রাজশাহীতে হাজারও ডাকটিকিটের প্রদর্শনী

আপডেট: মে ৫, ২০২৪, ১১:৩৫ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:


ডাকটিকিট। কোনোটি কাগজের, কোনোটি কাঠ, প্লাস্টিক বা স্বর্ণের। আবার কোনোটি টিন ও কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। চোখে না দেখলে ভাবাই যায় না যে কাঠ, প্লাস্টিক বা স্বর্ণ দিয়ে তৈরি ডাকটিকিটের একসময় প্রচলন ছিল।

শুধু তাই নয়, দেশিসহ বিভিন্ন দেশের ১ হাজারের বেশি ডাকটিকিট নিয়ে হচ্ছে ‘বরেন্দ্রপেক্স ২০২৪’ শীর্ষক ডাকটিকেট প্রদর্শনী। রোববার (৫ মে) রাজশাহী নগরীর একটি হোটেলে বরেন্দ্র ফিলাটেলিক সোসাইটির উদ্যোগে শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী চলবে সেমবার (৬ মে) পর্যন্ত।

বরেন্দ্র ফিলাটেলিক সোসাইটি নামের একটি সংগঠন রাজশাহীর নানকিং দরবার হলে ‘বরেন্দ্রপেক্স-২০২৪’ শিরোনামে প্রদর্শনীটির আয়োজন করেছে। রোববার (৫ মে) সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। বিশিষ্ট ডাকটিকিট সংগ্রাহক ও ডাকটিকিট গবেষক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, বাংলাদেশ ডাক বিভাগের পোস্টমাস্টার জেনারেল (উত্তরাঞ্চল) কাজী আসাদুল ইসলাম, রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি বিজয় বসাক।

রাজশাহীর এই প্রদর্শনীতে দুষ্প্রাপ্য ডাকটিকিট যেমন প্রদর্শন করা হচ্ছে তেমনি তা কেনারও সুযোগ রয়েছে। আর প্রদর্শনীর স্থান থেকেই রয়েছে চিঠি পোস্ট করার সুযোগ-সুবিধা। আর এ জন্য ডাকবিভাগের উদ্যোগে অস্থায়ী পোস্ট অফিসও করা হয়েছে সেখানে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদর্শনী উপলক্ষে ডাকবিভাগ ‘বরেন্দ্রপেক্স-২০২৪’ নামে দুই দিনের জন্য বিশেষ একটি খামও এনেছে।

এছাড়া ডাকবিভাগের পক্ষ থেকে দুটি সিলমোহর দেওয়া হয়েছে প্রদর্শনী উপলক্ষে। এই ডাকটিকিট প্রদর্শনীতে সারা দেশ থেকে বাছাই করা ২৫ জন ডাকটিকিটের সংগ্রাহক তাদের সংগ্রহ প্রদর্শন করছেন। পাশাপাশি তারা তাদের ডাকটিকিট বিক্রিও করছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের প্রথম চিঠি লেখার খাম ও ডাকটিকিট। এছাড়া বর্তমান সময়ের খামও রয়েছে। রয়েছে ব্রিটিশ আমলের ডাকটিকিট, অ্যারোগ্রাম। ২৫ জন সংগ্রাহকের ডাকটিকিট নিয়ে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এই প্রদর্শনীতে বঙ্গবন্ধু, ক্রিকেট, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ অনান্য নারী, পাখি, বিভিন্ন দেশের পতাকা, পোস্ট কার্ড রয়েছে। প্রদর্শনীতে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, চিন, সৌদি আরব, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, ফিজি, মালোয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও নেপালসহ বিভিন্ন দেশের ডাকটিকিট রয়েছে।

আয়োজকদের দাবি- স্মারক ডাকটিকিট একটি দেশ, জাতি ও সভ্যতা সম্পর্কে যে তথ্য দেয় তা অন্যভাবে তা পাওয়া যায় না। স্মারক ডাকটিকেটের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম অতীতের জীবনধারা, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসকে আত্মস্থ করার সুযোগ পায়। ডাকটিকিট সংগ্রহ একটা বড় শখ ও নেশা।

ডাকটিকিটের প্রদর্শনী দেখতে আসা সুমাইয়া ইসলাম বলেন, একেকটি ডাকটিকিট একেকটি ইতিহাসের সাক্ষী। কালের আবহে ডাকটিকিট, ডাকঘর, ডাকপিয়নসহ সংশ্লিষ্ট মাধ্যমগুলোর আবেদন কমলেও উন্নত রাষ্ট্রগুলোর দিকে তাঁকালে দেখা যাবে সেসব দেশের এ মাধ্যম প্রযুক্তির ব্যবহারে আরও আধুনিক হয়েছে। তবে ভাবাই যায় না- যে একসময় কাঠ, প্লাস্টিক বা স্বর্ণ দিয়ে তৈরি ডাকটিকিটের প্রচলন ছিল।

সাইফুল ইসলাম বলেন, এখানে না আসলে এক সাথে ডাকটিকিটের বিশাল প্রদর্শনী দেখতে পেতাম না। এখানে এসে দেশের প্রথম চিঠি লেখার খাম দেখতে পেলাম। পাশের রয়েছে বর্তমান সময়ের খাম। শুধু তাই নয়, ক্রিকেট নিয়ে ডাকটিকিট দেখলাম। এছাড়া কাগজ, কাঠ, প্লাস্টিক, স্বর্ণ, টিন ও কাপড়ে তৈরি ডাকটিকিট প্রদর্শনীতে রয়েছে।

তিনি বলেন, তার ধারণা ছিল শুধু কাগজের ডাকটিকিট হয়। তিনি কখনই ভাবতে পারেনি, যে কাঠ, প্লাস্টিক, স্বর্ণ, টিন বা কাপড় দিয়ে তৈরি হয়েছে এসব মূল্যবাদ ডাকটিকিট। এখানে এসে পুরানো দিনের দিশলাই দেখলাম। বিভিন্ন আন্দোলনের সময়ে ডাকটিকিট রয়েছে।

সংগ্রহক মোরর্শেদ হাসান জানান, এটা এক ধরনের নেশা বা ভালোলাগা। আসলে ভালোলাগা থেকে তারা এই সব ডাকটিকিট সংগ্রহ করে থাকেন। তার সংগ্রহে দেশি-বিদেশি চিঠির খাম ও ডাকটিকিট রয়েছে। যখন কোনো দেশ নতুন ডাকটিকিট বের করেন। তখন তারা সেই ডাকটিকিট সংগ্রহ করে থাকে।

এবিষয়ে বরেন্দ্র ফিলাটেলিক সোসাইটি’র সাংগঠনিক-সম্পাদক সুমন্ত কুমার জানান, এই প্রদর্শনীতে আসলে মানুষ জানতে পারবে ডাক-টিকিটের বিষয়ে। এখানে বিভিন্ন দেশের ডাকটিকিট আছে। এই দেশের বিভিন্ন স্থানের ২৫ জন সংগ্রাহকের ডাকটিকিট স্থান পেয়েছে। প্রদর্শনীতে শুধু ডাকটিকিট নয়, আছে চিঠি লেখার খাম। এই প্রদর্শনী চলবে সেমবার (৬ মে) পর্যন্ত।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ