সমাজে আলো ছড়াচ্ছেন রাণীনগরের মর্জিনা বেগম

আপডেট: এপ্রিল ১৯, ২০২৪, ৪:৩৯ অপরাহ্ণ


আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি:


নওগাঁর রাণীনগরের কাশিমপুর ইউনিয়নের বড়ইপাড়া গ্রামের মো. আলাউদ্দীন সরদার ও শহিদা বেগমের নিম্নবিত্ত পরিবারে ১৯৭৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন মর্জিনা বেগম। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে মর্জিনা চতুর্থ। কৈশোর থেকেই মর্জিনা ছিলেন পরোপকারী ও নেতৃত্বদানে পটু।

কৈশোরের সংজ্ঞা বুঝে ওঠার আগেই জীবন সংগ্রামে নাম লেখাতে হয় মর্জিনাকে। অনেক প্রতিকূলতা, বাঁধা-বিপত্তির মাঝেও নিজ প্রচেষ্টা ও কর্মদক্ষতায় মর্জিনা বর্তমানে উপজেলাবাসীর কাছে নিজেকে পরিচিত মুখ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। হাত বাড়িয়েছেন সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের উন্নয়নের জন্য।

সমাজের নির্যাতিত ও পিছিয়েপড়া নারীদের নেতৃত্ব বিকাশে মর্জিনা এখন সবার কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
মর্জিনা বেগম ২০১৯ সালে অপরাজিতা প্রকল্পের সাথে যুক্ত হন। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তার জ্ঞান-দক্ষতার পরিসর বৃদ্ধি করেছেন। জনগণের মাঝে সম্পৃক্ততা বাড়াতে সেবামূলক কাজের সাথে লেগেই থেকেছেন সব সময়।

নারীর রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, লিগ্যাল এইড প্রাপ্তি, উঠান বৈঠক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে তিনি মানুষের পাশেই থাকছেন। যিনি শত প্রতিকূলতার মধ্যেও কখনও থেমে থাকেননি। কূপমণ্ডকতার অন্ধকার থেকে মুক্ত করে সমাজকে এগিয়ে নেয়ার কাজে নানাভাবে অবদান রেখে চলেছেন এই আত্মপ্রত্যয়ী ও আত্মবিশ্বাসী নারী।

২০২১ সালে ২নং কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত আসন থেকে তিনি তৃতীয়বারের মতো সদস্য নির্বাচিত হন। কাশিমপুর ইউনিয়ন যে অন্য উপজেলা থেকে আলাদা তা সহজেই চোখে পড়ে। যেখানে ৯৯% ইউনিয়নে নারী সদস্যদের অভিযোগ তারা পুরুষের তুলনায় সবকিছু কম পায়, সেখানে কাশিমপুর ইউনিয়নে নারী সদস্যদের পুরুষের তুলনায় একটু হলেও বেশি দেয়া হয়।

এমন অনুকরণীয় দৃষ্টান্তকে কাজে লাগাতে চান মর্জিনা বেগম। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছেন একজন মানুষ হিসেবে। জীবনের উভয় ক্ষেত্রেই তিনি সফল হয়েছেন। অপরাজিতা প্রকল্পের সাথে যুক্ত হওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে তার পদচারণা দৃশ্যমান। বর্তমানে মর্জিনা বেগম উপজেলা যুব মহিলালীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডেও তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। সমাজের সব স্তরের মানুষের জন্য সর্বদা কাজ করে চলেছেন বিশেষ করে অসহায়, দুস্থ ও পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি উপজেলার কুজাইল গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকের সহসভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া কুজাইল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

সমাজ সেবামূলক কাজের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন সর্বদা। তার যোগ্যতা ও দক্ষতার জন্য তিনি উপজেলা অপরাজিতা নেটওয়ার্কের কোষাধ্যক্ষ এবং উপজেলা নারী উন্নয়ন ফোরামের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। আত্মবিশ্বাস ও জ্ঞান দক্ষতা আরো বেড়ে যাওয়ায় এবং অপরজিতা প্রকল্পের উৎসাহে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার জন্য প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। বিভিন্ন ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যায়ে উঠান বৈঠক করছেন। রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে অ্যাডভোকেসি করে চলেছেন।

দুই সন্তানের জননী মর্জিনা বেগম জানান, বিয়ের পর তার পথচলার সারথী হিসেবে কাজ করছেন তার স্বামী শেখ আমজাদ হোসেন। এছাড়া পরিবারের সকল সদস্যসহ পড়শীদের সার্বিক সহযোগিতায় তিনি তার নারী বান্ধব স্বপ্নের সমাজ গড়ার কাজ করে আসছেন। তিনি স্বপ্ন দেখেন একটি সমতার সমাজ ও নারী বান্ধব উপজেলা পরিষদ গঠনের যেখানে নারীরা সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা পাবেন।

অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সর্বোপরি রাজনৈতিক অধিকারহীনতার কারণে নারীর অবস্থান এখনো নাজুক। ফলে তারা সমাজ ও রাষ্ট্রে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠছে ও বেঁচে থাকছে। সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য একটি আলাদা তহবিল গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন মর্জিনা বেগম যেখান থেকে যে কোন অসহায়, দু:স্থ, গরীব ও হতদরিদ্র নারীরা হাত বাড়ালেই আর্থিক সহযোগিতা পাবেন।

 

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ