বাগদুর্গাপুর গ্রামের হতদরিদ্র রিক্সাচালন মো. মোন্তাাজ আলির ও গৃহিণী মোসা. শাহাজাদী বেগমের কন্যা রোকিয়া খাতুন। তিনি জানান, ২০১৪ সালে কানসাট উচ্চবিদ্যালয় হতে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে আর্থিক অনটনের কারণে অনেকের কাছে সাহায্য প্রার্থী হয়ে ব্যর্থ হওয়ায় অবশেষে পিতার শেষ সম্বল রিক্স্রা বিক্রি করে ফরম পূরণ করে উত্তীর্ণ হই। কিন্তু পিতার উপার্জনের একমাত্র হাতিয়ার রিক্সাটি বিক্রি করার পড়ার খরচ বহন করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন।

এ অবস্থায় আমি চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুটি ছাত্রবাসে ঝি-এর কাজ করে যে সামান্য আয় করতাম’ তা দিয়ে আমি লেখাপড়ার খরচ বহন করতাম। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্রীড়া সংস্থাকে খেলাধূলায় অধ্যয়ন করতাম। এ সময় আমাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার বশির উদ্দিন। এভাবে লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্লাবে অধ্যয়ন করার সময় প্রথমে আমি ২০১৫ সালে চতুর্থ বেগম ফজিলাতুন নেশা মুজিব আন্তর্জাতিক মার্শাল আর্ট প্রতিযোগিতায় কারাতে অংশগ্রহণ করে প্রথম স্বর্ণপদক লাভ করি। ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোট ৩৬ আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হই। এর ২৩টিতে স্বর্ণপদক, পাঁচটিতে তাম্রপদক ও ছয়টিতে রৌপ্য পদক অর্জন করি।

সকলের দোয়ায় আামি আরো অনেক দূর অগ্রসর হতে পারবো বলে বিশ্বাস করি। রোকিয়া আরো বলেন, দিনমজুরের ঘরে জন্ম গ্রহণ করে নিজেকে গড়া কত কঠিন দিনমজুর পিতাই ভাল জানেন। আমার পণ আমি পিতার আদর্শকে লালন করে হতদরিদ্র ঘরের জন্ম গ্রহণকারী কন্যা সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে মাদক ও বাল্যবিয়ে মুক্ত সমাজ গঠন করবো। রোকিয়ার রিক্সা চালক পিতা মোন্তাজ আলি বলেন, আমি পাঁচ সদস্যের একটি পরিবার নিয়ে এরশাদ সরকারের দেয়া এক টুকরো জমির ওপর ভাঙ্গা ঘরে বাস করলেও আমি ও আমার পরিবার মহাখুশি। কারণ অনেকেই কোটিপতি হয়েও কেউ একটি সন্তান মানুষ করতে পারে না।

আমি একজন রিক্সাচালক হলেও আমার মেয়ে বিশ্ব বিজয়ী হতে চলেছে। তার মা শাহাজাদী বেগম বলেন, আমি মা হিসাবে গর্বিত। যখন শুনি আমার মেয়ে বিদেশের মাটিতে খেলায় অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়েছে। তখন আমি অত্মহারা হয়ে যাই। আমি গরিব হলেও গর্বিত মা। কানসাট সোলেয়মান ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. সফিকুল ইসলাম, কানসাট উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন, আহাদ আলি, পারভিন বেগম ও নার্গিস বেগম জানান, রোকিয়া খাতুন শুধু কানসাটের গর্ব নয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গর্ব। কারণ তার কারণেই আজ কানসাট সহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাম বিশে^র কাছে পরিচিত লাভ করেছে।

কানসাট ইউপি চেয়ারম্যান সেফাউল মুলক বলেন, একমাত্র রোকিয়ার মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে কানসাটের গর্ব ফুটে ওঠায় আমরা আনন্দিত। এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আমাদের সহযোগিতা সব সময় থাকবে। শিবগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, একমাত্র রোকিয়াই প্রমাণ করতে পেরেছে যে মনোবল থাকলে নিম্ন বিত্তের ঘরের মেয়েরা অধ্যবসায়ের মাধ্যমে বিশ্ব জয় করতে পারে। রোকিয়া খাতুন শুধু কানসাট শিবগঞ্জের নয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় অদ্বিতীয়। তিনি অচিরেই তার সাফল্য দিয়ে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোতে কারাতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশের নাম উজ্জল করবে। দৈনিক ইত্তেফাকের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি রানী হাট্টি উচ্চবিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা তমলিম উদ্দিন বলেন, রোকিয়া আমাদের গর্ব,আমাদের অহংকার।মিডিয়া জগতের অনুপ্রেরণা। আমাদের উচিত তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ