রাজশাহীতে ১৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড II ৩৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে তপ্ত দিন মঙ্গলবার

আপডেট: এপ্রিল ৩০, ২০২৪, ১১:৩০ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:


রাজশাহীতে তাপমাত্রা ১৯ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। বাড়তে বাড়তে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে ঠেকেছে তাপমাত্রা। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বেলা ৩টায় রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিকে, ৩৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে তপ্ত দিন ছিল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল)। এদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল যশোরে। ১৯৮৯ সালের পর এটিই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে বগুড়ায় ১৯৮৯ সালের দিকে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস-তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক শহিদুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় রাজশাহীর তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বেলা ৩টায় তা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে যায়। এর আগে ২০০৫ সালের ২ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এরও আগে ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীর সর্বোচ্চ-তাপমাত্রা উঠেছিলো ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেই রেকর্ড না ভাঙলেও ১৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ-তাপমাত্রা রেকর্ড আজ হলো।
এবার যে তাপমাত্রা ১৯ বছর আগের ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের রেকর্ড ভেঙে দেবে, তা আগে থেকেই আঁচ করা যাচ্ছিল। সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর গত ২৬ এপ্রিল রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অফিসের হিসাবে, রাজশাহীতে এখন অতি তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। গত ৩০ মার্চ রাজশাহীতে মাত্র এক মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। ৩১ মার্চ থেকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। সেদিন থেকে কোনো বৃষ্টি হয়নি। প্রতিদিন তাপমাত্রা বাড়ছেই। এ অবস্থায় জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। সকাল থেকেই খুব জরুরি কাজ না থাকলে কেউ শহরের পথঘাটে বের হচ্ছেন না।

তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে রাজশাহীসহ আরও পাঁচটি জেলার পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তাতে জেলার সব মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কলেজগুলো বন্ধ রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় আগামী ২ মে পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করায় অভিভাবকেরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২ মে থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর থেকে জানা গেছে, মঙ্গলবার দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে তাপমাত্রা বাড়লেও কমেছে ঢাকায়। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি থেকে কমে হয়েছে ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেন, দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। ১৯৯০ সাল থেকে এ পর্যন্ত এটিই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে ১৯৮৯ সালে বগুড়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রাজশাহীতে ৪৩, ঈশ্বরদীতে ৪৩ দশমিক ২, চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ দশমিক ৭, সাতক্ষীরায় ৪২ দশমিক ২ ও মোংলায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল।

আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১৭ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় পাবনার ঈশ্বরদীতে। সর্বশেষ সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল চুয়াডাঙ্গায়।

তবে একদিন আগে (২৯ এপ্রিল) ঢাকায় চলতি মৌসুমের সবচেয়ে বেশি সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। সোমবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি। ঢাকায় গত বছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তীব্র গরমে প্রায় সারাদেশের জনজীবন বিপর্যস্ত। গত ৩১ মার্চ থেকে টানা তাপপ্রবাহ চলছে। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগের সীমা নেই। প্রচণ্ড গরমে পাওয়া যাচ্ছে হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর খবরও।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যানুয়ায়ী, ১৯৭২ সালে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল রাজশাহীতে ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ১৯৬০ সালের ৩০ এপ্রিল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বছরের (২০২৩ সাল) ১৬ এপ্রিল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যেটি ছিল ৫৮ বছরের মধ্যে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, বুধবার থেকে দিনের তাপমাত্রা কমতে পারে। একই সঙ্গে ধীরে ধীরে ঝড়-বৃষ্টি বেড়ে আগামী সপ্তাহে তাপপ্রবাহের তীব্রতা ও আওতা কমে যেতে পারে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ