শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ইচ্ছাকৃতভাবে পরীক্ষা দেয়ার অযোগ্য করার অভিযোগ

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪, ১:০৯ অপরাহ্ণ


রাবি প্রতিবেদক :রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে আট শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম দেখিয়ে ডিসকলেজিয়েট (পরীক্ষা দেয়ার অযোগ্য) করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এঘটনার সমাধানে হস্তক্ষেপ কামনা করে মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর আবেদন জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

অভিযোগকারী শিক্ষার্থীরা হলেন, গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের কারুশিল্প ডিসিপ্লিনের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর থিসিস ও নন-থিসিস পর্যায়ের আট শিক্ষার্থী। অন্যদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক হলেন একই ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক মনির উদ্দিন আহাম্মেদ ওরফে টভেল।

স্বারকলিপিতে ওই শিক্ষকের হুমকি সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, প্রতি মাসের শেষে আমাদের কাছ থেকে এটেন্ডেন্স খাতায় স্বাক্ষর নেওয়া হয়। শিক্ষকের উপর আস্থা রেখে আমরা স্বাক্ষর করি। পরবর্তীতে, এই স্বাক্ষরের ভিত্তিতে ইচ্ছাকৃতভাবে কম এটেন্ডেন্স দেখিয়ে আমাদের ডিসকলেজিয়েট করা হয়েছে। শুরু থেকেই আমাদের ডিসকলেজিয়েট করার এবং পরীক্ষা না দিতে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হতো। শ্রেণিশিক্ষক বারবার বলতেন, ‘তোমরা কীভাবে পরীক্ষা দাও আমি দেখে নিবো’।

শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, মোট ১২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮ জনকে ইচ্ছাকৃতভাবে কম এটেন্ডেন্স দেখিয়ে ডিসকলেজিয়েট করা হয়েছে, যেটা অফিসিয়ালি তাদেরকে কোনোভাবে জানানো হয়নি। নিয়মিত ক্লাস করার পরও এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। সেইসাথে শ্রেণিশিক্ষক প্রতিদিন ১২টা থেকে ১টার মধ্যে ডিপার্টমেন্টে আসেন এবং যেখানে তিনি তাদের সাড়ে নয়টা থেকে ক্লাসে থাকতে বলতেন। এছাড়াও বিভিন্ন কর্মচারী ও জুনিয়র শিক্ষার্থীদের থেকে শুনে তার ভিত্তিতে এটেন্ডেন্স দিতেন।

তারা আরে বলেন, গোপনে এবং মাত্র ২ দিন সময় দিয়ে ৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপ করানো হয়েছে। বাকি ৮ জন শিক্ষার্থীকে এই প্রক্রিয়া থেকে অজ্ঞাত রাখা হয়েছে, যেটা উনারা ফরম ফিলাপের একদম শেষের দিনে নোটিশ বোর্ডে প্রকাশ করেছেন। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি (রোববার) তাদের পরীক্ষার দিন ধার্য করা হয়েছে।

অভিযুক্ত শিক্ষক মনির উদ্দিন আহাম্মেদ ওরফে টভেল বলেন, ‘আমি এবিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছিনা। কারণ হলো, এরকম অনেক কথায় তারা লিখেছে। আমি হুমকি দেয়ার কে? ক্লাসতো আরও কয়েকজন শিক্ষক নিয়েছে, আমিতো একা নেয়নি? আপনারা অফিসে এসে সভাপতির সঙ্গে কথা বলতে পারেন। কাগজপত্র সব রেডি আছে। তারা ক্লাস করার পরে মাস শেষে অ্যাটেনডেন্স শিটে স্বাক্ষরও করেছে। সব সাক্ষ্য প্রমাণ আছে।

এখন তারা যদি ক্লাস না করে, তাহলে আমি কিভাবে কি করবো? দয়া করে উপস্থিতি দেখানোর ক্ষমতা আমার নাই এবং তাদের সাথে তো আমার ব্যক্তিগত খারাপ সম্পর্কও নাই।’ ডিসিপ্লিনের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী জানান, ‘একজন শিক্ষক কি এভাবে কাউকে ডিসকলেজিয়েট করতে পারে? তারা ক্লাসে অনিয়মিত ছিল এবং নিয়ম অনুযায়ী তারা ডিসকলেজিয়েট হয়েছে।’ আপনার কথা অনুযায়ী অধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে অনিয়মিত ছিল। তাহলে, পূর্বেই আপনারা তাদের সতর্ক করেছিলেন কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে সভাপতি বলেন, তাদের বহুবার এবিষয়ে বলা হয়েছে। তারপরও তারা নিয়মিত ক্লাস করেনি। এখন কি করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, একাডেমিক কমিটিতেও এবিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত এসেছে যে, নিয়মানুযায়ী যা হয়, তাই করতে হবে। নিয়মের ব্যতিক্রম করার সুযোগ নেই।

এদিকে এঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল নয়টায় পদযাত্রা ও আমরণ অনশন করার ঘোষণা দিয়েছে অভিযোগকারী আট শিক্ষার্থী। চারুকলা প্রাঙ্গণ থেকে প্রশাসনিক ভবন অভিমুখে পদযাত্রা করবেন তারা।#