শহরের মানুষ গ্রামমুখি হচ্ছে

আপডেট: মে ৭, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখতে হবে


আমরা জেনে এটাই অভ্যস্থ যে, জীবনমান উন্নয়নের আশায় মানুষ গ্রাম থেকে শহরে আসে। স্বাভাবিকভাবেই গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের সংখ্যা সব সময় বাড়তে থাকে। করোনা মহামারির সময় সেই সংখ্যা কিছুটা কমলেও পরে আবার তা বেড়ে যায়। দরিদ্র শ্রেণির মানুষই সাধারণত জীবন-জীবিকার স্বার্থে শহরমুখি হয়। নগর জনপদে যেসব বস্তি দেখা যায়, বস্তির লোকেরা দরিদ্র, দুর্যোগ-দুর্বিপাকে পড়ে শহরে এসেছে। এই তথ্য দিয়ে এক সময় প্রকট দারিদ্রের প্রমাণও হাজির করা হতো। কিন্তু সময় বোধ করি পাল্টাচ্ছে। এখন উল্টোপুরান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, শহর ছেড়ে গ্রামে যাওয়া মানুষের সংখ্যা দুই বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। ২০২১ সালে প্রতি হাজারের মধ্যে ৫ দশমিক ৯ জন শহর থেকে গ্রামে গিয়েছিলেন আর ২০২৩ সালে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৮ জনে।

বিবিএসের পক্ষ থেকে গত মে মাসে প্রকাশিত বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২৩ প্রতিবেদনে অভিবাসন বিষয়ে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি তৈরির জন্য বিবিএস ৩ লাখ ৮ হাজার ৩২টি পরিবারের ওপরে সমীক্ষা চালিয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, এক বছরের ব্যবধানে গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের সংখ্যা কমেছে হাজারে প্রায় সাত জন।

২০২২ সাল থেকে ২০২৩ সালে গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের সংখ্যা কেন কমে গিয়েছে এবং শহর থেকে গ্রামে ফেরার সংখ্যা কেন বেড়েছে তার পেছনে রয়েছে নানান যৌক্তিক কারণ। এ ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষঅ করা যায়। শহর থেকে গ্রামে ফের দের মধ্যে কয়েকজন অনলাইন সংবাদ মাধ্যমকে বলছেন, শহরে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ঢাকায় পরিবার নিয়ে থাকা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাচ্চাদের পড়াশোনার খরচ বেড়েছে, প্রতিবছর বাসা ভাড়া বাড়ছে। আয়ের সঙ্গে মাসিক খরচের সামঞ্জস্য কোনোভাবেই রাখা যাচ্ছে না। মূলত এসব কারণে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে।

অন্যদিকে গ্রাম থেকে শহরে আসার সংখ্যা কমার কারণ হিসেবে জানা যায়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে শহরের চেয়ে গ্রামে মোটামুটি স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করা যায়। তাছাড়া শিক্ষিত বেকার যুবকরা শহরে চাকরির পেছনে না দৌঁড়ে উদ্যোক্তা হচ্ছেন। তারাই আবার গ্রামের মানুষকে বিভিন্ন ধরনের কাজের সুযোগ করে দিচ্ছেন। এছাড়া ধীরে ধীরে গ্রাম পরিণত হচ্ছে নগরে। শহরের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা এখন গ্রামে পৌঁছেছে। গ্রাম থেকেই স্বাচ্ছন্দ্যে শহরের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা যায়। তাছাড়া শহরের জীবনমান এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে কঠিন হয়ে গেছে। মূলত এসব কারণে গ্রাম থেকে শহরে আসা মানুষের সংখ্যাটা কমেছে।

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গ্রামীণ অর্থনীতি অনেক পাল্টে গেছে। গ্রাম পর্যায়ে ছোট ছোট ইউনিটের ব্যবসা বিকশিত ও সম্প্রসারিত হয়েছে। বিশেষত গ্রামে পূর্বের যে কোনো সময়ের চাইতে বিনিয়োগ বেড়েছে। এছাড়াও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির সাথে সাথে বিদ্যুতায়নের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। নগরের অনেক সুবিধাই এখন গ্রামে পৌঁছে গেছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি সর্ব ক্ষেত্রেই উন্নতির প্রসার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফলে ভিটে ছেড়ে মানুষ খুব বাধ্য না হলে গ্রাম ছেড়ে আর শহরমুখি হচ্ছে না। বরং গ্রামের সেবা-সুবিধা এবং কর্মক্ষেত্র সৃষ্টির ফলে মানুষ গ্রামমুখিও হচ্ছে। এটা ইতিবাচক দিক।

গ্রামের অর্থনীতি যতবেশি বিকশিত হবে, সম্প্রসারিত হবেÑ গ্রাম ও শহরের বৈষম্য ততই কমে আসবে। সে ক্ষেত্রে মানুষ গ্রামকেই তার নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নিবে, শহনমুথি হবে নাÑতা বলাই বাহুল্য।