শিবগঞ্জে মাছ চাষীরা কাঙ্খিত সুবিধা না পাওয়ায় উৎপাদনে মাছের ঘাটতি

আপডেট: নভেম্বর ৫, ২০২৩, ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ


শিবগঞ্জ(চাঁপাইনবাবগঞ্জ)সংবাদদাতা:


শিবগঞ্জে মৎস্য চাষীদের নানা সমস্যার কারণে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ঘাটতি রয়েছে দুই-তৃতীয়াংশ। মাছ চাষীদের ভাষ্য চাহিদামত সুযোগসুবিধা না পাওয়ায় তারা চাহিদা মত মাছ উৎপাদন করতে পারছে না।

সূত্র মতে, ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত শিবগঞ্জ উপজেলায় লোকসংখ্যা প্রায় ৮লাখ। সে অনুপাতে মাছের চাহিদা রয়েছে ১৩০০৮.৬০ মেট্রিক টন, উৎপাদন হয় মাত্র ৪৯৩৭.১৫ মেট্রিক টন। ঘাটতি রয়েছে ৮০৭১.৪৫ মেট্রিক টন।

শিবগঞ্জ উপজেলায় ৫৪৬ হেক্টর আয়তেনের ১৮০৫টি পুকুরে ২৬০০, ৩৭১ হেক্টর আয়তনের নয়টি বিলে ৪৫৩ মেট্রিক টন, ১৮৮৮.৩৩০ হেক্টর আয়তনের চারটি নদীতে ছয় ‘শো মেট্রিক টন, ৫৪ হেক্টর আয়তনের ছয়টি খালে ৮৫ মেট্রিক টন, ৭২০হেক্টর আয়তনের ১০টি প্লাবন ভূমিতে ৬২৪ মেট্রিক টন, ৪৪ হেক্টর আয়তনের ১৯টি ধান ক্ষেতে মাছ চাষ করে ৪৯ মেট্রিক টন, ০.২৭ হেক্টর আয়তনের গলদা চিংড়ী চাষে ০.৫৮ মেট্রিক টন, চার হেক্টর আয়তনের একটি পেনে মাছ চাষে ১৫.৮৪মেট্রিক টন, ৫৪ হেক্টর আয়তনের ১০টি বরোপিট ( সড়ক ও জনপথের জলা) থেকে ৫৩ মেট্রিক টন মিলে মোট ৩২৮২ হেক্টর আয়তনের ১৮৬৬টি স্থানে কার্ব প্রজাতির রুই ,কাতর মৃগেল, সিলভার, বিগহেড, গ্লাসকার্ব, ব্লাককার্ব, কার্পিও বাটা, ক্যাটপিস প্রজাতির গুলসা, পাবদা, পাংগাস, মাগুর শিং এবং অন্যান্য প্রজাতির চিতল, ফলি ইত্যাদি ধরনের মোট প্রায় পাঁচ হাজার মেট্রিক টন মাছ মাছ উৎপাদন হয়েছে।

মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, শিবগঞ্জ উপজেলায় মৎস্যজীবীর সংখ্যা ৩২৮৪জন, মৎস্যচাষির সংখ্যা ১৩০০, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মৎস্যচাষীর সংখ্যা ১১৩০জন, মৎস্য হ্যাচারি মাত্র একটি, বেসরকারী নার্সারি ১০টি। মোট পোনামাছ উৎপাদনের পরিমাণ ৮০ লাখ ২৩ হাজার অর্থাৎ ১৩৩.৭১ মেট্রিক টন, মৎস্যচাষী সমিতির সংখ্যা ২২টি মৎস্য আড়তের সংখ্যা আটটি, মৎস্য অভয়াশ ্রম স্থাপন পাঁচটি ও সমাজভিত্তিক সংগঠন দুইটি রয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে আগ্রহী মাছচাষীদের সাথে আলোাচনা করে জানা গেছে, তারা সমস্যায় জর্জরিত। তারা জানান, মাছের খাদ্যের দাম বেশি, সংক্ষিপ্ত বাজার ব্যবস্থা, মাছ চাষে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণের সুযোগ না পাওয়া, মানসম্মত পোণা না পাওয়া, আর্থিক সংকটের কারণে গুনগত মানসম্মত খাবার দিতে না পারা, কৃষিভিত্তিক বিদ্যুৎ মিটার না পাওয়ায় বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ মিটার ব্যবহারে বাধ্যতা.অভীর পুকুরগুলোকে আর্থিক সংকটের কারণে পুনঃখনন করতে না পারা, গ্রীষ্মকালে পুকুর শুকিয়ে যাওয়া, প্রযুক্তিভিত্তিক কারিগরি প্রশিক্ষণ না পাওয়া ও নিড বেইজড নির্মাণ করতে না পারা সহ নানা সমস্যায় থাকলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বলে কোন লাভ হয়নি। জেলেদের ভাষ্য আমরা অল্প সুদে বেশি পরিমাণ লোন সহ অন্যান্য সরকারি সুযোগ সুবিধা পেলে আমরা শিবগঞ্জে প্রচুর মাছ উৎপাদন করে ঘাটতি পূরণের পর বাইরে রপ্তানি করতে পারবো।
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অফিসার আবু বক্কও সিদ্দিক মাছ চাষীদের সবগুলো অভিযোগ সত্য নয় বলে জানান। তিনি জানান, মাছচাষীদের কিছু সমস্যা রয়েছে যা আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি। প্রশিক্ষণের সম্প্রসারণ, মানসম্মত ও গুণগত খাদ্য সরবরাহ, প্রযুক্তিভিত্তিক প্রদর্শনীর ব্যবস্থা, যান্ত্রিকরণে উদ্বুদ্ধকরণ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া কৃষি ভিত্তিক বিদ্যুৎ মিটারের জন্য চেষ্টা করছি, জেলেদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগসুবিধা প্রদানের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কম সুদে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি লোনের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বাজার ব্যবস্থা সম্প্রসারণের জন্য ইতোমধ্যে মাছচাষী সংগঠনের মাঝে নয়টি ভ্যান বিতরণ করা হয়েছে। গত ১২ অক্টোবর হতে দুই নভেম্বন পর্যন্ত পদ্মা নদীতে ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধের সময় মনাকষা, দূর্লভপুর, উজিরপুর ও পাঁকা ইউনিয়নের এক হাজার জেলেকে ২৫ কেজি করে চাউর বিতরণ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান এ বছর গত বছরের চেয়ে প্রায় আড়াই শ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়েছে। মাছচাষীদের সবধরনের সুযোগসুবিধা দেয়ার ব্যবস্থাগ্রহণে তৎপর রয়েছি। গত বছর মাছ উৎপাদন হয়েছিল ৪৭৯৩ .৩৫ মেট্রিক টন, এবার তা বৃদ্ধি পেয়ে উৎপাদন হয়েছে ৪৯৩৭.১৫ মেট্রিক টন। আশা করছি সামনে আরো বেশি মাছ উৎপাদন হবে এবং অতিরিক্ত চাহিদা পূরণ হবে।