বাংলাদেশ আজ সক্ষম উদীয়মান অর্থনীতির দেশ: প্রধানমন্ত্রী

আপডেট: মার্চ ২৫, ২০২৪, ১১:৩৬ অপরাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক:বাংলাদেশ আজ সক্ষম উদীয়মান অর্থনীতির দেশ—উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখান হাসিনা বলেছেন, আমরা সব ক্ষেত্রে এখন এগিয়ে চলেছি। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী সোমবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে রেডিও ও টেলিভিশনে ভাষণ দেন। ভাষণে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বিস্তারিত তুলে ধরেন।
দেশের অভ্যন্তরে এবং দেশের বাইরে বসবাসকারী সব নাগরিককে শুভেচ্ছা ও রমজানের তিনি মোবারকবাদও জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা দিবসের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যাঁর অবিসংবাদিত নেতৃত্ব এবং অপরিসীম আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি মহান স্বাধীনতা। স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতা—সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে। শ্রদ্ধা জানাচ্ছি মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোনকে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা ও সালাম জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে শহীদদের স্মরণ করে বলেন, সেদিন আমার মা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিন ভাই- বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ লে. শেখ জামাল, শেখ রাসেল ১০ বছরের,জামাল ও কামালের নবপরিণীতা বধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, আমার চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, বীর মুক্তিযোদ্ধা কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, বীর মুক্তিযোদ্ধা যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণি ও ব্রিগেডিয়ার জামিল এবং পুলিশের এএসআই সিদ্দিকুর রহমানসহ অনেককে হত্যা করা হয়েছে। আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।১৯৭৫ পরবর্তী গণতান্ত্রিক-আন্দোলন এবং ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের সব শহীদকে তিনি স্মরণ করেন।

তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবার এবং ১৯৭৫-এর পর পঞ্চমবারের মতো সরকার গঠন করেছে। একইসঙ্গে আমার দল আমাকে পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছেন। দেশবাসীর প্রতি আমার কর্তব্য হিসেবে ও আমার পিতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার কাজ আরোও এগিয়ে নেয়ার জন্য আমি বারবার এই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চেষ্টা করেছি সবার সমর্থন এবং সহযোগিতা নিয়ে দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের মাধ্যমে তাদের মুখে হাসি ফোটানোর। আমরা দেশবাসীর প্রত্যাশা অনেকাংশেই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি। এটা কোনও অসার বাগাড়ম্বর দাবি নয়। বাংলাদেশ আজ আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল বিশ্বে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমরা প্রমাণ করেছি রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সীমিত সম্পদ দিয়েও একটি দেশকে এগিয়ে নেওয়া যায়।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সপরিবারে হত্যার পর অস্ত্রের মুখে সামরিক শাসকেরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করে কায়েম করে একনায়কতন্ত্র। স্থবির হয়ে পড়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের জাতির পিতার নেওয়া সব কার্যক্রম। জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের পরিবর্তে ক্ষমতাসীনরা তাদের নিজেদের ভাগ্য বদলাতে বিভোর হয়ে থাকে।

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ একুশ বছরের ইতিহাস এ দেশের মানুষের নিপীড়ন আর বঞ্চনার ইতিহাস। এ সময় লুটপাট, দুর্নীতি, ইতিহাস বিকৃতি, মৌলবাদ এবং জঙ্গিবাদ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের মৌল চেতনাকে ধূলিসাৎ করে বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর এবং পশ্চাৎপদ দেশের তকমা পরিয়ে দেওয়া হয়। নিদারুণ দারিদ্র্য, ক্ষুধা, অকাল মৃত্যু এবং শিক্ষা, বাসস্থান, চিকিৎসার অভাব ছিল এ দেশের মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। সাধারণ মানুষ এসব বঞ্চনাকে ভাগ্যের লিখন হিসেবে মেনে নিতো। তখন মানুষকে বুঝতেই দেওয়া হয়নি যে তাদের প্রতি সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে কিছু আছে।

সরকার প্রধান বলেন, ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে জনবান্ধব নীতি গ্রহণ করা শুরু করে। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে কৃষকদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি এবং ভূমিহীন, দুস্থ মানুষের জন্য বয়স্ক ভাতা, দুস্থ মহিলা ও বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, আশ্রয়হীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প, আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প, কমিউনিটি ক্লিনিক, নিরক্ষরতা দূর করা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার বিস্তার, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুসহ ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করি আমরা। এই সর্বপ্রথম সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেন তাঁদেরও সরকারি সেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের ম্যান্ডেট নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিগত পনের বছরের অধিক সময় ধরে সরকার পরিচালনা করছে। এই পনের বছরের অভিযাত্রা একেবারেই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ, মহামারি, যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং সর্বোপরি দেশি-বিদেশি শক্তির নানা ষড়যন্ত্র আমাদের চলার পথকে বাধাগ্রস্ত করেছে বারবার। ঘূর্ণিঝড় আইলা ও সিডর এবং কয়েক দফা প্রলয়ঙ্করী বন্যা উপকূলীয় এবং নিম্নাঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নেতৃত্বে ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম আর নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাঝে দিয়ে বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে ১মবারের মতো সম্পূর্ণভাবে মুক্তিলাভ করে।কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে আমাদের এই স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে খর্ব করার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র আজও থামেনি। ষড়যন্ত্রকারীরা এখনও ওঁৎ পেতে বসে আছে কীভাবে বাংলাদেশের অগ্রসরমান অভিযাত্রাকে স্তব্ধ করা যায়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও আস্থা রাখায় জনগণকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যে উন্নয়ন-অগ্রগতি আমরা এখন পর্যন্ত সাধন করেছি, তা আরও এগিয়ে নিয়ে বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করাই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশ হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ।সবশেষে সব কূট-কৌশল-ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে আরোও সামনে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
তথ্যসূত্র: বাংলাট্রিবিউন