নাটোরে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণ ও মারধরের ঘটনায় সিসিটিভির ফুটেজে ১০ জনের পরিচয় মিলেছে

আপডেট: এপ্রিল ১৭, ২০২৪, ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ


নাটোর প্রতিনিধি:


নাটোরে জেলা নির্বাচন অফিসের ভিতর থেকে টেনে হেঁচরে এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ ও মারধর করার সঙ্গে জড়িত অন্তত ৮-১০ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। ঘটনার সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় সাংবাদিক তাদের শনাক্ত করেন।

শনাক্ত হওয়া এসব ব্যক্তিরা বেশির ভাগ যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মী। তাদের মধ্যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী লুৎফুল হাবীবের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক ও গাড়িচালকও রয়েছেন। তবে পুলিশ ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় এখনো প্রকাশ না করলেও। ইতিমধ্যে শনাক্ত হওয়া দুজন কে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা হলেন, সিংড়া উপজেলার কলম ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে আব্দুস সামাদের ছেলে সুমন আহমেদ ৩০ এবং শেরকোল ইউনিয়নের হারোবাড়িয়া গ্রামের জাহিদুল ইসলামের ছেলে নাজমুল হক বাবু (৩২)।

নাটোরে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান মঙ্গলবার এ সম্পর্কে বলেন, ভিডিও ফুটেজ পুলিশের হাতে আছে। তারা ফুটেজ দেখে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করছেন। নিশ্চিত হলেই জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছেন। ঘটনা তদন্তের স্বার্থে অন্য অভিযুক্তদের ব্যপারে কোনো তথ্য জানাতে চাননি তিনি।

গত সোমবার ( ১৫এপ্রিল) বিকেল চারটার কিছুক্ষণ পর নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভেতর থেকে দুর্বৃত্তরা দেলোয়ার হোসেনকে মারধর করতে করতে একটি কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। বিকেল পাঁচটার কিছু পরে দুর্বৃত্তরা তাঁকে মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁর গ্রামের বাড়ির (সিংড়ার কলম ইউনিয়নের পারসাঐল গ্রাম) সামনে ফেলে রেখে যায়। বর্তমানে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সিংড়ার একজন আওয়ামী লীগ নেতা ও স্বানীয় দুজন সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভিডিও ফুটেজে সিংড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহন আলীকে (পাঞ্জাবি পরা) ঘটনার সময় জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের নিচতলায় সিঁড়ির নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। উপজেলার শেরকোল ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মজনু তালুকদারকে অপহরণ কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। সেখানে কলাপাতা রঙের গেঞ্জি পরা দেখা যায় কলম ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসেনকে (কাজল)। আকাশি রঙের গেঞ্জি পরে উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক স্বপনের ভাগনে সরলকে ঘটনার সময় দেখা যায়। আর হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পরেছিলেন স্থানীয় যুবলীগ কর্মী পিয়াস।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী লুৎফুল হাবীবের ব্যক্তিগত সহকারী এবং তার বালি ও মাটি ব্যবসার মানেজার জাহিদ হাসানকে সাদা গেঞ্জি ও জিনসের প্যান্ট পরে অপহরণে অংশ নিতে দেখা যায়। এ ছাড়া সেখানে উপস্থিত ছিলেন, শেরকোল ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সেতু সরকার, সাধারণ-সম্পাদক মজনু তালুকদার, সিংড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন’র সাবেক সাধারণ-সম্পাদক আবদুস সাত্তার, উপজেলা-স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য আনোয়ার হোসেন, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়া শেরকোল ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক-সভাপতি সানোয়ার হোসেন, নাজমুল হক বাবু।

নাটোরে এ ছাড়া সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রতিমন্ত্রী পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবীবের গাড়িচালক সুজনকে (ইটালি গ্রামের নিতাইয়ের ছেলে) কালো গেঞ্জি পরে অপহরণের কাজে ব্যবহৃত কালো মাইক্রোবাসের চালকের আসনে বসতে দেখা যায়। পরে তিনিই মাইক্রোবাসটি চালিয়ে নিয়ে যান।

ওই ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের জড়িত থাকার বিষয়ে সংগঠনের জেলা কমিটির সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব। দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণের আগে গত সোমবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে থেকে তাঁর ভাই এমদাদুল হক ও সহযোগী আলাউদ্দিন মুন্সিকে অপহরণের ঘটনা ঘটে। তখন দেলোয়ার হোসেন লুৎফুল হাবীবের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ করেছিলেন। লুৎফুল হাবীব উপজেলার শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। দেলোয়ার হোসেনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে তিনিই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে একমাত্র প্রার্থী ছিলেন।

আহত দেলোয়ার হোসেনের পরিবার ও মামলা সুত্র জানা যায়, সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদের শ্যালক লুৎফুল হাবীব রুবেল। গত রোববার পর্যন্ত তার প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি। কিন্তু সোমবার সকালে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য দেলোয়ার হোসেন ব্যাংকে জামানতের টাকা জমা দেওয়ার জন্য বের হন।

নাটোরে এ সময় তারা জরুরী প্রয়োজনে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে গেলে সেখান থেকে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাসে করে প্রতিমন্ত্রীর শ্যালক রুবেল তার হুকুমে সিংড়া উপজেলা সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা হাসান মোহনসহ ১৫-২০জন দুবৃত্তরা আলাউদ্দিন মুন্সিকে অপহরণ করে। তবে এ ঘটনা লুৎফুল হাবীব ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এদিকে জরুরী সেবার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে এমন অভিযোগ করা হলে পুলিশ দুর্বৃত্তদের অবস্থান শনাক্তের কাজ শুরু করেন।

অপরদিকে এ ঘটনার পরপরই পুলিশ আহত প্রার্থীর মেজ ভাই মজিবুর রহমানকে সদর থানায় ডেকে নেয়। পওে মঙ্গলবার (১৬ এপ্লিল) রাত সাড়ে ১২ টার দিকে আহতের ভাই মজিবুর বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে আসামি করে নাটোর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এটি সদর থানায় মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।

নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা এবং ভিকটিমের পরিবারে আর্জিমোতাবেক বিষয়টি নিয়ে পুলিশের কয়েকটি টিম কাজ করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনার এ রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ