লেটব্লাইট রোগে পচছে আলুর গাছ ফলন নিয়ে শঙ্কায় কৃষকরা

আপডেট: জানুয়ারি ২৫, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ


লুৎফর রহমান, তানোর:তানোর উপজেলায় আলুর খেতে লেটব্লাইট রোগ দেখা গিয়েছে। এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর গাছের কাণ্ড পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে আলুর ফলন কমে যাওয়ার শঙ্কা করছেন কৃষকরা। কৃষকদের সচেতন করতে তাদের দৃশ্যমান তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে নাÑঅভিযোগ কৃষকদের। কৃষকরা অনুমাননির্ভর হয়ে বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক ব্যবহার করছেন, তাতেও ফসল রক্ষা করতে পারছেন না। তবে কৃষি অফিস বলছে, খুবই কম জমির আলু গাছে এই রোগ দেখা দিয়েছে। কিটনাশক স্প্রে করা হয়েছে, নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় এবছর আলুর চাষ হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে। আর গত বছর আলুর চাষ হয়েছিল ৩৬ হাজার ৬৫১ হেক্টর জমিতে। তবে গত বছরের তুলনায় এই বছর আলুর চাষের জমি কমেছে ১ হাজার ৬৯৬ হেক্টর। তবে উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলুর চাষ হয়েছে তানোরে।

সরেজমিন দেখা গেছে, তানোরের কামারগা ইউনিয়নের ধানোরা গ্রামের অধিকাংশ আলুখেতে পচন রোগে আক্রান্ত হয়ে আলুগাছ পচে (মরে) যাচ্ছে। আলুচাষিরা জানান, কয়েকদিনের শৈত প্রবাহ, মেঘলা আকাশ ও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির কারণে আলুগাছে পচন রোগ দেখা দিয়েছে। চলতি মৌসুমে জমি ইজারা নিয়ে আলুচাষে প্রতি বিঘায় প্রায় ৫০ হাজার টাকা ও নিজস্ব জমিতে প্রতি বিঘায় প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, তানোরে চলতি মৌসুমে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে আলুচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ৬০ হেক্টর কম জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। এদিকে তানোরের ব্র্যাক কোম্পানির আলু রোপণ করে প্রায় পাঁচ হাজার কৃষক সর্বস্বান্ত হয়েছেন। এসব কৃষক ক্ষতিপূরণের দাবি করে এখনো কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি। গোকুল গ্রামের কৃষক সাহিন বলেন, এবার তিনি ৫০ বিঘা জমিতে আলুচাষ করেছেন। পচন রোগে ইতোমধ্যে তার আলুখেতের সিংহভাগ গাছ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। একই মাঠের কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, পচন রোগে আক্রান্ত তার আলুখেতে তিনি বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক ব্যবহার করেছেন, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না।

তিনি বলেন, কৃষি বিভাগের (উপসহকারী কর্মকর্তা) মাঠকর্মীদের নাগাল পাচ্ছেন না কৃষকরা। ফলে তারা বাধ্য হয়ে অনুমান নির্ভর কীটনাশক ব্যবহার করছেন। এতে কীটনাশক ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও কপাল পুড়ছে কৃষকের। তানোরের পৌর সদরের সিধাইড় মাঠে বিস্তীর্ণ আলুখেতে দেখা দিয়েছে পচন রোগ। তানোরের পাঁচন্দর ইউনিয়নের যোগীশো মাঠে ৩০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন কৃষক রফিকুল, প্রায় ৬ বিঘা জমিতে আক্কাস প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে আলুচাষ করেছেন কৃষক শরিফুল। তারা বলেন, তাদের মাঠে প্রায় দুইশো বিঘা জমির আলুগাছে পচন রোগ দেখা দিয়েছে।

এসব বিষয়ে তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, তার জানা মতে কোথাও আলুগাছে পচন রোগ ধরেনি। আলুর গাছ ভালো অবস্থায় আছে, আলুগাছে পচন রোগ দেখা দিলে কৃষকরা যদি তাদের কাছে পরামর্শ নিতে না আসেন তাহলে তো তাদের করণীয় কিছু নাই।

তিনি বলেন, তার জানা মতে এখনো তানোরের কোথাও আলুগাছে পচন রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোনো খবর নেই। তবে কিছু কিছু এলাকায় লেটব্লাইট রোগ দেখা দিয়েছে। চাষীরা স্প্রে করছে। সেখান থেকে রোগ বৃদ্ধির সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, কৃষকের আলু খেত ভালো আছে। তারা জেলার বিভিন্ন উপজেলার আলুর খেত পরিদর্শন করছেন। একই সাথে চাষীদের সাথে কথা বলছেন। আলুর ভালো ফলনে তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।