শৈত্যপ্রবাহে রোগব্যাধির প্রকোপ

আপডেট: জানুয়ারি ১৫, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

সর্তকতা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হোক

গত দুইদিন ধরে উত্তরাঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। আরও দুই-তিন দিন অব্যাহত থাকবে। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সারাদেশেই শীতজনিত রোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসময় সর্তকতা যেমন জরুরি তেমনি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতেও গুরুত্বারোপ করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সূত্রে জানা গেছে, গত দেড় মাসে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোয় ২ লাখ ১০৭ জন ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালে সেবা নিয়েছেন প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজারের বেশি রোগী। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, এ সময়ে অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে জেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের (সিভিল সার্জন) মতে, ঠান্ডাজনিত রোগে ভর্তি ও মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) শাখার তথ্য অনুযায়ী, গত দেড় মাসে শুধু কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬৫১ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। শীতজনিত কারণে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫২ হাজার ৪৫৬ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। সর্বোচ্চ ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে খাগড়াছড়িতে।

সেখানে শীতজনিত রোগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৭৯ জন। পৌষের মাঝামাঝিতে ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হাড় কাঁপানো হিম বাতাসে ঠান্ডাজনিত রোগব্যাধির প্রকোপ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। অনেকে কাশি, গলাব্যথা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত জটিলতাসহ জ্বর ও ভাইরাল ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের দ্বারস্থ হচ্ছেন-যাদের বেশির-ভাগই নবজাতক, শিশু ও বয়স্ক।

বৈশি^ক জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব আমাদের দেশেও পরিলক্ষিত হচ্ছে। গ্রীষ্মের সময় অতিরিক্ত গরম ও শীত মৌসুমে মাত্রাতিরিক্ত ঠান্ডা জনজীবনে প্রভাব ফেলছে। সাধারণত শীতে বাতাসের আর্দ্রতা কম এবং ধূলিকণা বেড়ে যাওয়ায় ফ্লু, নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস ও ডায়রিয়ার মতো রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। ফলে জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস ও শীতকালীন ডায়রিয়ায় আক্রান্তের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

মনে রাখা প্রয়োজন, শীতের এ সময়ে শিশু ও বৃদ্ধরাই ঠান্ডাজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হন। তাই পরিবারের এমন কোনো সদস্য ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। চিকিৎসকদের মতে, শুধু অবহেলার কারণে এসব রোগী দেরিতে হাসপাতালে আসায় মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়েন। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে অগ্নি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। বিশেষ করে এ মৌসুমে গরম পানি, গ্যাসের চুলা ব্যবহার ও আগুন পোহাতে গিয়ে অসতর্কতা ও অবহেলার কারণে অনেকে অগ্নি দুর্ঘটনার শিকার হন, সম্পদেরও ক্ষতি হয়। তাই শীতের এ সময়ে সবারই সচেতনতা ও বাড়তি সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে। শীতজনিত রোগ ও দুর্ঘটনা রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের সকল হাসপাতালে সরকার যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবে, এটাই প্রত্যাশা।