পাঁচ টাকা কেজির ঢেঁড়স হাত বদলে বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়, হতাশ চাষীরা

আপডেট: এপ্রিল ১৭, ২০২৪, ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:


চাষীর ঢ়েঁড়স হাটে-বাজারে পাইকারে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি পাঁচ টাকায়। সেই ঢেঁড়স ব্যবসায়ীরা ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি করছে ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজিতে। ফলে একহাত বদলে প্রতিকেজি ঢেঁড়সের দাম বেড়ে যায় ১২ থেকে ১৫ টাকা। যার সবই পাচ্ছেন বিক্রেতারা। এমন অবস্থায় দাম না পেয়ে হতাশ চাষীরা।

চাষীদের অভিযোগ- চার হাজার টাকা প্রতিকেজি ঢেঁড়সের বীজ কিনে জমিতে বপন করতে হয়েছিল। এছাড়া কিটনাশক, সার, সেচ ছাড়াও বিভিন্ন খরচ রয়েছে ঢেঁড়স উঠতে শুরু হওয়া পর্যন্ত। ঢেঁড়স চাষে জমিতে হাজার হাজার টাকা খরচ করে দাম না পাওয়া হতাশ চাষীরা।

সরেজমিনে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) রাজশাহী পবা উপজেলার খড়খড়ি সবজির হাটে গিয়ে এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। এই হাট ভোর থেকে বসে। হাটে প্রতিদিন ঢেঁড়স বিক্রি করেন, বুধপাড়া, পশ্চিম বধুপাড়া, মৌলভী বুধপাড়া, কুখুন্ডি, পবার পাড়ীলা, মেহেরচন্ডী, রামচন্দ্রপুর, মল্লিকপুরসহ আশেপাশের গ্রামের অন্তত ৩০-৪০ জন চাষী।

হাসান বলেন, রমজান মাস থেকে ঢেঁড়সের দাম নেই। ১২ রমজানের ডিদেক ঢেঁড়স পাইকারি বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা পাল্লা দরে (পাঁচ কেজি)। কিন্তু সেই ঢেঁড়সের বাজার নেমেছে ২৫ টাকা পাল্লায়। অর্থাৎ ২০০ টাকা মণ দরে ঢেঁড়স কেনা-বেচা হচ্ছে। কিন্তু এই ঢেঁড়স আবার ভ্যান গাড়ি বা সবজি বিক্রেতার কাছে কিনতে গেলে দিতে হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকা প্রতিকেজির দাম।

তিনি বলেন, রোববার ঢ়েঁড়স হাটে নিয়ে বিক্রি করতে পারিনি। চার-পাঁচ টাকার উপরে দাম বলছে না। রাগ করে ঢেঁড়স বিক্রি করিনি। নিয়ে গিয়ে বড় ভাইয়ের গরুকে দিয়েছি। তার একদিন পরে ঢেঁড়স তুলে শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়েছি। তাদের গরু আছে। এছাড়া হাটে বিক্রি করতে নিয়ে আসলে খাজনা ও মাপার জন্য আলাদা টাকা দিতে হয় চাষীদের।

সজিব নামের এক ঢেঁড়স বিক্রেতা বলেন, জমি থেকে ঢেঁড়স তুলতে যে নারী শ্রমিক লাগে তাদের পারিশ্রমিক হচ্ছে না। তাদের প্রত্যেককে দিতে হয় ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এক বিঘা জমির ঢেঁড়স তুলতে কমপক্ষে চারজন নারী শ্রমিক লাগে। বর্তমানে এক বিঘা জমিতে দেড় থেকে দুই মণ ঢেঁড়স হচ্ছে। এই ঢেঁড়স বিক্রি করে শ্রমিকের টাকাই হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন একাধিক চাষী।

খুচরা ঢেঁড়স ক্রেতা শামসুল ইসলাম বলেন, চাষী ও ভোক্তা সবাই ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। চাষী হাজার হাজার টাকা খরচ করে ঢেঁড়স চাষ করছে। কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে টাকা পাচ্ছে না। আবার সেই ঢেঁড়স ব্যবসায়ীরা চাষীদের থেকে কিনে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করে কেজিতে কয়েকগুন টাকা লুটে নিচ্ছে। আমরা এই হাটে না আসলে বিষয়টা জানতে পারতাম না। চাষীদের ঢেঁড়স হাত বদলে ব্যবসায়ীরা কয়েকগুন বেশি দামে বিক্রি করছেন।

অপরদিকে, রাজশাহীর সাহেব বাজারের মাস্টারপাড়ার চিত্র অনেকটাই কাছাকাছি। তবে তুলনামূলক পবার খড়খড়ি বাইপাসের চেয়ে কিছুটা হলেও বেশি দামে ঢেঁড়স বিক্রি করতে পারে চাষীরা। মাস্টারপাড়ায় ঢেঁড়স বিক্রেতা মানিক হোসেন জানান, খড়খড়ি বাইপাসের তুলনায় অনেক ভালো এখানে। সবসময় খড়খড়ি বাইপাসের চেয়ে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা বেশি দাম থাকে। তাই অনেকেই এখানে ঢেঁড়স বিক্রি করতে আসেন।

ভ্যানে সবজি ব্যবসায়ী রাজিব আলী জানান, তাদের কেনার থেকে সিমিত লাভে ঢেঁড়স বিক্রি করেন। শুধু ঢেঁড়স নয়, সবজিতে একই অবস্থা। তবে তার দাবি দোকানের ব্যবসায়ীদের চেয়ে তারা কম দামে সবজি বিক্রি করেন। তবে এই বছর ঢেঁড়স দাম অনেক কম।

এবিষয়ে রাজশাহী কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শাহনাজ পারভীন জানান, আমরা পণ্যের দাম নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। যাতে করে চাষী নাজ্যমূল্য পাই। এছাড়া বিভিন্ন সভা সমাবেশের মধ্যেমে আমরা চাষী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে লিংকেজ করে দিচ্ছে। যাতে করে চাষীরা কৃষি পণ্যের দাম ভালো পাই।