হেলমেট বাহিনির আতঙ্কে রাণীনগরবাসী চেয়ারম্যান জাহিদের ওপর হামলার পাঁচ দিনেও কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ

আপডেট: নভেম্বর ১৭, ২০২৩, ৪:৪৮ অপরাহ্ণ


আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি:


রাণীনগরের পারইল ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার জাহিদুর রহমান জাহিদের ওপর বর্বর সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িতরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। ঘটনার পাঁচদিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কোনো দুর্বৃত্তকে আটক করতে পারেনি। এর ফলে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে হামলাকারীদের শনাক্তসহ গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু ওবায়েদ জানিয়েছেন।

গত তিনমাসের ব্যবধানে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে হেলমেট পরে বিএনপি সমর্থিত ব্যক্তিদের উপর দুবর্ৃৃত্তদের আক্রমণের এ রকম একাধিক ঘটনায় রাণীনগরবাসী সন্ত্রাসী হেলমেট বাহিনির আতঙ্কে রয়েছেন। চেয়ারম্যান জাহিদ পারইল গ্রামের তছির উদ্দিন ফকিরের ছেলে। তিনি আদমদীঘি আইপিজে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীর চর্চা বিষয়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পরিষদের সচিব তরিকুল ইসলাম জানান, ১২ নভেম্বর সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে কার্যালয়ে বসে চেয়ারম্যান কাজ করছিলেন। এসময় অনুমান ৫০ বছর বয়সী মাস্ক পরা একজন প্রবেশ করে চেয়ারম্যানের সাথে কথা আছে বলে আমাকে রুম থেকে বের করে দেয়।

এরপরই ৩০-৩৫ বছর বয়সের আরো একজন যুবক হেলমেট ও মাস্ক পরে ধারালো অস্ত্র নিয়ে কার্যালয় প্রবেশ করেই চেয়ারম্যানকে আঘাত করতে থাকে। এসময় পরিষদ চত্বরে আরো ৩/৪ জন হেলমেট ও মাস্ক পরা যুবক সেবা প্রত্যাশী এবং পরিষদের অন্য কর্মচারীদের অস্ত্র উচিয়ে ধাওয়া করতে থাকে। আমাকেও অস্ত্র হাতে ধাওয়া করলে আমি দৌড়ে পালিয়ে যাই। চেয়ারম্যান জাহিদ আত্মরক্ষার্থে দৌড়ে পরিষদের গেটের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করলে হামলাকারীরাও দ্রুত পালিয়ে যায়।

তিনি বলেন, সর্বোচ্চ ২-৩ মিনিটের মধ্যেই ঘটনা ঘটিয়ে দুর্বৃত্তরা তিনটি মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যায়। ওই হামলায় চেয়ারম্যানের ডান হাতের কব্জি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম হয়। পরে চেয়ারম্যানকে উদ্ধার করে প্রথমে আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরবর্তীতে বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা রাতেই তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।

ইউনিয়নের নারী সদস্য মোছা. নাসিমা আক্তার জানান, তিনি প্রতিদিনের মতো পরিষদে এসে সচিবের কক্ষে অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ করেই চিৎকার চেচামেচি শুনে বাইরে বেরিয়ে দেখেন ৫/৬জন হেলমেট ও মাস্ক পরা দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র হাতে চেয়ারম্যানকে এলোপাতাড়ি আঘাত করছে। এসময় উপস্থিত সেবাপ্রত্যাশী ও কর্মচারীরা দিকবিদিক দৌড়ে পালানোর জন্য চেষ্টা করেন। এটা দেখে ভয়ে তিনি সচিবের কক্ষে আবারও ঢুকে পড়েন এবং দরজা বন্ধ করে দেন। ঘটনার সময় একমাত্র তিনি ছাড়া অন্য ১১ জন ইউপি সদস্যদের মধ্যে কেউ ছিলোনা।

গ্রাম পুলিশ গোলাপ চন্দ্র জানান, ঘটনার সময় তিনি পরিষদের বাগান পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তবে লোকজনের বিভিন্ন দিক ছোটাছুটি দেখে তিনি পরিষদের কার্যালয়ের দিকে দৌড়ে আসতেই দুর্বৃত্তরা তাকেও আক্রমণ করার চেষ্টা করে। উপায় না দেখে তিনি ভয়ে মাটিতে শুয়ে পড়েন। এসময় দূর্বৃত্তরা অস্ত্র উঁচিয়ে চলে যায়।

পারিবারিক সূত্রে জানা জানা যায়, মাস্টার জাহিদুর রহমান জাহিদ পারইল ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন। ২০২১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি তার নিজ ওয়ার্ডে একাধিকবার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পারিবারিকভাবে বা অন্য কারো সাথে দ্বন্দ্ব নেই জানিয়ে জাহিদের পরিবার থেকে বলা হয় বিএনপির রাজনীতি করার কারণে হয়তো বা এমন হামলা হতে পারে।

জাহিদের স্ত্রী মোছা. শ্যামলী আক্তার মুঠোফোনে জানান, জাহিদের কোনো শত্রু নেই বললেই চলে। সে সাদা মাটা জীবন-যাপন করে। কিন্তু কী কারণে কে বা কারা এমন নির্মম কাজটি করলো তা ভাবনার বাইরে। দুর্বৃত্তরা জাহিদের পিঠ, কোমর এবং উরুতে প্রায় ৯টি স্থানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরু¡র আঘাত করেছে।

এতে ডান হাতের কব্জি প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বর্তমানে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে জাহিদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। পরিবারে তেমন কোনো ব্যক্তি না থাকায় থানায় অভিযোগ করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। জাহিদ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেই জড়িতদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির জন্য তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ওবায়েদ বলেন, হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত পারিবারিক ভাবে কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় তেমন কোনো জোরালো পদক্ষেপও গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে হামলাকারীদের আটক করার পুলিশি চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি জানান।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ