সড়কে পা হারানো সেই তামান্না হতে চান বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪, ১২:৫৪ অপরাহ্ণ


সেলিম সরদার, ঈশ্বরদী (পাবনা) :একটি কৃত্রিম পায়ের অভাব স্বপ্ন পূরণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অদম্য মেধামী তামান্না ইয়াসমিনের। পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর জিগাতলা মোড় এলাকার মো. দাউদের মেয়ে তামান্না পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী।

তামান্নার স্বপ্ন প্রশাসনে বিবিএস ক্যাডার হওয়ার। এই অবস্থায় একটি কৃত্রিম পায়ের সংস্থান করতে পারলে তার স্বপ্ন পূরণে অনেক সহায়ক হতো বলে জানান তামান্না ইয়াসমিন। তামান্নার আকুতি কোনো বিত্তবান মানবিক মানুষ কিংবা কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে যদি আমার একটি কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করে দিতেন তাহলে আমার স্বপ্ন পূরণ সহজ হতো আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকতাম।

তামান্নার সঙ্গে কথা বলে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৩ সালে তামান্নার বয়স যখন তিন বছর তখন সাহাপুর জিগাতলা মোড়ে একটি বাসের ধাক্কায় একটি পা হারায় তামান্না। বাবা মো. দাউদের জিগাতলা মোড়ে ছোট্ট একটি মুদি দোকান। দুই মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে অভাব অনটনের সংসার তামান্নার বাবার। সামান্য আয়ে বর্তমান দুমূর্ল্যরে বাজারে সংসার চালানোই দায় তার।

এই অবস্থায় মেয়ে তামান্নার জন্য একটি কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করতেও পারছেন না তিনি। ফলে এক পা দিয়ে চলাফেরা করতে না পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া আসা এবং পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে তামান্নার। তার বাবা মো. দাউদ জানান, ২০০৭ সালে ব্র্যাকের ঢাকা অফিসের সহযোগিতায় একটি কৃত্রিম পা সংযোজন করা হয় তামান্নার।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার পায়ের কাটা অংশ মোটা হয়ে গেলে ওই পা আর ব্যবহার করার উপায় থাকে না। এই অবস্থায় ২০১৩ সালে দ্য মঈন ফাউন্ডেশন নামের ভারতীয় একটি সংস্থার উদ্যোগে দ্বিতীয়বার তার একটি কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করা হয়। ৬ বছর পর আবারো কৃত্রিম পা টি অকেজো হয়ে পড়ে তামান্নার। ২০১৯ সালে ঢাকা পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে আবারো পায়ের ব্যবস্থা করা হয়। তামান্নার বয়স এখন ২৪ বছর। ৪ বছর আগে লাগানো কৃত্রিম পা টি এখন অকেজো হয়ে গেছে।

গত ২ বছর ধরে তার কৃত্রিম পায়ের জন্য নানা স্থানে আবেদন করা হলেও কোনো সংস্থা তাকে পায়ের ব্যবস্থা করেনি। তামান্নার গরিব বাবা পক্ষেও প্রায় ৫০ হাজার টাকায় কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করার উপায় নেই। বাবার টানাটানির সংসারের অভাব অনটন আর প্রতিকূলতাকে পিছনে ফেলে তামান্না এখনো পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। পড়াশোনার ক্ষেত্রে এতদিন কোনো প্রতিবন্ধকতা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।

পাকশী নর্থ বেঙ্গল পেপার হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ঈশ্বরদী মহিলা কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর সেলাই মেশিনে পাড়া প্রতিবেশীর জামা কাপড় সেলাই করে কোনো রকমে নিজের পড়াশোনার খরচ যোগাতো সে নিজেই। কিন্তু তার কৃত্রিম পা টি অকেজো হয়ে যাওয়ায় এখন জীবনের সঙ্গে লড়াই করাটাও থেমে গেছে। কৃত্রিম পা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়েও নিয়মিত যেতে পারছে না তামান্না। লাঠিতে ভর করে হাঁঁটতে হচ্ছে তাকে। তামান্না জানায়, একটি কৃত্রিম পায়ের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, সমাজসেবা অধিদপ্তর, বিভিন্ন বেসরকারিে সংস্থা, স্থানীয় এমপি, চেয়ারম্যান-মেম্বারের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো সাড়া মেলেনি।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবীর কুমার দাশ এ বিষয়ে বলেন, লিখিত আবেদন পেলে উপজেলা সমাজ কল্যাণ তহবিল থেকে তাকে আর্থিক সহযোগিতা করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া তামান্নার কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করতে আমি ব্যাক্তিগত ভাবেও তার পাশে দাঁড়াবো।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ