আজ শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আজ শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনি ও তাদের দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামস মিলিতভাবে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে।

বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ঠিক দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন বর্বর পাকিস্তানি বাহিনি আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
বিনয় এবং শ্রদ্ধায় জাতি ওই বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করছে আজ। একই সাথে এবারও জাতির প্রত্যাশা, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের যারা হত্যা করেছে এবং যারা বিচার প্রক্রিয়ার বাইরে আছে অথবা পলাতক আছে তাদের বিচারের রায কার্যকর করে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করা হবে। একই সাথে এবারের বুদ্ধিজীবী দিবসে দাবি রইল- মহান মুক্তিযুদ্ধে সারা দেশের শহিদ বুদ্ধিজীবীদের একটা পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের।

শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহন করেছে।
২০১৬ সালের ১১ মে মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নীলনকশা বাস্তবায়নকারী গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনির প্রধান ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়। তবে বুদ্ধিজীবী হত্যায় সরাসরি জড়িত চৌধুরী মইনুউদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান পলাতক থাকায় তাদের বিচারের রায় এখনও কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।
চৌধুরী মইনুদ্দীন যুক্তরাজ্য এবং আশরাফুজ্জামান খান যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক রয়েছে। তাদেরকে ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

পলাতক এই দুই খুনিকে দেশে ফেরৎ এনে দণ্ড কার্যকরের জন্য প্রক্রিয়া শুরুর দাবিও দীর্ঘদিনের।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের এ দেশীয় দোসর আল-বদরের সাহায্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, সংস্কৃতি কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার বরেণ্য ব্যক্তিদের অপহরণ করা হয়। পরে নিদারুণ যন্ত্রণা দিয়ে রায়েরবাজার ও মিরপুরে তাদের হত্যা করা হয়। এ দু’টি স্থান এখন বধ্যভূমি হিসেবে সংরক্ষিত। সারা দেশ জুড়েই দেশ-মাত্রকার শ্রেষ্ঠ সন্তান বদ্ধিজীবীদের ধরে ধরে হত্যা করা হয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে আল-বদর বাহিনি বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে স্থাপিত আল-বদর ঘাঁটিতে নির্যাতনের পর রায়েরবাজার বধ্যভূমি ও মিরপুর কবরস্থানে নিয়ে হত্যা করে।

শহিদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন- অধ্যাপক মুনির চৌধুরী, ডা. আলিম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ড. ফজলে রাব্বী, সিরাজ উদ্দিন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, অধ্যাপক জিসি দেব, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সাংবাদিক খন্দকার আবু তাহের, নিজামউদ্দিন আহমেদ, এসএ মান্নান (লাডু ভাই), এএনএম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, সেলিনা পারভিনসহ আরো অনেকে।

রাজনীতিবিদদের মতে একাত্তরে ত্রিশ লাখ শহিদের মধ্যে বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে হত্যার ঘটনা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। তারা শহিদ হন এক সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনার অংশ হিসাবে। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনি তাদের পরাজয় আসন্ন জেনে বাঙালি জাতিকে মেধা-শুণ্য করার লক্ষে বুদ্ধিজীবী নিধনের এই পরিকল্পনা করে।
তারা স্পষ্ট দেখে- চরম বিপর্যয় আসন্ন, পরাজয় একেবারেই সন্নিকটে- তখনই তারা সেই পরিকল্পনা কার্যকর করে। তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের চোখ বেঁধে নিয়ে হত্যা করে। তারা স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যতকে এভাবেই অন্ধকার করার পাঁয়তারা করেছিল।

উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে প্রকাশিত বুদ্ধিজীবী দিবসের সংকলন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও আন্তর্জাতিক নিউজ ম্যাগাজিন ‘নিউজ উইক’-এর সাংবাদিক নিকোলাস টমালিনের লেখা থেকে জানা যায়, শহিদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা মোট ১ হাজার ৭০ জন। কিন্তু এ সংখ্যা অনেক বেশি হবে। এ পর্যন্ত শহিদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন হয়নি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকেই দেশ জুড়েই বৃদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে।