ইদ বিনোদনে মেতেছে নগর II ঘাম ঝরা দিনে বরেন্দ্রের মেঠোপথেই স্বস্তি

আপডেট: জুন ২০, ২০২৪, ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ


মাহাবুল ইসলাম:


নেই কড়া রোদ। ছায়া ভাব থাকায় তেমন একটা প্রয়োজন পড়ছে না ছাতার। তবুও গাছ দেখলেই একটু জিরিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা। কারণ এবারের ইদুল আজহার বিনোদনের সঙ্গী হয়েছে ভ্যাপসা গরম। তাই বিনোদনে সঙ্গে ঘাম ছিলো সবসময়ই। আর একারণেই ইদ বিনোদনে মাতোয়ারা নগরীর সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিলো পদ্মাপাড়ে। এছাড়াও গত কয়েকবছর ধরে স্বস্তি ও ব্যতিক্রমি বিনোদনের অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে বরেন্দ্রের মেঠোপথ।

মেঠোপথে বন্ধুদের আড্ডার বিনোদন:
‘গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ আমার মন ভুলায় রে।
ওরে, কার পানে মন হাত বাড়িয়ে লুটিয়ে যায় ধুলায় রে॥
ও যে আমায় ঘরের বাহির করে, পায়ে-পায়ে পায়ে ধরে…
কোথায় গিয়ে শেষ মেলে যে ভেবেই না কুলায় রে’

গত কয়েকবছর ধরে রাজশাহীর ইদ বিনোদনের সঙ্গে বিখ্যাত এ গানের মর্মার্থই ফুটে উঠছে বরেন্দ্রের মেঠো পথের বাঁকে বাঁকে। আঁকা-বাঁকা পথ, নব-নির্মিত অজপাড়াগায়ের ব্রিজেও জমছে ভ্রমণ পিপাসুদের আড্ডা। বাইক, অটো রিকশাসহ প্রাইভেট কারের বহর নিয়েও অনেকেই এসব জায়গায় ইদ আড্ডামুখর বিনোদন জমাচ্ছেন। যদিও এ সড়কের বিনোদনে অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাইকারদের দুর্ঘটনা বেদনার কারণ। তবে এবার এমন কোন দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায় নি।

কয়েকজন বন্ধু মিলে গোদাগাড়ী উপজেলার মেঠোপথের বিনোদনে মেতেছিলেন পবার বাসিন্দা ইয়ামিন আলী। তিনি বলেন, আগে ইদের সময় পার্কে যেতাম। হলে ছবি দেখতে যেতাম। এখন আর এগুলো ভালোলাগে না। আর শহরের সব বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেই মাঝেমধ্যে যায়। তাই ইদের সময় বরেন্দ্রের মেঠোপথই ভালোলাগে। বন্ধুরা সবাই মিলে অনেক আনন্দ করা যায়। আঁকা-বাঁকা ফাঁকা সড়কের মাঝে বসে সেসুরা কণ্ঠে গানও তোলা যায়। ঢং চায়ের দোকানেও খনিকের আড্ডা বেশ জমে ওঠে। আর দুর্ঘটনার ঝুঁকি সব সড়কেই থাকে। যারা ইদের দিনে নতুন বাইক চালায়, তারাই মূলত ঝুঁকিটা তৈরি করে।

আরেকজন নাফিস আলী বলেন, আমার গ্রামে বেড়ে ওঠা। কিন্তু কর্মসূত্রে চট্রোগ্রামে থাকা হয়। একারণে শহুরে ইট-পথরের বিনোদন তেমন একটা টানে না। একারণেই ইদের ছুটিতে এসে বন্ধুদের সঙ্গে বরেন্দ্রের বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরাঘুরি, আড্ডা, পানের রঙে রাঙা ঠোঁটের মুখে বরেন্দ্রের রাঙামাটির সৌন্দর্য বুনি!

নগর বিনোদন:
ভ্যাপসা গরমের বিনোদনে পদ্মাপাড়ের বাতাস ছিলো বড় স্বস্তি। দীর্ঘ সময় সংস্কার কাজের জন্য বন্ধ থাকার পর চালু হওয়া শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানার ভেতর-বাইরে সবখানেই ছিলো উৎসবের আমেজ। দীর্ঘ সারিতে টিকিট কাটতে দেখা গেছে দর্শনার্থীদের। সব বয়সী মানুষ নব রুপের চিড়িয়াখানার সৌন্দর্য উপভোগ করতে ইদের দিন দুপুর থেকেই ভিড় জমায়। যে ভিড় বিকেলের দিকে আরও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়।

ইদ বিনোদনে এবারও আকর্ষণের ঘাটতি ছিলো না নগরীর নবনির্মিত সড়ক ও ফ্লাইওভারগুলোতে। বিশেষ করে সংস্কার করা লেক ও ফ্লাইওভারে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর ছিলো। যেখানে অস্থায়ী দোকান স্থাপন করে বিকিনিকি করেছেন ফাস্ট ফুড ও রকমারি পণ্যের উদ্যোক্তারা।

কখনো ভ্যাপসা গরম, কখনো থেমে থেমে আসা বাতাসের খেলায় ইনডোর-আউটডোর সব বিনোদনেই উচ্ছ্বসিত ছিলো মানুষ। নগরীর শহিদ জিয়া শিশুপার্ক, বড়কুঠি পদ্মার পাড়, তার অদূরেই থাকা সীমান্ত অবকাশ, সীমান্তে নোঙর এবং ভদ্র্রা শিশুপার্কসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিলো প্রচুর।

এদিকে ইদ উৎসবের শত ঝুট-ঝামেলা পেরিয়ে আসা মানুষগুলো নগর পদ্মাপাড়ে ঢোকার পরই যেন ভুলে যান সব ধরনের তিক্ততা। বাইরে সমস্যা যাই থাক ভেতরে ঢোকার পর সবার চোখেমুখেই দেখা যায় খুশির ঝিলিক। দুই বছরের মেয়েকে নিয়ে পদ্মপাড়ে হাঁটছিলেন মনির-বৃষ্টি দম্পত্তি। তারা বলেন, ছুটির কারণে শহরে সেই চিরচেনা যানজট নেই। আর ছুটিও শেষ হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য দিনের তুলনায় আবহাওয়া ভালো। তবে ভ্যাপসা গরম প্রচুর। ইদ আনন্দ উপভোগ করতে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানতেও বেড়াতে গেছিলাম। সেখানে এতোটা স্বস্তি নেই, যতটা আছে পদ্মাপাড়ে।

এদিকে, এবার নগর বিনোদনের বাইরে গোদাগাড়ি উপজেলায় অবস্থিত সাফিনা পার্কে বিনোদন পিপাসুদের ভিড় ছিলো বেশি। বরেন্দ্রের লাল মাটির মেঠোপথ ঘুরে সাফিনা পার্কের নব রূপের সঙ্গে ইদ বিনোদন উদযাপনে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই পাড়ি জমিয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে ভ্রমনপিপাসুরা আসেন ঘুরতে। পাশর্^বর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বন্ধুদের নিয়ে সাফিনা পার্কে ঘুরতে এসেছিলেন রজব আলী। তিনি বলেন, এবার ইদুল ফিতরের আগে থেকেই সাফিনা পার্কের কথা বন্ধুদের মুখে মুখে ছিলো। আগে যখন এসেছিলাম, তখন এতটা ভালো ছিলো না। এখন মোটামুটি ভালো জায়গা ঘোরার জন্য।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Exit mobile version