রাজশাহী অঞ্চলসহ ৩৯ দিনে দেশে বজ্রপাতে ৮০ জনের মৃত্যু

আপডেট: মে ৯, ২০২৪, ১১:৪২ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:


রাজশাহী অঞ্চলসহ দেশে বজ্রপাতে গত ১ এপ্রিল থেকে ৯ মে দুপুর পর্যন্ত ৩৯ দিনে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার (৯ মে) চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল ও নওগাঁর মান্দায় উপজেলায় বজ্রপাতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। ধানকাটার সময় একজন কৃষক ও শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

আমাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে বজ্রপাতে কোমল (২৮) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলার নাচোল উপজেলার মোহাম্মদপুর জালমাছকুড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। কোমল মোহাম্মদপুর জালমাছকুড়ি এলাকার বত্রিশ বারোয়ারের ছেলে। নাচোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারেকুর রহমান সরকার বলেন, দুপুর পৌনে ১টার দিকে একই এলাকায় জমিতে ধান কাটার সময় বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে কোমল ঘটনাস্থলেই মারা যান।

এদিকে আমাদের মান্দা প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর মান্দায় বজ্রপাতে ধানকাটা এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৯ মে) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের চকনারায়ণ গ্রামের এ দুর্ঘটনা ঘটে নিহত ব্যক্তির নাম বাবুল হোসেন (৩৫)। তিনি চকনারায়ণ গ্রামের দেলবর রহমানের ছেলে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চকনারায়ণ গ্রামের মাঠে ধানকাটার কাজ করছিলেন বাবুল হোসেন। দুপুরে সাড়ে ১২টার দিকে পশ্চিম আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁকে উদ্ধার মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বিজয় কুমার রায় বলেন, হাসপাতালে নেওয়ার আগেই শ্রমিক বাবুল হোসেনের মৃত্যু হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হত কাজী বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষে নিহত বাবুল হোসেনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে জাগোনিউজ সূত্রে জানা গেছে, দেশে বজ্রপাতে গত ১ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত ৩৮ দিনে ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে এপ্রিল মাসে বজ্রপাতে মারা গেছেন ৩১ জন। যাদের ২০ জন পুরুষ ও ১১ জন নারী। এছাড়া চলতি মে মাসের আটদিনে বজ্রপাতে মারা গেছেন ৪৩ জন। এদের মধ্যে ৩৪ জন পুরুষ ও ৯ জন নারী। গত ৩৮ দিনে বজ্রপাতে মৃতদের মধ্যে ৩৫ জনই কৃষক। গত শনিবার হতে এস.এস.টি.এ.এফের একাধিক প্রতিনিধিদল মানিকগঞ্জের সিংগাইর, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান এবং ঢাকার নবাবগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ধান কাটায় ব্যস্ত প্রায় ৫শো কৃষককে বজ্রপাত হতে নিজেদের জীবন রক্ষার কৌশল শেখান।

সচেতনতামূলক এ কার্যক্রম পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা, গবেষণা সেলের প্রধান আব্দুল আলিম, যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ ও স্বেচ্ছাসেবী মো. শরিফুল ইসলাম। এসময় কৃষকদের মধ্যে কোমল পানি, শরবত ও স্যালাইন বিতরণ করা হয়।

এসময় সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টোর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে দ্রুত মাঠে মাঠে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের দাবি জানান। পাশাপাশি বছরের মার্চ থেকে জুন এই চার মাস কৃষকদের মধ্যে বজ্রপাত সচেতনামূলক কার্যক্রম পরিচালনারও পরামর্শ দেন।

কৃষকদের যেসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে
১. খোলা আকাশের নিচে থাকলে আকাশে কালো মেঘ দেখার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হবে।
২. বৃষ্টির সময়ে গাছের নিচে অবস্থান না করা। এবং
৩. খোলা আকাশের নিচে কাজ করার সময় পায়ে জুতা পরিধান করা এবং মাঠে থাকা অবস্থায় বজ্রপাত হলে শুয়ে পড়া।
ফোরামের সভাপতি ড. কবিরুল বাশার বলেন, অনেকে মনে করেন বজ্রপাতের সময় গাছের তলায় আশ্রয় নেওয়া নিরাপদ, আসলে এটা ঠিক নয়। আশ্রয় নিতে হবে বাড়িঘরে বা পাকা স্থাপনার নিচে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ